Advertisement
১১ মে ২০২৪
Farm Law

যোগীর হুঙ্কার সার, মোদীর ছাড় মজুতে

আলু, বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৫৩
Share: Save:

নতুন কৃষি আইন এনে যত ইচ্ছে আলু-পেঁয়াজ মজুতের ছাড়পত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রবিবার হুঙ্কার ছাড়লেন— মজুতদারদের কঠোরতম শাস্তি দেবে তাঁর সরকার। কাউকে রেয়াত করা হবে না।

ঢাকঢোল পিটিয়ে, বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে সংসদে পাশ করিয়ে তিন কৃষি আইন জারির এক মাসের মাথাতেই তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার। কারণ আলু, বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আলু কেজি প্রতি ৭০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। বিজেপি সূত্রের খবর— বিহারের বিধানসভা ভোট, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে উপ-নির্বাচনের মধ্যে তা দলীয় নেতৃত্বের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের ৮টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে, রবিবার যোগী আদিত্যনাথকে কার্যত মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধেই হুঙ্কার ছাড়তে হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা আনাজ ও ডালের মতো অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা উত্তরপ্রদেশ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’’

যোগীর মন্তব্যের পরে বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘মাত্র ৮টি আসন হলেও কোভিড, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নের মুখে এই উপনির্বাচন যোগীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৮-তে বিজেপি শুধু পেঁয়াজের চড়া দামের জন্য দিল্লি বিধানসভা ভোটে হেরেছিল।’’

আরও পড়ুন: মোদীর ‘যুবরাজ’ কটাক্ষে পাল্টা নিশানা তেজস্বীর​

তিন কৃষি আইনে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে চুক্তি চাষ করিয়ে চাষিদের থেকে সরাসরি ফসল কেনার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন করে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুত করার ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে। এখন পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৮০-১০০ টাকা, আলুর দাম কেজি প্রতি ৭০ টাকা। খাদ্য ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক টের পাচ্ছে, সেই মজুতদারিই পেঁয়াজের ক্ষেত্রে দাম বাড়ার প্রধান কারণ।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সংশোধিত অত্যাবশ্যক পণ্য আইন অনুযায়ী যে যত খুশি চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ মজুত করতে পারে। সরকার নাক গলাতে পারে না। তবে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে দাম দ্বিগুণ হলে সরকার নাক গলাতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গত সপ্তাহেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, আপাতত পাইকারি ব্যবসায়ীরা ২৫ টন পর্যন্ত পেঁয়াজ মজুত রাখতে পারবেন। খাদ্য মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, এই বিধিনিষেধ ব্যবসায়ীদের উপর। চাষিদের উপরে বিধিনিষেধ নেই।

কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভের অভিযোগ, ‘‘সরকার বলছে, চাষিরা ইচ্ছে মতো যেখানে খুশি ফসল বেচতে পারবে। এ দিকে উত্তরপ্রদেশ সরকার চাষিদের হিমঘরে মজুত করা আলু বের করে বেচতে বাধ্য করছে। জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার ৪৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিল। তার মধ্যে ৩২ হাজার টন পেঁয়াজ গুদামে পচে গিয়েছে। এর জন্য কে দায়ী?’’

আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে কিছু স্কুলে ২০% ফি হ্রাস​

বিরোধীদের বক্তব্য— কৃষি আইন পাশের এক মাসের মধ্যেই প্রমাণিত, এ দেশে কৃষি ক্ষেত্র এখনও পুরোপুরি বাজারের ভরসায় ছেড়ে দেওয়ার সময় আসেনি। আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী ফের কৃষি আইন নিয়ে মোদী সরকারকে পিছু হটতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘তিন আইনে কৃষির ভিতটাই দুর্বল হয়ে যাবে। রোজ চাষিদের আত্মহত্যার খবর পড়ছি।’’

বামপন্থী অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদনে প্রাচুর্য বলে প্রচারটাই ভুল। কোথাও কিছু ফসল বেশি হয়, তা অন্য রাজ্যে যায়। কিন্তু যোগাযোগ, গুদামের পরিকাঠামো মান্ধাতা আমলের। মজুতদারির উপরে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়াটা তাই ভুল।’’ তা হলে কি পেঁয়াজের দাম আপাতত কমছে না? কৃষি মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে কর্নাটকে পেঁয়াজ চাষ ধাক্কা খেয়েছে। মহারাষ্ট্রে মজুত পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। নভেম্বরের পর নতুন পেঁয়াজ এলে তবেই দাম কমতে পারে।’’ আপাতত সরকারি গুদাম থেকে সস্তায় পেঁয়াজ ছাড়া হচ্ছে। ইরান, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির শর্ত শিথিল করা হয়েছে। সরকারি সংস্থা নাফেড ৫০ টাকা কেজি দরে ২০ নভেম্বরের মধ্যে ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির দরপত্র আহ্বান করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farm Law Narendra Modi Yogi Adityanath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE