কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে বন্ধ ঘরে কথা চায় পাকিস্তান।
কূটনৈতিক মাধ্যমে ভারতের কাছে এক অভিনব প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। প্রস্তাবটি হল— পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাভিদ মুখতার এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসির খান জানজুয়া দিল্লি আসবেন। সেখানে ভারতের সেনাপ্রধান, গুপ্তচর সংস্থা র-(রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং) এর প্রধান অনিল ধাসমনা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে তাঁরা বৈঠকে বসবেন। একেবারে রুদ্ধদ্বার হবে সেই বৈঠক। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সূত্র বার করা।
অতি সম্প্রতি পাঠানো এই প্রস্তাব এখনও মোদী সরকার গ্রহণ করেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে দিল্লি আলাপ আলোচনা করছে বলে খবর।
চার বছর আগে অজিত ডোভাল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হওয়ার পরে তাঁর কৌশল ছিল পাকিস্তানকে ‘ডান্ডা দিয়ে ঠান্ডা’ করা। তাঁর নির্দেশেই সীমান্ত পেরিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় কম্যান্ডোরা। কিন্তু তাতে কাশ্মীরে জঙ্গি হানা এবং সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা কমেনি, বরং বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ‘ডোভাল ডকট্রিন’ ব্যর্থ হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী নিজে কাশ্মীর গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সঙ্গে বৈঠক করে কাশ্মীরে উন্নয়নের কথা বলছেন। রমজানে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাবে কাজ না-হলেও এখনও সেটা চালিয়ে যেতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
‘ডোভাল ডকট্রিন’ মেনে আলোচনার রাস্তা কার্যত বন্ধ করেছে দিল্লি। বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক আনুষ্ঠানিক ভাবে বন্ধ। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বার বার বলছেন— পাকিস্তান সন্ত্রাস বন্ধ না-করলে আলোচনায় বসা হবে না। কিন্তু প্রকাশ্যে এ কথা বললেও সম্প্রতি প্রাক্তন বিদেশসচিব এম কে রসগোত্রা এবং বিদেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন বিশেষ সচিব বিবেক কাটজুর মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে একদফা ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা শুরু করেছেন মোদী। সূত্রের খবর, সেই আলোচনাতেই পাকিস্তান এই প্রস্তাবটি দিয়েছে।
পাক সেনাপ্রধান কামার বাজওয়া সম্প্রতি বার বার বলছেন, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে আলোচনা চায়। আবার পাক সেনাবাহিনীর কাশ্মীর বিষয়ক বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল ইসমাইল খান এবং ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়ত রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে এক সঙ্গে কেনিয়ায় কাজ করেছিলেন। দিল্লিতে কর্মরত পাকিস্তানি হাই কমিশনার সোহেল মাসুদ এই প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, ‘‘দু’দেশের সেনাপ্রধান ও গুপ্তচর প্রধানেরা দরজা বন্ধ করে আলোচনায় বসলে ক্ষতিটা কী?’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান চাই।’’
তাৎপযপূর্ণ ঘটনা হল, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ২৫ জুলাই। সরকারের একটি সূত্র বলছে, এ বার তাদের ভোটে কাশ্মীর বা ভারত তেমন বড় বিষয় নয়। বরং ভারতের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করায় আগ্রহী পাকিস্তান। কিন্তু ভোটের আগে ভারত এখন পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে যেতেই বেশি আগ্রহী। আর তাই পাকিস্তানের প্রস্তাব নিয়ে মোদী সরকারের অবস্থা এখন— শ্যাম রাখি না কূল রাখি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy