ভীষ্ম সাহনি
বামপন্থী সাহিত্যিক ভীষ্ম সাহনির জন্মশতবর্ষ সাড়ম্বরে পালন করতে চায় মোদী সরকার। নিজেদের সাম্প্রদায়িক এবং বাম-বিরোধী ভাবমূর্তি মুছতে ‘তমস’-এর স্রষ্টাকে স্মরণ করার এই উদ্যোগ যে যথেষ্ট কৌশলী পদক্ষেপ, সে কথা বিজেপি নেতৃত্বও অস্বীকার করছেন না।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা আজ বলেন, ‘‘ভীষ্ম সাহনি মহান লেখক। কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রক গোটা বছর ধরে তাঁর জন্মশতবর্ষ পালন করবে। তাঁর কাজকে সংরক্ষণ করার জন্য সরকার সব রকম পদক্ষেপ করবে।’’ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে লেখকের বাড়িটি সংরক্ষণের জন্যও উদ্যোগী হবে কেন্দ্র।
ভীষ্ম সাহনি কিন্তু সক্রিয় বামপন্থী বলে পরিচিত। দেশভাগের সময় তিনি কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরের বছর আইপিটিএ-তে যোগ দেন। এই সূত্র ধরেই পরে কংগ্রেস ছেড়ে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ভীষ্ম। অভিনেতা-নির্দেশক হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন বলরাজ সাহনির অনুজ। বামপন্থীদের সঙ্গে বিজেপির পারস্পরিক দূরত্ব সত্ত্বেও ভীষ্মর জন্মশতবর্ষ পালন কেন?
বিরোধীরা এর মধ্যে একাধিক উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছেন। প্রথমত তাঁদের দাবি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাথায় কাছের লোককে বসিয়ে সমালোচিত হয়েছে কেন্দ্র। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে গজেন্দ্র চৌহানের মনোনয়ন নিয়ে প্রবল হট্টগোল চলছে। গজেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে রয়েছেন বামপন্থী ছাত্রেরা। প্রসার ভারতী, সেন্সর বোর্ড, আইসিএইচআর, আইসিসিআর, এনসিইআরটি-র মতো প্রতিষ্ঠানেও বেছে বেছে গেরুয়া শিবিরের লোক বসানোর অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের দাবি, এই আবহে ভীষ্ম সাহনির জন্মশতবর্ষ আয়োজন করে কেন্দ্র দেখাতে চাইছে তারা কতটা নিরপেক্ষ। এর মধ্য দিয়ে গেরুয়া-পক্ষপাত এবং বাম-বিরোধ, একসঙ্গে এই দুই সমালোচনারই জবাব দিতে চাইছে তারা।
বিজেপির পক্ষ থেকেও অনেকটা এই জাতীয় কথাই বলা হচ্ছে। দলীয় এক নেতার কথায়, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে বামপন্থীদের সঙ্গে আমাদের চিন্তাধারার বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু পুণের ঘটনায় এমন ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যে বামপন্থী ছাত্ররা রয়েছেন বলেই সরকার তার বিরোধে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব যে তা নয়, ভীষ্ম সাহনির জন্মশতবর্ষ পালন করাই তার প্রতিফলন।’’ আবার সাম্প্রদায়িকতার যে অভিযোগ বি়জেপির দিকে ক্রমাগত ধেয়ে আসে, সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী লেখককে স্মরণ করে তাতেও প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা আছে বলে বিরোধীদের ধারণা। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘চাপে পড়ে মোদী সরকার এখন দেখাতে চাইছে, ওরা সব রকম মতাদর্শের লোককে সম্মান করে। অথচ দূরদর্শনে ‘তমস’ দেখানো নিয়ে বিজেপি-ই কিন্তু আপত্তি তুলেছিল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy