অশান্ত কাশ্মীর। ফাইল চিত্র। এএফপি
কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে অপদস্থ করতে উঠে পড়ে লাগল ইসলামাবাদ। অন্য দিকে দেশের সব দল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের পাশে পেতে আরও বেশি উদ্যোগী হল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আজ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরেই কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাশ্মীর নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে হাজির ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল-সহ মোদী সরকারের শীর্ষ কর্তারা। বৈঠকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ও পাকিস্তানের মনোভাব নিয়ে আলোচনা হয়। গত কালই কাশ্মীর প্রসঙ্গে কূটনৈতিক সুর চরমে নিয়ে গিয়েছিল ইসলামাবাদ। নিহত জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানিকে নিয়ে বিবৃতি দেয় পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দফতর। ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকেও ‘উদ্বেগ’ জানিয়েছিলেন পাক বিদেশসচিব। সরকারি সূত্রে খবর, পাকিস্তানকে কী ভাবে পাল্টা চাপ দেওয়া হবে
তা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেন মোদী, রাজনাথরা। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী তথা জম্মু-কাশ্মীরের সাংসদ জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সব পক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।’’
পাকিস্তানের মোকাবিলা করার সময়ে সব দলকে পাশে চাইছেন মোদী। তাই বাকি দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়ায় আরও জোর দেওয়া হয়েছে। গত কালই জাতীয় স্বার্থে সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও সিপিএম। এ দিন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কাশ্মীর নিয়ে সমর্থন চেয়ে তাঁকে ফোন করেছিলেন রাজনাথ। তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের পাশেই আছে তৃণমূল। তবে আজ প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগ দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য মেহবুবা রাজ্য ছেড়ে যেতে পারবেন না জানি। কিন্তু বৈঠকে তাঁর যোগ দেওয়া উচিত ছিল।’’ রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গেও আজ কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করেন রাজনাথ। মেহবুবার দফতরের দাবি, তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
তবে দিল্লির অস্বস্তি বাড়িয়ে এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জে সক্রিয় হয়েছে ইসলামাবাদ। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি সদস্য দেশকে কাশ্মীরে ভারতের ‘দমনপীড়নে’র কথা জানিয়েছে তারা। ‘যতটা সম্ভব সংযত ভাবে’ কাশ্মীরের পরিস্থিতির মোকাবিলা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন। কাশ্মীরকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বললেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, কাশ্মীর নিয়ে সরব হওয়ার সময়েই ফের রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব মেনে গণভোটের কথা উস্কে দিয়েছিল পাকিস্তান। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এ নিয়ে তারা রাষ্ট্রপুঞ্জেও সরব হবে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘পাকিস্তান প্রতি বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলে। কিন্তু উপত্যকাকে অশান্ত করার পিছনে ওদের ভূমিকা কারও অজানা নয়।’’ সন্ত্রাসে পাক মদতের বিষয়টি নিয়েই এ বার দিল্লি রাষ্ট্রপুঞ্জে পাল্টা চাপ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক লড়াইয়ের ফল যা-ই হোক, কাশ্মীরে হিংসা অবশ্য থামার কোনও লক্ষণ নেই। আজও ভূস্বর্গের নানা প্রান্তে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিজবেহরা এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমির নাজির লাট্টুর মৃত্যুতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ীদের একাংশও আজ দাবি করেছে ভুয়ো সংঘর্ষে বুরহান ওয়ানিকে মারা হয়েছে। তাদের মতে, পুরো পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিই দায়ী। তাঁর এখনই ইস্তফা দেওয়া উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy