Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কেরলে খাতা খুলতে বিজেপির ভরসা ‘বেঙ্গল’

শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের ভগবান বিষ্ণু অনন্ত শয্যায়। মন্দিরের ভিতরে সিন্দুকে বন্দি দেড় লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তি। আর বাইরে গেরুয়া ঝান্ডা, পদ্মফুলের প্রচার। স্থানীয় বিজেপি নেতা মালয়ালিতে গলা ফাটাচ্ছেন। একটাই চেনা শব্দ বারবার কানে ধাক্কা দিচ্ছে।

স্বাগতম। কেরলের কাসা়রাগড়ে দলীয় প্রার্থীর প্রচারসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার। — পিটিআই

স্বাগতম। কেরলের কাসা়রাগড়ে দলীয় প্রার্থীর প্রচারসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার। — পিটিআই

প্রেমাংশু চৌধুরী
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৪:১৪
Share: Save:

শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের ভগবান বিষ্ণু অনন্ত শয্যায়। মন্দিরের ভিতরে সিন্দুকে বন্দি দেড় লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তি। আর বাইরে গেরুয়া ঝান্ডা, পদ্মফুলের প্রচার। স্থানীয় বিজেপি নেতা মালয়ালিতে গলা ফাটাচ্ছেন। একটাই চেনা শব্দ বারবার কানে ধাক্কা দিচ্ছে। বেঙ্গল…

বেঙ্গল…বেঙ্গল।

‘ভগবানের আপন দেশ’-এ অমিত শাহ প্রচারে এলেন। তাঁর মুখেও ‘বেঙ্গল’। বলে গেলেন, ‘‘কংগ্রেস ও সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে জোট বেঁধেছে। কেরলে লড়াই করছে। কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলে এটা সম্ভব? ওদের শুধু একটাই মতাদর্শ, ক্ষমতার লোভ।’’

এ দিনই কাসারগোড়ের সভায় খোদ নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘কং‌গ্রেস আর কমিউনিস্ট পার্টি বাংলায় দোস্তি করে কেরলে কুস্তি করছে। বাংলায় কমিউনিস্টদের হাত ধরার পরে কেরলে এসে কংগ্রেস নেতারা বলেন কমিউনিস্ট পার্টি সমাজবিরোধী, হিংসায় বিশ্বাসী।’’

প্রবীণ বিজেপি নেতা ও রাজাগোপাল কটাক্ষ করছেন, সিপিএম ও কংগ্রেস হল ‘ওরে থুলাবা পক্ষিকাল’। একই পালকের পাখি। আনন্দবাজারের সাংবাদিক শুনে প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী আরও সরেস। রসিয়ে রসিয়ে বলেন, ‘‘আপনাদের বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএম প্রকাশ্যে আঁতাঁত করছে। সীতারাম ইয়েচুরি এখন সনিয়া গাঁধীর মুখ্য উপদেষ্টা। সংসদেও তাই দু’দলের গলায় গলায় ভাব। আর এখানে বিজেপিকে ঠেকাতে গোপনে ঘোঁট পাকাচ্ছে।’’

এখানেই ‘বেঙ্গল’-প্রসঙ্গ শেষ নয়। কেরল জুড়ে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা খেটে খাওয়া মানুষ। কেরলের শ্রমিকরা সবাই সৌদি আরবে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে কাজ করতে যান। ফাঁক ভরাট করছেন পূর্ব ভারত থেকে আসা শ্রমিকরা। বিহারি, অসমিয়া, ওড়িয়াদের থেকেও বাংলাভাষীর সংখ্যা বেশি। বিজেপির প্রচারেও বার বার সে দিকেই আঙুল। রাজাগোপাল বলছেন, ‘‘বাংলায় তো আর কার‌খানা নেই। তাই রোজগারও নেই। ৩৪ বছরে বামেরা এমন দশা করেছে যে রাজ্যের মানুষকে পেট চালাতে ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে।’’

‘ভারত মাতা কি জয়’ বা ‘বন্দেমাতরম’ নয়। গোমাংসে নিষেধাজ্ঞা নয়। ‘ঘর ওয়াপসি’ নয়। মুসলমান ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাজ্যে ও সব মুখে আনাই মানা। বিজেপির কেরল-মন্ত্র একটাই—বেঙ্গল। এক কথায়, খাতা খুলতে কেরলে ভরসা থাকুক ‘বেঙ্গল’-এ।

পাঁচ বছর বাম, পাঁচ বছর কংগ্রেসের রাজত্ব—কেরলে বরাবরের এটাই নিয়ম। বিজেপি যেন এখানে অনন্ত শয্যায়। কোনও দিন বিধানসভায় প্রবেশের অধিকারই পায়নি। পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া বিজেপির প্রচারের এ বার প্রধান হাতিয়ার সিপিএম-কংগ্রেসের বাংলায় দোস্তি, কেরলে কুস্তি। বিজেপি বলছে, সিপিএম-কংগ্রেসে আর ফারাক নেই। তাই উমেন চান্ডির কংগ্রেস সরকারকে সরিয়ে বামেদের এনেও লাভ হবে না। বিজেপিই বিকল্প রাস্তা দেখাতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রস্তাবে কেরলের নেতারা এই ভয়টাই পেয়েছিলেন। সেটাই সত্যি হয়েছে।

বিজেপি আরও বলছে, কেরলেও কুস্তির আড়ালে দোস্তিই চলছে। যেখানেই বিজেপির জেতার আশা, সেখানেই এক দল দুর্বল প্রার্থী দিয়ে অন্য দলের ঝুলিতে ভোট পাচারের ছক কষেছে।

কী রকম? রাজাগোপালের নেমম কেন্দ্রই যেমন। লোকসভায় শশী তারুর জিতলেও এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ১৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। গত নভেম্বরে পুরসভা ভোটেও বিজেপি এগিয়ে। জনসঙ্ঘে যোগ দিয়ে ১৯৬৫ থেকে ভোটে লড়ছেন ৮৬ বছরের রাজাগোপাল। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও মনে করেন, রাজাগোপালের এ বার ভোটে জেতা উচিত। অঙ্কের হিসেবে নেমমে পদ্মফুল ফোটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু রাজাগোপালের অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস নিজে প্রার্থী না দিয়ে জেডিইউ-কে টিকিট দিয়েছে। লক্ষ্য হল, কংগ্রেসের ভোট বামেদের ঝুলিতে নিয়ে গিয়ে ফেলা।

পাল্টা চালে কেরলে বামেদের ভোটে ভাগ বসাতে এঢ়াভা সম্প্রদায়ের সংগঠনের নতুন রাজনৈতিক দল ভারত ধর্মজন সেনা-র সঙ্গে জোট বেঁধেছে বিজেপি। এত দিন অনগ্রসর এঢ়াভাদের সিংহভাগ ভোট বামেরাই পেয়ে এসেছে। সিপিএমের ভি এস অচ্যুতানন্দন এই সম্প্রদায়েরই নেতা। এ বার হিন্দু নায়ার ও এঢ়াভা ভোটের মেরুকরণকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।

মুখে অবশ্য বাংলা মন্ত্রেই ভরসার কথা মানতে রাজি নন বিজেপির নেতারা। রাজাগোপালের দাবি, ‘‘কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উন্নয়ন দেখে মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে। বিশেষ করে তরুণরা। কেরলে এ বার মোদী-ম্যাজিকেই পদ্ম ফুটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kerala assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE