Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্রমাণের অভাব, ‘অসহায়’ বিচারক বেকসুর খালাস করলেন ২২ অভিযুক্তকেই!

গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী জমানার সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় সব অভিযুক্তই বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন। 

সিবিআই আদালত থেকে বেরোচ্ছেন সোহরাবুদ্দিনের ভাই রুবাবুদ্দিন।

সিবিআই আদালত থেকে বেরোচ্ছেন সোহরাবুদ্দিনের ভাই রুবাবুদ্দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

সোহরাবুদ্দিন শেখ বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছেন। সোহরাবুদ্দিন শেখকে কেউ গুলি করেনি।

গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী জমানার সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় সব অভিযুক্তই বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন।

১৩ বছর আগে রাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহই পুলিশকে মিথ্যে ‘এনকাউন্টারে’ সোহরাবুদ্দিনকে খুনের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। গুজরাত পুলিশের দাবি ছিল, মোদীকে খুনের ছক কষছিলেন ‘লস্কর-জঙ্গি’ সোহরাবুদ্দিন।

অমিত-সহ ১৬ অভিযুক্তকে ২০১৪-র ডিসেম্বরেই ‘বেকসুর’ বলে রেহাই দিয়েছিল মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। আজ বাকি ২২ জনকেও বেকসুর খালাস করে দিয়ে ওই আদালতের বিচারক এস জে শর্মার মন্তব্য, তিনি ‘অসহায়’। কারণ অভিযুক্তদের ‘দোষী সাব্যস্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ’ নেই। বিচারক শর্মা বলেন, ‘‘সোহরাবুদ্দিন বুলেট-বিদ্ধ হয়েই মারা গিয়েছেন, ময়না-তদন্তে তা প্রমাণিত। কিন্তু অভিযুক্তদের মধ্যেই কেউ যে তাঁকে গুলি করেছিলেন, এর কোনও প্রমাণ নেই। পারিপার্শ্বিক প্রমাণ থাকলেও যথেষ্ট প্রমাণ নেই।’’

আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পাওয়া অন্যতম অভিযুক্ত রাজেন্দ্র জীরাওয়ালা।

২০০৫-এর নভেম্বরে সোহরাবুদ্দিন খুন হওয়ার পরেই তাঁর স্ত্রী কওসর বাঈ ও বন্ধু তুলসীরাম প্রজাপতি খুন হন। সেই দু’টি খুনের পিছনেও পুলিশের সাজানো সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠে। আজ নিহতদের পরিবারের কাছে কার্যত ‘ক্ষমা’ চেয়ে নিয়ে বিচারক শর্মা বলেন, ‘‘আমার চাকরি জীবনের এটাই শেষ রায়। আমি তাই নিহতদের পরিবারের কাছে সত্যিই দুঃখপ্রকাশ করছি। কিন্তু যে সাক্ষী ও প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, খুন ও ষড়যন্ত্র প্রমাণের পক্ষে তা যথেষ্ট নয়।’’

আরও পড়ুন: ২১০ জনকে সাক্ষীর মধ্যে ৯২ জনই বয়ান বদলে ফেলেছিল

এই সোহরাবুদ্দিন মামলারই রায় দেওয়ার ঠিক আগে, ২০১৪-র ডিসেম্বরে বিচারক ব্রিজভূষণ লোয়ার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। লোয়ার মৃত্যুরও তদন্তের দাবি উঠেছিল। মৃত্যুর আগে লোয়াকে অমিত শাহের তরফে ১০০ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। লোয়ার মৃত্যুর পরেই মামলার দায়িত্বে এসে বিচারক এম বি গোসাভি অমিত শাহ, রাজস্থানের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচাঁদ কাটারিয়া, গুজরাত পুলিশের সন্ত্রাস দমন বাহিনীর তদানীন্তন ডিআইজি ডি জি বানজারা-সহ ১৬ জনকে রেহাই দেন। বিচারক শর্মা তাঁরই উত্তরসূরি।

গত ৮ বছর ধরে এই মামলার তদন্ত করা সিবিআই-ও আজ প্রশ্নের মুখে। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সিবিআইকে দিয়ে এমন ভাবে মামলা সাজানো হয়েছে, যাতে অভিযুক্তেরা ছাড়া পেয়ে যান। অমিত শাহরা ছাড়া পাওয়ার পরে সিবিআই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেনি। যুক্তি দিয়েছিল, ‘নতুন প্রমাণ নেই।’ আজ খালাস পাওয়া ২২ জনের মধ্যে ২১ জনই গুজরাত ও রাজস্থান পুলিশের নিচুতলার কর্মী। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়া হবে কি না, জানতে চাওয়া হলে সিবিআই মুখপাত্রের দাবি, রায় হাতে আসেনি।

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE