গত সাত বছরের মধ্যে এ বছরে দীপাবলি উৎসবে রাজধানীর বায়ুদূষণ সর্বোচ্চ— এমনটাই মনে করছেন আবহবিদ ও দূষণ-নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
“গত সপ্তাহের আবহমণ্ডলের নিরিখে এই দীপাবলিতে বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে গিয়েছে। দিল্লি ও তার আশপাশের অঞ্চলে জ্বালানো লাগামছাড়া আতসবাজির প্রভাবে ও বাতাসের নিম্নগতির দরুণ এই দূষণ মাত্রাধিক হয়েছে,” বলেছেন এম পি জর্জ, দিল্লী দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের বায়ুদূষণ ল্যাবের প্রধান। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড-এর পক্ষ থেকে ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ময়ূরবিহার সমেত দিল্লির ছ’টি অঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা ১৮০ থেকে ৪৪০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নিয়মানুযায়ী এই দূষণ স্বাভাবিকের থেকে ৭-১৭ গুণ বেশি। বাতাসে দূষণ সৃষ্টিকারী গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত বছর দীপাবলিতে নাইট্রজেন ডাই-অক্সাইডের সংযুক্তিকরণ ছিল ৩৭ থেকে ৭৯ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার। এ বছর তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-১২৩ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার। সালফার ডাই অক্সাইড-এর পরিমাণ গত বছর ছিল ২৬-৬৪ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার, এ বছর ২০-১৩১ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার। কার্বন মনোক্সাইড-এর পরিমাপ ১১০০-৪০০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার থেকে বেড়ে এই বছর ২০০০-৪২০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার হয়েছে।
শুধু বায়ুদূষণই নয়, শব্দদূষণের মাত্রাও স্বাভবিকের থেকে অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন দিনে এইমস হাসপাতালে তিন জন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য ভর্তি হয়েছেন। এইমস-এর বিশেষজ্ঞ পালমনোলজিস্ট-এর বক্তব্য অনুযায়ী, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বা হাঁপানির সমস্যা থাকলে দীপাবলির সময় দিল্লি থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই বছরের দীপাবলির রাতের আলোর উৎসব শব্দবাজি ও তার থেকে নির্গত দূষণের কারণে আতঙ্কের রাতে পরিণত হয়েছে।
আতসবাজি থেকে নির্গত এই মাত্রাধিক দূষণের পরিমাণ দেখে সন্দেহ করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর চিনা বাজি বর্জনের ডাকে আদৌ কোনও সাড়া পড়েছে কি না? পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আকাশে ফানুস জ্বালিয়ে আলোর উৎসবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই প্রচেষ্টায় কিছুটা সাড়াও দিয়েছেন। তার প্রমাণ কলকাতার ঝলমলে আকাশে ওড়া প্রায় কয়েক হাজার ফানুস। দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল ও তাঁর সরকারের দফতর থেকে এই ধরনের প্রচারমূলক কোনও ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে আতসবাজি সম্পর্কিত ও দূষণনিয়ন্ত্রণ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার করা হলেও দিল্লির রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও রকম প্রচার বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়ার দরুণ রাজধানীর আনাচে কানাচে দেদার বিক্রি হয়েছে দূষণ উৎপাদক নিষিদ্ধ আতসবাজি। এই নিষিদ্ধ আতসবাজির দরুণ রাজধানীর বায়ুমণ্ডল শুধু বয়স্ক, শিশু বা অসুস্থ মানুষদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও বিপদ সঙ্কেত। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই উষ্ণতার পারদ বেশ খানিকটা কমে গিয়ে দিল্লিবাসীকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল। তবে দীপাবলি উৎসবের এই দূষণ আগামী দিনে দিল্লিবাসীর জন্য চরম সঙ্কটের কারণ হতে পারে। শুধু সরকারি উদ্যোগই নয়, জনসচেতনতার অভাব আলোর উৎসবে রাজধানীর চিত্র গোটা বিশ্বের কাছে লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: জুয়া, শব্দবাজিতে নাজেহাল হাফলং
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy