Advertisement
E-Paper

ভুয়ো খবর বাসা বাঁধে মনের গভীরে

মানব-মনস্তত্ত্বের উপরে ভুয়ো খবরের প্রভাবের একাধিক কারণ দেখানো হয়েছে ওই গবেষণায়। তার মধ্যে একটি হল স্মৃতি থেকে কোনও ঘটনা মনে করতে পারলেও তার তথ্যসূত্র মনে করতে না পারা, যাকে মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘মিসঅ্যাট্রিবিউশন’।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ভুয়ো খবর ঠেকাতে হলে বোঝা জরুরি মানুষের মনস্তত্ত্ব। বুঝতে হবে, কীভাবে আমাদের স্মরণশক্তি কাজ করে, কীভাবেই বা ভুয়ো খবর তার উপরে প্রভাব ফেলে। এমনই জানাচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা। ওই গবেষণায় মনোবিজ্ঞানের চোখে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে কীভাবে ভুয়ো খবর মানব-মনস্তত্ত্বের উপরে জাল বিছিয়ে ফেলে। ডিজিটাল মাধ্যমে এখন যেভাবে ভুয়ো খবর ছড়ায় তা জনমত, এমনকি ভোটেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই গবেষণায়। ভারতের ভোটের আগেও ভুয়ো খবরের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারের মতো সংস্থা।

মানব-মনস্তত্ত্বের উপরে ভুয়ো খবরের প্রভাবের একাধিক কারণ দেখানো হয়েছে ওই গবেষণায়। তার মধ্যে একটি হল স্মৃতি থেকে কোনও ঘটনা মনে করতে পারলেও তার তথ্যসূত্র মনে করতে না পারা, যাকে মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘মিসঅ্যাট্রিবিউশন’। মনস্তত্ত্বের এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই, বিজ্ঞাপন এত কার্যকরী বলে দাবি গবেষকদের। এ জন্যই কোনও পণ্য দেখলে তা খুব পরিচিত মনে হয়, কিন্তু সেই পরিচিতির কারণ যে ওই পণ্যের বিজ্ঞাপন, তা খেয়াল থাকে না। এর প্রভাব পড়ে রাজনীতিতেও। ওই গবেষণাপত্রেই উল্লেখ করা হয়েছে আমেরিকার একটি গবেষণার কথা, যেখানে দেখানো হয়েছে, ২০১৬-র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কীভাবে ভুয়ো খবর প্রভাব ফেলেছিল। দেখা গিয়েছে, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সমুদ্রে আটকে পড়া সেনাদের উদ্ধার করতে নিজের বিমান পাঠিয়েছেন’— এমন একটি ভুয়ো খবরের শিরোনামের প্রভাব জনমানসে ছিল এক সপ্তাহ। ওই খবর যে ভুয়ো, তা জানাজানি হওয়ার পরেও সেই প্রভাব যায়নি।

একটি ভুয়ো খবরের বারংবার প্রকাশও জনমানসে তার বিশ্বাসযোগ্যতা মনে করা হয় বলে দাবি গবেষকদের। একসঙ্গে একটি বড় গোষ্ঠীর মানুষ একই খবর বারবার দেখলে মনে করতে পারেন তা হয়তো সত্যি। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশনের শিক্ষিকা গাজালা ইয়াসমিন এ প্রসঙ্গে মনে করাচ্ছেন নাৎসি জার্মানির কথা। তিনি বলছেন, ‘‘বারবার মিথ্যে বললে তা একটি প্রতিধ্বনির ক্ষেত্র তৈরি করে। সেই ক্ষেত্রের মধ্যে যাঁরাই থাকেন বারবার সেই প্রতিধ্বনি শুনে তাঁদের সেই ভুয়ো খবরই সত্যি মনে হয়। হিটলারের সময়ে জার্মানিতে এমনই হয়েছিল।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মনের ভিতরে আগে থেকে থাকা ধারণাও ভুয়ো খবর বিশ্বাস করার প্রবণতা বাড়ায়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, স্মৃতি কেবলই নানা ঘটনা মনে রাখে না। অনেক সময় তা একটি ধারাবাহিক কাহিনি মনে রাখতে চায়। সেই কাহিনি তৈরিতে পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনার বিবরণ নয়, মনের মধ্যে আগে থেকে থাকা ধারণাই প্রভাব ফেলে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। ভুয়ো খবর যদি এই আগে থেকে থাকা ধারণাকে সমর্থন করে এবং আবেগের জন্ম দেয় তাহলে সেই খবর বিশ্বাস করার প্রবণতাও অনেকটা বেড়ে যায়। তথ্য দিয়ে সেই খবরকে ভুল প্রমাণ করা হলেও তা মনে প্রভাব ফেলে না, কারণ তথ্য সেই আবেগের জন্ম দিতে পারে না। গাজালা বলছেন, ‘‘এখন সমাজ যেভাবে বিভক্ত তাতে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। রাজনীতিতে কোনও এক পক্ষ তাদের যা পছন্দ তেমন খবরই অনেক সময় ঠিক-ভুল যাচাই না করে ছড়িয়ে দেয়। বিরোধী পক্ষও একই জিনিস করে। হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক থাকায় তা আরও সহজ হচ্ছে।’’

ভুয়ো খবরের বিপদ থেকে বাঁচার উপায়ও বাতলেছেন গবেষকেরা। তাঁদের মতে, খবরটি কোথায় প্রকাশিত হয়েছে, সেই সূত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ভাল করে যাচাই করা প্রয়োজন। খবরটি কী ধরনের খবর এবং সেটি বিশ্বাস করলে কোনও পক্ষের সুবিধে হতে পারে কি না তাও যাচাই করা দরকার। যদি মনে হয় এমন খবর বিশ্বাস করলে কোনও নির্দিষ্ট পক্ষের কোনও উদ্দেশ্যসাধনে সুবিধে হতে পারে তা হলে তা খুঁটিয়ে যাচাই করা দরকার। সেই খবরের সূত্র জানা না গেলে নিজেদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান দিয়ে তা পরখ করা দরকার।

Facebook Fake News Cyber Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy