Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Lal Krishna Advani

বাবরি-মামলা চক্রান্ত, আদালতে আডবাণী

৫ অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের শিলান্যাস ঘিরে যখন সাজ-সাজ রব, তখন এ দিন অনেকের নজর ছিল প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রীর শুনানির দিকে।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় লখনউয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। ছবি: সংগৃহীত।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় লখনউয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৪:৪১
Share: Save:

সাড়ে চার ঘণ্টায় একশো প্রশ্ন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় লখনউয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। নিজের বয়ানে দাবি করলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা বাবরি মসজিদ ধ্বংসে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্ত।

আশির দশকে রাম-রথে সওয়ার হয়ে দেশ জুড়ে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের ঢেউ তোলা আডবাণী শুক্রবার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ভিডিয়ো-কনফারেন্সিং মারফত। শুনানি চলেছে সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত। বিরানব্বই পেরোনো নেতার তরফে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবীরা।

৫ অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের শিলান্যাস ঘিরে যখন সাজ-সাজ রব, তখন এ দিন অনেকের নজর ছিল প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রীর শুনানির দিকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ৩২ অভিযুক্তের শুনানি শেষ করতে হবে ৩১ অগস্টের মধ্যে। সেই অনুযায়ী, যত দ্রুত সম্ভব মামলা গুটিয়ে আনতে চাইছে সিবিআই। মসজিদ ধ্বংসের অন্য অভিযুক্তদের মধ্যে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী এবং উত্তরপ্রদেশে ওই দলেরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ এ মাসেই আদালতে সশরীরে হাজিরা দিয়েছেন। ৮৬ বছরের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলীমনোহর জোশী অবশ্য বৃহস্পতিবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ভিডিয়ো-কনফারেন্সিং মারফতই।

আরও পড়ুন: রাজ্যপাল বনাম গহলৌত, দ্বন্দ্বে ঝুলে রাজস্থান

সিংহের অভিযোগ, তাঁর নামে তৎকালীন কংগ্রেস শাসিত কেন্দ্রীর সরকারের দায়ের করা অভিযোগ মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। সূত্রের খবর, নিজের নামে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আডবাণী ও জোশীও। দু’জনেই বলেছেন, অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ে ঘটনাস্থলের অদূরে তাঁর উপস্থিতি এবং পরের দিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তাকেও ওই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দাবি করেছেন জোশী।

এ দিন নজর ছিল আডবাণীর সাক্ষ্যে। তাঁর নেতৃত্বে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের হাত ধরেই বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। দুই সাংসদের তলানি থেকে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা। দল হিসেবে বিজেপি এবং তার বহু নেতাও অনেকাংশে তাঁর হাতে গড়া। অযোধ্যায় শিলান্যাসের পরে তাই এ হেন আডবাণী কিংবা জোশীকে যদি শাস্তির মুখে পড়তে হয়, তবে তা প্রবল অস্বস্তিতে ফেলবে বিজেপিকে। হাজারো প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে মোদী সরকারকেও।

আরও পড়ুন: কোভিড সারাতে বিজেপি নেতাদের ওষুধ পাঁপড় থেকে রামমন্দির!

অনেকে মনে করছেন, সেই কারণেই কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে সাক্ষ্যের দু’দিন আগে বেশ কয়েক জন বাঘা সরকারি আইনজীবীকে সঙ্গী করে আডবাণীর বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যাঁকে আডবাণীর উত্তরসূরি হিসেবে দেখতেন অনেকে। গুজরাতে ওই প্রবীণ নেতার দীর্ঘ দিনের লোকসভা আসন গাঁধীনগরে জিতেই প্রথম বার সংসদে এসেছেন শাহ। দায়িত্ব নিয়েছেন এক সময়ে আডবাণীর সামলানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই।

অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রথম এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেও, আডবাণী-জোশীদের রাম জন্মভূমি আন্দোলন ছাড়া তাঁর মসনদ দখল সম্ভব ছিল না বলে ধারণা অনেকের। অনেকের আবার বক্তব্য, আডবাণীর হাত পিঠে না-থাকলে, ২০০২ সালে গুজরাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছাড়তে হতো নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু তার পরেও মোদী-শাহ জুটি এই নেতাদের মার্গদর্শকমণ্ডলীর গণ্ডিতে আটকে রেখেছেন।

এই অবস্থায় এক দিকে মোদী রামমন্দিরের শিলান্যাস করছেন, আর অন্য দিকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন আডবাণী— এই দৃশ্য বিজেপির পক্ষে অস্বস্তির হবে। ওই দলের নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন, শিলান্যাসে আডবাণীকে নিয়ে যাওয়ার আগেই এই ‘বোকা মামলা’ বন্ধ করা হোক। অনেকের অবশ্য ধারণা, করসেবকদের ওই বিপুল ভিড়ে ঠিক কে মসজিদ ভেঙেছে, তা শনাক্ত করা শক্ত। আডবাণী, জোশীদের প্ররোচনাতেই যে সে দিন মসজিদ ভাঙা হয়েছিল, আরও কঠিন সেটা প্রমাণ করা।

উল্লেখ্য, রামমন্দির আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন আডবাণী, জোশী। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তাঁরা। সে দিনের ঘটনার জন্য তাঁদের নামে দায়ের করা হয়েছিল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে হানাহানিতে উস্কানি এবং ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। সেই সূত্রেই শুনানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE