নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে দাঁড়ালেও বরাক উপত্যকার দুই বৌদ্ধিক সংগঠন আজ ধর্মীয় পরিচিতির জায়গায় আপত্তি জানায়। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— ধর্মের ভিত্তিতে আইন তৈরি হলে তা সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে যেতে পারে। তাই সেখানে ‘দেশভাগের বলি’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হোক। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চও চায়, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-জৈন-পার্সি শব্দগুলিকে বাদ দিয়ে নির্যাতিতদের কী করে নাগরিকত্ব দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হোক। পাশাপাশি অসম চুক্তির সঙ্গে সংঘাতের জায়গাটাও মাথায় রাখতে হবে।
তবে যৌথ সংসদীয় দলের সামনে উভয় সংগঠন জানিয়ে দেয়, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর মাধ্যমে নির্যাতিতদের নাগরিকত্ব দিলেই অসমের উপর বোঝা চাপানো হবে বলে যে সব কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি অর্থহীন। উদ্বাস্তুরা অবিভক্ত ভারতের নাগরিক। তাঁরা ভারতে থাকতে চাইছেন।
যৌথ সংসদীয় দলের সামনে আজ সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু) এবং অসম গণ পরিষদ (অগপ)-ও নিজেদের বক্তব্য পেশ করেছে। উভয় সংগঠন বিলের বিরোধিতায় আগাগোড়া সরব ছিল।
তাঁদের কথায়— এই বিল আইনে পরিণত হলে অসম চুক্তির সঙ্গে সংঘাত দেখা দেবে। অসম চুক্তিতে ১৯৭১ সালের পর আসা বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদানের কোনও সংস্থান নেই। রাজ্যের শাসনক্ষমতায় বিজেপি-র শরিক অগপও বিলের তীব্র বিরোধিতা করে। অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতি-আবেগের কথাতেই জোর দেন তাঁরা।
অন্য দিকে, বিলে যে ভাবে নির্যাতিত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সিদের নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে, তাতে বরাক বঙ্গ আপত্তি জানিয়েছে। তাঁরা বলেন, এর বদলে দেশভাগের বলি শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হলে কেন্দ্রীয় সরকার যাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন, তাঁরাই নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু আইন খারিজের আশঙ্কা থাকবে না। তাঁদের কথায়, ১৯৭১ সালের পরও যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন, তাঁরা দেশভাগেরই শিকার।
যৌথ সংসদীয় দলের সদস্যরা অবশ্য বিলের পক্ষে-বিপক্ষের উভয় শিবিরকে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করেন। বরাকবঙ্গের পক্ষে মূলত জবাব দেন জয়দীপ বিশ্বাস। ছিলেন নীতীশ ভট্টাচার্য, তৈমুর রাজা চৌধুরী এবং সঞ্জীব দেবলস্কর। সম্মিলিতের পক্ষে কথা বলেন চার্বাক। সঙ্গে ছিলেন অজয় রায়ও।
এ দিকে, যৌথ সংসদীয় দল এরই মধ্যে অসমে আসতে চলেছেন। তাদের রাজ্যে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেবের এক ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি সংসদীয় দলটিকে ব্রহ্মপুত্রের পাশাপাশি বরাক উপত্যকা সফরেরও অনুরোধ করেছেন। বিশেষ করে, ডিটেনশন ক্যাম্পগুলি পরিদর্শনেরও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy