প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এবং রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
দলের সভাপতি পদে আর নেই তিনি, ঘোষণা করেছেন রাহুল গাঁধী। মাঠে নেমে লড়ছেন বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কার ঝাঁঝ দেখে কাল থেকেই দলে রব উঠছে, তাঁকেই করা হোক সভাপতি। আজ নিজেই সে সম্ভাবনায় জল ঢাললেন প্রিয়ঙ্কা। জানালেন, ‘‘রাহুলই আমাকে বলেছেন সোনভদ্রের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। তিনিই আমার নেতা।’’
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দু’দিনের মাথায় কংগ্রেস কর্মসমিতির বৈঠকেই রাহুল সভাপতি পদ থেকে ইস্তফার কথা জানিয়েছিলেন। সেই বৈঠকেই দলের নেতাদের রাহুল সাফ জানান, ‘‘আপনারা পরের সভাপতি খুঁজে নিন। বোনকেও টানবেন না এ ব্যাপারে।’’ প্রিয়ঙ্কাও ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘‘রাহুল যখন লড়ছিলেন, তখন কেউ তাঁর পাশে দাঁড়াননি।’’ গত মাসে চার পাতার খোলা চিঠিতে রাহুলও ঠিক এই কথাই জানান। বলেন, কখনও তিনি ‘একা’ই লড়ে চলেছেন।
প্রিয়ঙ্কার আজকের মন্তব্যে দলে ফের গুঞ্জন শুরু হয়েছে, আসলে কী বার্তা দিতে চাইছেন তিনি? যে রাহুল দলের কোনও কাজে থাকছেন না, তিনিই প্রিয়ঙ্কাকে সোনভদ্রে যেতে বলছেন! আবার প্রিয়ঙ্কা তাঁকেই ‘নেতা’ বলছেন! কংগ্রেসের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘বার্তা স্পষ্ট। আপাত দৃষ্টিতে প্রিয়ঙ্কার সোনভদ্রের সফর ২০২২ সালের ভোটের জন্য উত্তরপ্রদেশে দলের ভিত শক্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবে মনে হতে পারে। কিন্তু এই লড়াইটি শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, কংগ্রেসের একটি অংশের বিরুদ্ধেও। বিশেষ করে দলের প্রবীণদের বিরুদ্ধে।’’ কী ভাবে? নেতাটির কথায়, আহমেদ পটেলদের ‘নেতৃত্বে’ দলের প্রবীণদের একটি গোষ্ঠী দলের রাশ নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছে। অথচ রাহুল চান, লোকসভার ভরাডুবির পর প্রবীণেরা সরে গিয়ে নবীনদের হাতেই ছেড়ে দিন দল। সেটি হচ্ছে না বলেই বেঁকে বসে আছেন রাহুল। প্রিয়ঙ্কার বার্তাতেও আজ সেটিই ফুটে উঠেছে।
প্রিয়ঙ্কাকে পুরোপুরি সমর্থন করে রাহুলও আজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সোনভদ্রের নরসংহারে পীড়িত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকারের স্বৈরাচারী প্রবৃত্তি তাঁকে চুনার দুর্গের অতিথিশালায় বন্দি করে, আলো-জল ছাড়া রাতভর আটকে রেখে গণতন্ত্র দমনের চেষ্টা করেছে। কংগ্রেস এতে ভয় পেয়ে দলিত ও আদিবাসীদের হয়ে লড়াই করা বন্ধ করবে না।’’ উল্লেখ্য, প্রিয়ঙ্কাকে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করেছিলেন রাহুলই। তাঁর হাতে গোটা রাজ্যের ভার তুলে দেওয়ার জল্পনা অনেক দিন ধরেই চলছে। আজ বোনকে ‘সাধারণ সম্পাদক’ হিসেবে উল্লেখ করে সেই জল্পনাও জোরদার করলেন রাহুল।
প্রিয়ঙ্কার সফরকে ঘিরে ফের কংগ্রেসে নবীনে-প্রবীণে লড়াইটি সামনে চলে এসেছ। কংগ্রেসের নবীন গোষ্ঠীর নেতারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন, ‘‘গত কাল থেকে প্রিয়ঙ্কা লড়াই করছেন। এক জন প্রবীণ নেতাও কি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন? আহমেদ পটেল, অশোক গহলৌত, কমল নাথ, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা— কেউ কি গিয়েছেন? কিন্তু আজ সকাল হতেই নবীনদের পক্ষে থাকা একঝাঁক নেতা বারাণসী চলে যান। রাজীব শুক্ল, দীপেন্দ্র হুডা, জিতিন প্রসাদ, আর পি এন সিংহ, মুকুল ওয়ানিক, রাজ বব্বর।’’
নবীন সাংসদদের বক্তব্য, যে নেতারা এখন রাহুলের উত্তরসূরি খুঁজছেন, তাঁদের কী এক্তিয়ার রয়েছে এ কাজের? কর্নাটকে সঙ্কট মিটলেই তাঁরা দাবি তুলবেন, রাহুলের ইস্তফার পর বর্তমান কর্মসমিতিও ভেঙে দেওয়া হোক। এই নেতাদের মতে, রাহুল সক্রিয়ই রয়েছেন। তাঁর পদযাত্রার পরিকল্পনাও তৈরি হচ্ছে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy