Advertisement
E-Paper

রাম, ভারতমাতা ও নর্মদা! হিন্দুত্ব অস্ত্র রাজাসাহেবের

মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারের চাষিদের ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি পূরণ নয়। রাহুল গাঁধীর গরিবদের জন্য ‘ন্যায়’ প্রকল্প নয়।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৮
প্রচার: মঞ্চে রাঘোগড়ের ‘রাজাসাহেব’ দিগ্বিজয় সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রচার: মঞ্চে রাঘোগড়ের ‘রাজাসাহেব’ দিগ্বিজয় সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

ভগবান শ্রী রামচন্দ্র কি...জয়! ভারত মাতা কি...জয়! নর্মদা মাইয়া কি...জয়!

দিগ্বিজয় সিংহের জনসভা ‘কভার’ করতে এসে বিজেপির জনসভায় চলে এলাম না কি?

না, কংগ্রেসেরই ঝান্ডা উড়ছে। কিছুক্ষণ পরেই মঞ্চে উঠবেন রাঘোগড়ের ‘রাজাসাহেব’ দিগ্বিজয় সিংহ। স্লোগান উঠবে, ‘সর্বত্র দিগ্বিজয়, সর্বদা দিগ্বিজয়’। তার আগে দেশভক্তির গান। আর গানের ফাঁকে ফাঁকে রামচন্দ্র, ভারত মাতা, নর্মদা মাইয়ার জয়ধ্বনি।

মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারের চাষিদের ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি পূরণ নয়। রাহুল গাঁধীর গরিবদের জন্য ‘ন্যায়’ প্রকল্প নয়। মধ্যপ্রদেশের রাজধানীতে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহের প্রধান হাতিয়ার, বিজেপির ‘কপিরাইট’ নিয়ে রাখা দেশভক্তির সঙ্গে হিন্দুত্বের ‘ককটেল’।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি ‘কট্টর হিন্দুত্বর মুখ’ সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করেছে বলে? না কি সাধ্বী প্রজ্ঞা তাঁকে ‘গেরুয়া সন্ত্রাসবাদ’ নামক শব্দবন্ধের আবিষ্কারক হিসেবে হিন্দু-বিরোধী তকমা দিতে চাইছেন বলে?

ভোপালের মোতি মসজিদের গলি বা নিউমার্কেটের কফি হাউসের আড্ডা বলছে, সাধ্বী প্রজ্ঞার থেকেও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিগ্বিজয় সিংহের ‘ট্র্যাকরেকর্ড’-ই তাঁর জয়ের পথে বড় বাধা। তাই তাঁকে হিন্দুত্ব-দেশভক্তির কৌশল নিতে হয়েছে।

মোতি মসজিদের গলিতে বসে হানিফ মহম্মদ বলেন, ‘‘১৯৯৩ থেকে ২০০৩, রাজাসাহেব মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। লোকে ওঁর কাজে বিরক্ত ছিল বলেই কংগ্রেসের ফের ক্ষমতায় ফিরতে ১৫ বছর লেগে গেল।’’ কফিহাউসে নিয়মিত আড্ডা মারতে আসা প্রবীণরা মনে করালেন, রাজাসাহেবের আমলে রাজধানীই অন্ধকারে ডুবে থাকত। ভোপালের উন্নতি সবটাই শিবরাজ সিংহ চৌহানের আমলে।

শুনে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা, প্রাক্তন সাংসদ রামেশ্বর নিখরা বলেন, ‘‘ভোপালে জয় নিয়ে চিন্তা থাকলে রাজাসাহেব রাজগড় কেন্দ্র থেকে লড়তে পারতেন। ওই কেন্দ্রের মধ্যেই তো রাঘোগড়। দিগ্বিজয় সিংহদের রাজ পরিবারের পুরনো রাজত্ব। যেখান থেকে ওঁর ছেলে জয়বর্ধন বিধানসভা ভোটে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন। ওখানে দাঁড়ালে তো দিগ্বিজয় সিংহ বাড়িতে বসে বসে জিতে যেতেন।’’

নিশ্চিত জয় ছেড়ে তা হলে ৩০ বছর ধরে বিজেপির দখলে থাকা ভোপাল কেন?

দিগ্বিজয় আসলে চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন। ছক ভাঙতে ভয় পান না। বাহাত্তর বছর বয়সেও টানটান চেহারা, গলায় চল্লিশের তেজ। প্রথম স্ত্রী-র মৃত্যুর পরে, আটষট্টি বছর বয়সে দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়েছিলেন ৪৩ বছর বয়সী সাংবাদিক অমৃতা রাইয়ের। বিয়েও করেছেন। ছেলে-মেয়েরা কী ভাববে, রাজনীতিতে এর কী মূল্য দিতে হবে ভেবে পিছিয়ে যাননি। সুতির শাড়ি, মাথায় ঘোমটা দিয়ে স্ত্রী অমৃতাই এখন ভোটপ্রচারে দিগ্বিজয়ের ‘ছায়াসঙ্গিনী’।

দিগ্বিজয় বলেন, ‘‘আমার রাজনৈতিক জীবন খোলা বই, লুকোছাপা কিছু নেই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী মোটেই ভরসা করার মতো ব্যক্তি নন।’’ দিগ্বিজয় মোদীর নোট বাতিলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মোদীর স্মার্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বোঝাতে চান, পাঁচ বছরে সাফল্যের খাতায় কিছু নেই বলেই মোদী-অমিত শাহ এখন উগ্র হিন্দুত্বের শরণাপন্ন। ভোপালে তাঁর বিরুদ্ধে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করাও সেই কৌশলেরই অঙ্গ। দিগ্বিজয়-পুত্র জয়বর্ধনের ব্যাখ্যা, ‘‘এই কারণেই ভোপালের ভোট শুধু ভোপালের লড়াই নয়। গোটা দেশের নির্বাচনের প্রতিফলন।’’

সেই লড়াইতেই ধুরন্ধর রাজনীতিক দিগ্বিজয়ের আস্তিনে লুকিয়ে থাকে নরম হিন্দুত্ব। তাঁর সভায় ‘ন্যায়’ প্রকল্পের আগে রাহুল গাঁধীর মানসরোবর যাত্রা, দিগ্বিজয়ের নিজের নর্মদা পরিক্রমার প্রসঙ্গ ওঠে।

মুখ্যমন্ত্রীর গদি হারানোর পরে দিগ্বিজয় শপথ নিয়েছিলেন, ১০ বছর ভোটে লড়বেন না। লড়েনওনি। তবে লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন দেড় বছর আগে। অমৃতাকে সঙ্গে নিয়ে, ১৯২ দিন ধরে পায়ে হেঁটে ৩,৩০০ কিলোমিটার নর্মদা-পরিক্রমা করেন। রামেশ্বর বলেন, ‘‘ওই নর্মদা পরিক্রমাতেই মানুষের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন। আর সবাই জানে, যিনি নর্মদা পরিক্রমা করেন, তিনি সন্ত হয়ে যান।’’

দিগ্বিজয়ও বোধহয় সেটাই মনে করিয়ে দিতে চান। প্রতিটি জনসভায় তিনি বক্তৃতা শেষ করেন ‘নর্মদে হর’ জয়ধ্বনি দিয়ে। ভোটের বৈতরণী পার হতে নর্মদায় ভরসা!

Digvijay Singh Lok Sabha Election 2019 Hindutva
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy