ফাইল চিত্র।
দিল্লির বাসিন্দা রোশনী বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল বালিগঞ্জ থানায়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লকডাউনের সময়েও নিয়ম ভেঙে রাজাবাজার এলাকায় জমায়েতের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একটি বিশেষ সম্প্রদায় সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছে কলকাতা পুলিশ।
দিল্লির বাসিন্দাকে ফেসবুক পোস্টের জন্য কলকাতায় সমন করে সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়ল কলকাতা পুলিশ। বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ কড়া বার্তা দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনার জন্য কোনও নাগরিককে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ডেকে পাঠানো হবে, এমনটা চলতে পারে না।’’
বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘সীমারেখা অতিক্রম করবেন না। ভারতকে মুক্ত রাষ্ট্র রাখতে দিন। সুপ্রিম কোর্ট বাক্স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই রয়েছে। রাষ্ট্র যাতে সাধারণ নাগরিকদের হেনস্থা করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই সংবিধান মেনে সুপ্রিম কোর্টের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’’ সংবিধানের ১৯ (১) (এ) অনুচ্ছেদে যে বাক্স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘অতিমারির মোকাবিলা ঠিকমতো হচ্ছে না বলে কারও বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চালানো যায় না।’’
আরও পড়ুন: দিল্লিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু! আশঙ্কা ওড়ালেন না রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কলকাতা পুলিশের সমন পেয়ে ২৯ বছরের রোশনী প্রথমে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। দিল্লি হাইকোর্ট তাঁকে কলকাতা হাইকোর্টে যেতে বলে। জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্ট বলেছিল, রোশনীকে গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রোশনী জানিয়েছিলেন, লকডাউন উঠলে সেপ্টেম্বরে তিনি কলকাতায় যেতে পারেন। কলকাতা পুলিশ সেপ্টেম্বরের পরে তাঁকে বালিগঞ্জ থানায় যেতে বলে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টও রোশনীকে থানায় হাজিরার নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন রোশনী।
আরও পড়ুন: জঙ্গি-অর্থের উৎস সন্ধানে ফের অভিযানে এনআইএ, দিল্লিতে হানা
সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে জানিয়েছে, প্রয়োজনে ইমেলে বা ভিডিয়োর মাধ্যমে পুলিশ রোশনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। চাইলে পুলিশ দিল্লিতেও রোশনীর সঙ্গে দেখা করতে পারে। তবে ২৪ ঘণ্টা আগে তা জানাতে হবে। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, ‘‘ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১এ ধারায় পুলিশের সমন জারি করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা ভয় দেখাতে, হুমকি দিতে বা হেনস্থা করতে কাজে লাগানো যায় না।’’
রোশনীর হয়ে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী মহেশ জেঠমলানি দাবি করেন, রোশনীর বিরুদ্ধে তদন্তের ভিত্তি নেই। ওই ফেসবুক পোস্টের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক নেই বলে রোশনী জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারের হয়ে আর বসন্ত যুক্তি দেন, রোশনীকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদই করা হবে। গ্রেফতার নয়। তিনি নিজেই কলকাতা যেতে রাজি হয়েছিলেন।
এ কথা শুনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেছেন, ‘‘আসলে বলা হচ্ছে যে, কী করে এক জন নাগরিকের সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস হয়। দিল্লি থেকে কলকাতায় ডেকে পাঠানোটা চূড়ান্ত হেনস্থা। কাল মুম্বই, মণিপুর, চেন্নাইয়ের পুলিশও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে ডেকে পাঠাবে। বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হবে, বাক্স্বাধীনতা চাইছ, তা হলে আমরা তোমাদের শিক্ষা দেব।’’ চার সপ্তাহ পরে মামলার পরবর্তী শুনানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy