বসপা নেত্রী মায়াবতী।— ফাইল চিত্র।
জোটের জন্য প্রস্তুত নয় কংগ্রেস। তাই জোট বাঁধার প্রশ্নই ওঠে না। প্রয়োজনে একাই লড়বে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)। ঘোষণা দলনেত্রী মায়াবতীর। চলতি বছরের শেষে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। তা নিয়েই নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন তিনি।
আগামী বছর দেশে লোকসভা নির্বাচন। তা নিয়ে একদিকে যখন বিরোধীরা একজোট হচ্ছেন, তখন তাঁর এমন ঘোষণায় অস্বস্তি বেড়েছে বিরোধী রাজনৈতিক মহলে।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন বিএসপি নেত্রী। দাবি মতো আসন সমঝোতা হয়নি বলে কংগ্রেসকে তুলোধনা করেন তিনি। বলেন, ‘‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রশ্নই ওঠে না। কোনওমতেই তা সম্ভব নয়। কারণ সঠিক অর্থে জোট বলতে যা বোঝায়, তাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই কংগ্রেসের। জোটের জন্য একেবারেই ওরা প্রস্তুত নয়। এখন তো মনে হচ্ছে, বিজেপিকে আদৌ হারাতে চায় না। বরং বন্ধু দলগুলির ক্ষতি করতে চায়।বরাবর এমন আচরণ ওদের।যে কারণে কর্নাটক ও ছত্তীসগঢ়ে আমরা আঞ্চলিক দলগুলির হাত ধরতে বাধ্য হয়েছিলাম। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশেও সেই মতোই এগোব। প্রয়োজনে একাই লড়ব আমরা। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাব না।’’
আরও পড়ুন: মুসলিম বলে সুবিচার পাননি, তাই হিন্দু হলেন আখতার!
আরও পড়ুন: গাঁধী জয়ন্তীতে মোদীর বিরুদ্ধে সংগ্রামের ডাক কংগ্রেসের
তবে এ ব্যাপারে সনিয়া গাঁধী বা রাহুল গাঁধীকে দোষারোপ করতে নারাজ তিনি। বরং দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতাদের জন্যই কংগ্রেস-বিএসপি জোট হচ্ছে না বলেই দাবি মায়াবতীর। তাঁর কথায়, ‘‘সনিয়াজি, রাহুলজি বসপার সঙ্গে জোট বাঁধতে চান বলে আমার ধারণা। কিন্তু ওঁদের দলের কিছু নেতার জন্যই তা সম্ভব হচ্ছে না।দিগ্বিজয় সিংহের মতো কংগ্রেস নেতারা চান না জোট হোক। কারণ সিবিআই, ইডিকে নিয়ে ভয় রয়েছে ওঁদের।দিগ্বিজয় সিংহ তো আবার বিজেপিরও এজেন্ট। তাই উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে বেড়াচ্ছেন। কেন্দ্রের চাপে মায়াবতী জোটের অংশ হতে চান না বলে দাবি করছেন। যদিও ওঁর দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন।’’
বিরোধীদের সাহায্য ছাড়া কংগ্রেসের একার পক্ষে বিজেপিকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় বলে মত বসপা নেত্রীর। সাংবাদিক বৈঠকে সেকথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘এখনও যথেষ্ট অহঙ্কার রয়েছে কংগ্রেসের। ভাবছে একাই বিজেপিকে হারিয়ে দেবে। কিন্তু বুঝছে না যে বিজেপির মতো তাদের ওপরও বেজায় চটে রয়েছেন মানুষ। গুজরাত নির্বাচনের পর অন্তত শিক্ষা হওয়া উচিত ছিল ওদের।চাইলে ঢের আগেই গুজরাত ওদের দখলে চলে যেত। শুধু জেদ আর অহঙ্কারের জন্য তা হয়নি।’’
মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করা নিয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত মায়াবতীর। সেখানে ২৩০টি আসনের মধ্যে ৫০-টিতে নিজের প্রার্থী নামাতে চেয়েছিলেন বসপা নেত্রী। এমনকি ২২ জনের নামও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দাবি খারিজ করে দেয় কংগ্রেস। তারওপর প্রকাশ্যে মায়াবতীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন দিগ্বিজয় সিং। বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের চাপেই জোটে আপত্তি বসপা নেত্রীর। তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলছে যে! তাঁর এমন মন্তব্য ভালভাবে নেননি উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তড়িঘড়ি ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের বিরোধী নেতা অজিত যোগীর সঙ্গে জোট ঘোষমা করেন। কংগ্রেসকে সতর্ক করতেই তিনি এমন পদক্ষেপ করেন বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তার একমাস যেতে না যেতেই বুধবার নয়া ঘোষণা করলেন।
তবে আসন্ন রাজ্য নির্বাচনে একা লড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও, আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নন বসপা নেত্রী। বরং রাস্তা খোলা রেখেছেন। যাতে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তাতেই আশার আলো দেখছে কংগ্রেস। মায়াবতীর ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন করলে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা জানান, ‘‘আবেগের বশে মুখ ফস্কে অনেক কথাই বেরিয়ে যায়। তবে আশার কথা, সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীর উপর আস্থা রেখেছেন মায়াবতী। বাকি সমস্যাগুলো মিটিয়ে নেওয়া অসম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy