Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শ্রীলঙ্কায় হামলাও মোদীর ভোট চাওয়ার যুক্তি!

মোদীর পরের সভা ছিল রাজস্থানের চিতোরগড়ে। তত ক্ষণে শ্রীলঙ্কার নাশকতার খবর পেয়ে গিয়েছেন। এ বার  প্রধানমন্ত্রী বললেন, “রানা প্রতাপের জমি থেকে রাজস্থানের প্রচার শুরুর পথেই শুনলাম, আমাদের বন্ধু পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসবাদীরা অনেক ‘বোম- ধামাকা’ করেছে।

গুজরাতে জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।

গুজরাতে জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সাংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

বোমা ফাটল শ্রীলঙ্কায়। ভারতে ভোট চাইলেন নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রীর আজ তিনটি সভা ছিল। প্রথমটি নিজ-রাজ্য গুজরাতের পাটানে। যেখানে দল কঠিন লড়াইয়ের মুখে। তখনও শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পুরো রিপোর্ট পাননি। কিন্তু সেখানেও পুরোদমে জাতীয়তাবাদের তাস খেলতে শুরু করেন। নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে সুকৌশলে টেনে আনেন বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের কথা।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, অভিনন্দনকে না-ছাড়লে যে পাকিস্তানকে ফলভোগ করতে হবে, সেই কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আমেরিকার এক কর্তাও বলেন, মোদী ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি রেখেছেন। পাকিস্তান দ্বিতীয় দিনেই অভিনন্দনকে ছাড়ার ঘোষণা করে। তা না-হলে ‘কোতলের রাত’ হত। পরমাণু অস্ত্র নিয়েও পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী বলেন, “পাকিস্তানের হুমকিতে ভয় পাওয়া ছেড়ে দিয়েছে ভারত। রোজ পরমাণু বোতামের কথা বলত। আমাদের কাছে তবে কী আছে? আমরা কি তা দীপাবলির জন্য বাঁচিয়ে রেখেছি?”

মোদীর পরের সভা ছিল রাজস্থানের চিতোরগড়ে। তত ক্ষণে শ্রীলঙ্কার নাশকতার খবর পেয়ে গিয়েছেন। এ বার প্রধানমন্ত্রী বললেন, “রানা প্রতাপের জমি থেকে রাজস্থানের প্রচার শুরুর পথেই শুনলাম, আমাদের বন্ধু পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসবাদীরা অনেক ‘বোম- ধামাকা’ করেছে। গির্জায়, হোটেলে। আজ পুরো বিশ্ব ইস্টারের পবিত্র পর্ব পালন করছে, প্রভু যিশুর শান্তির বার্তা আত্মস্থ করতে পূজাপাঠ করছে, সেই সময় নরাধম সন্ত্রাসবাদীরা শত শত নির্দোষের উপরে রক্তের খেলা খেলল। সঙ্কটের মুহূর্তে ভারত শ্রীলঙ্কার পাশে রয়েছে পুরো শক্তিতে।”

এর পরে এক নিঃশ্বাসে প্রধানমন্ত্রী বলে চলেন, “ভাই ও বোনেরা, আপনারা যখন পদ্মচিহ্নে ভোট দেবেন, মনে রাখবেন, এই সন্ত্রাসবাদ খতম করার জন্য বোতাম টিপছেন আপনারা। আপনার আঙুলে শক্তি আছে। আপনি পদ্মে ভোট দেবেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াইয়ে শক্তি আসবে। বলুন, এই সন্ত্রাসবাদ কে খতম করতে পারে? … মোদী ছাড়া আর কোনও নাম দেখছেন আপনারা? আর কেউ করতে পারে? … ফলে যখন ভোট দেবেন, বীর সৈনিকের মতো সচেতন থাকা উচিত। দেশের জন্য ভোট দিলে সেই ভোট মোদীর কাছে যাবে।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রাহুল গাঁধী যতই বেকারত্ব, কৃষক দুর্দশার মতো মৌলিক বিষয় নিয়ে প্রচার করছেন, মোদী ততই চড়াচ্ছেন উগ্র জাতীয়তাবাদের সুর। সে কারণে আজ দিল্লিতে সার্জিকাল স্ট্রাইকের ‘হিরো’ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুডাকে সামনে আনল কংগ্রেস। যাঁর নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গড়েছেন রাহুল গাঁধী। সেই টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টও আজ প্রকাশিত হল। সঙ্গে এলেন পি চিদম্বরম আর জয়রাম রমেশ। সেনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হলেন রাহুল। বললেন, “নির্বাচন কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। তার পরেও সেনা নিয়ে কোনও রকম রাজনীতি দুঃখজনক।” চিদম্বরম বললেন, “এই চড়া জাতীয়তাবাদে মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই। সেনাকে সব সময় খোলা পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ফের দেবে।”

কংগ্রেসের আক্রমণ আসবে মোদী জানতেন। তাই বাড়মেরে তৃতীয় তথা এ দিনের শেষ সভায় ফের কংগ্রেসকে বিঁধলেন। বেশ কয়েক বার ‘পাকিস্তান’ ‘পাকিস্তান’ করলেন। বললেন, “২৩ মে যখন ফের মোদী সরকার আনবেন আপনারা, তার আওয়াজ শোনা যাবে সীমান্তপারে। সন্ত্রাসবাদকে শিক্ষা দেওয়ার পণ করেছি আমি। ঘরে ঢুকে মারি। কিন্তু কংগ্রেস বলে, শৌর্যের কথা বলা উচিত নয়। কেন? আমি কি ভজনমণ্ডলী করতে এসেছি?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE