নিপুণ মলহোত্র
হোলির ছুটিতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা, সঙ্গে নৈশভোজ। এমন ইচ্ছে নিয়েই শুক্রবার রাতে দক্ষিণ দিল্লির এক নামজাদা রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন নিপুণ মলহোত্র নামে এক যুবক। যদিও মনোবাঞ্ছা পূরণ হল না তাঁর। রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই দেওয়া হল না নিপুণকে। ফিরিয়ে দেওয়া হল গেট থেকে। কারণ তিনি প্রতিবন্ধী!
রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ এমনটাই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, “আমরা কোনও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিতে পারি না। এটা রেস্তোরাঁর নীতি-বিরুদ্ধ।”
নিপুণ জন্ম থেকে ‘আরথ্রোগ্রাইপোসিস’ নাম এক বিরল রোগে আক্রান্ত। এই ডিসঅর্ডারে হাত-পায়ের পেশি ঠিকমতো তৈরি হয় না। ফলে শিশু জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ হয়। এ হেন নিপুণ নিজের মতো মানুষজনের অধিকারের দাবিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালান। জানালেন, আগে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়বেন, কোনও দিন কল্পনাও করেননি।
জানালেন, বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছিলেন হোলিতে ওই রেস্তোরাঁয় নৈশভোজ সারবেন। সেই মতো গত কাল নিপুণের ন’জন বন্ধু পৌঁছে গিয়েছিলেন আগেই। বন্ধুদের এক জন গিয়ে হোটেলের ম্যানেজারকে জানান, হুইলচেয়ারে করে তাঁদের এক বন্ধু আসবেন। তাঁকে যেন নির্দিষ্ট টেবিলে আসতে সাহায্য করা হয়।
নিপুণের দাবি, “এ কথা শুনতেই ম্যানেজার পাল্টা প্রশ্ন করেন। বন্ধু কি কোনও ভাবে জখম হয়েছেন, নাকি প্রতিবন্ধী? উত্তরটা পাওয়ার পর ম্যানেজার সাফ জানিয়ে দেন, রেস্তোরাঁয় এমন কোনও ব্যক্তিকে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি নেই।”
বিস্মিত বন্ধুরা এর পর নিপুণকে ফোনে সবটা জানান। বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। ভাইকে নিয়ে পৌঁছে যান রেস্তোরাঁয়। যদিও বিস্ময়ের তখনও বাকি ছিল। নিপুণ পৌঁছনোর আগেই এক প্রস্ত বাদানুবাদ হয়ে গিয়েছিল। তিনি যেতেই নিরাপত্তারক্ষী হুইলচেয়ার ধরে টেনে বের করে দিতে যান রেস্তোরাঁ থেকে।
তবে পরে ম্যানেজার যুক্তি বদলে বলেন, হোলির দিন লোকজন নেশা করে রেস্তোরাঁয় খেতে আসেন। তাই একসঙ্গে একটা বড় দলকে প্রবেশের অনমুতি দেওয়া হয় না। নিপুণ অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তাঁর ন’জন বন্ধু ইতিমধ্যেই রেস্তোরাঁর ভিতরে রয়েছেন। তাঁরা কী ভাবে ঢুকলেন? আর সে ক্ষেত্রে তাঁকে ঢুকতে দিতে বাধা কোথায়? এর সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।
ঘটনা জানাজানি হতেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে সর্বত্র। ‘ডিস্যাবিলিটি রাইট গ্রুপ’-এর কর্ণধার জাভেদ আবিদি বলেন, “প্রতিবন্ধী আইন ১৯৯৫ ভঙ্গ হয়েছে এই ঘটনায়। কড়া শাস্তি হওয়া উচিত দোষীদের।” তৃণমূল নেতা ডেরেক’ও ব্রায়েন ব্যক্তিগত ভাবে নিপুণকে টুইটারে জানান, বিষয়টি সংসদে তোলা হবে। মালবিকা আইয়ার নামে এক স্বেচ্ছাসেবী কর্মী বলেন, “আমরা প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে অনেক কথা বলি। শিক্ষার অধিকার, চাকরির সুযোগ...। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনা স্পষ্ট করে দিল, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিবন্ধীদের সব চেয়ে বড় বাধা।”
নিপুণ অবশ্য এত কিছু চান না। বলছেন, “শাস্তি নয়। বরং আমি চাই ওঁরা নিঃশর্ত ভাবে ক্ষমা চান।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy