Advertisement
E-Paper

উপভোগ্য সঙ্গীতানুষ্ঠান

উত্তম মঞ্চে দু’দিন ব্যাপী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সঙ্গীত পিয়াসী। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহু বিশিষ্ট শিল্পী এই দু’দিন কণ্ঠসঙ্গীত এবং তালবাদ্যের সমন্বয়ে শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দিলেন।

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

উত্তম মঞ্চে দু’দিন ব্যাপী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সঙ্গীত পিয়াসী। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহু বিশিষ্ট শিল্পী এই দু’দিন কণ্ঠসঙ্গীত এবং তালবাদ্যের সমন্বয়ে শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দিলেন।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধ জমিয়ে রেখেছিল খুদে শিল্পীরা। শৌর্যাভ চক্রবর্তী ও রিমেক মুখোপাধ্যায়ের তবলাবাদন, সৌভাগ্য কর্মকারের সেতারবাদন এবং আর্য বণিকের কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশনা ছিল চমৎকার। বিশেষ করে বলতে হয় আর্য বণিকের কথা। কণ্ঠের দৃপ্ত ভঙ্গি এবং নির্ভীক উপস্থাপনায় ইমনের রাগরূপ ফুটিয়ে তুলেছিল সে। পরবর্তী শিল্পী সুচেতা গঙ্গোপাধ্যায় শোনালেন রাগ যোগকোশ। তাঁকে তবলায় সহযোগিতা করেছেন শমীক ভাদুড়ি এবং হারমোনিয়ামে রূপশ্রী ভট্টাচার্য। বিলম্বিত এবং দ্রুত খেয়াল পরিবেশনায় সুচেতার অনুশীলিত কণ্ঠের ঝলক পাওয়া গেল। সুচেতা অনুষ্ঠান শেষ করলেন মিশ্র কৌশিক ধ্বনি রাগে একটি দাদরা শুনিয়ে। সে দিনের অনুষ্ঠানের শেষতম নিবেদন ছিল ‘খণ্ডম্’। উপস্থাপনায় তন্ময় বসু এবং তাঁর ব্যান্ড ‘তালতন্ত্র’। রাগ চন্দ্রকোষে পরিবেশনাটিকে সাজিয়েছিলেন তাঁরা।

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হল নীলাঞ্জনা-শীলাঞ্জনার দ্বৈত কণ্ঠসঙ্গীত দিয়ে। তাঁরা শোনালেন দক্ষিণী রাগ ধর্মাবতী, একতালে নিবদ্ধ বিলম্বিত এবং তিনতালের দ্রুত বন্দিশ। তবলায় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন উজ্জ্বল ভারতী এবং হারমোনিয়ামে দেবপ্রসাদ দে। যৌথ গায়নের একটি অত্যাবশ্যক শর্ত পারস্পরিক বোঝাপড়া। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনার ক্ষেত্রে তা যথাযথ রূপে রক্ষা করা সহজ নয়। নীলাঞ্জনা-শীলাঞ্জনার পরিবেশনায় সেই সমন্বয়ের অভাব ছিল। তাঁদের দ্বৈত নিবেদন স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। দু’জনের কণ্ঠেই জড়তা ছিল। রাগের চলনও কিছুটা একঘেয়ে ঠেকেছে। দ্রুত লয়ে তানকারির সময়ে শিল্পীরা তাল থেকে বিচ্যুতও হয়েছেন দু’-এক বার। তাঁদের শেষ নিবেদন ছিল বেনারস ঘরানার একটি ঝুলা। তুলনায় এই পরিবেশনাটি মন ছুঁয়েছে। পরবর্তী নিবেদনও ছিল একটি যৌথ উপস্থাপনা— দেবপ্রিয় অধিকারীর কণ্ঠসঙ্গীত ও সমন্বয় সরকারের সেতারবাদন। শোনালেন মল্লার এবং জয়জয়ন্তীর সংমিশ্রণে তৈরি রাগ জয়ন্ত মল্লার। তাঁদের পরিবেশনা মোটের ওপর উপভোগ্য। তবে দেবপ্রিয় অধিকারীর গায়ন একটু নিস্তরঙ্গ ছিল। দ্রুত লয়ে তানবিস্তারের সময় গমক কিংবা মুড়কির কাজ সে ভাবে পাওয়া গেল না তাঁর গলায়। সঙ্গতকার হিসেবে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের তবলাবাদন বেশ ভাল লেগেছে। দেবপ্রিয়-সমন্বয় অনুষ্ঠান শেষ করলেন কিরওয়ানি রাগে জনপ্রিয় দাদরা ‘তুম বিন নিন্দ না আয়ে’ শুনিয়ে। নয়ন ঘোষ এবং তাঁর পুত্র ঈশান ঘোষের তবলাবাদন মন্দ ছিল না। রীতেশ মিশ্র এবং রজনীশ মিশ্র শোনালেন বসন্ত মুখারি রাগে বিলম্বিত এবং দ্রুত বন্দিশ। একতালের বিলম্বিতটি খুব যত্ন সহকারে গেয়েছেন দুই শিল্পী। পারস্পরিক তালমেল তাঁদের উপস্থাপনাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। রীতেশ-রজনীশ দু’জনের কণ্ঠই বলিষ্ঠ, গায়নও সুনিয়ন্ত্রিত। অনুষ্ঠান শেষ করলেন তাঁরা একটি ভজন শুনিয়ে। তবলায় তাঁদের সহযোগিতা করেছেন কুমার বসু ও ধরমনাথ মিশ্র। সরোদবাদনে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করলেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর পুত্র ইন্দ্রায়ূধ মজুমদার। তবলায় তাঁদের সঙ্গ দিয়েছেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পুত্র অর্চিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বাজালেন রাগ মিয়াঁ কি মল্লার। সুনিয়ন্ত্রিত আলাপ-জোড়-ঝালার পরে বিলম্বিত, মধ্যলয় এবং দ্রুতলয়ে তিনটি গৎ পরিবেশন করলেন তাঁরা। বিলম্বিত এবং মধ্যলয়ের গৎটি ছিল একতালে নিবদ্ধ, দ্রুতলয়ে শোনালেন তিনতালের গৎ। তবলার যথাযথ সঙ্গতে তাঁদের সম্মিলিত উপস্থাপনাটি আরও সুন্দর হয়ে উঠেছিল। ইন্দ্রায়ূধ এবং অর্চিকের সওয়াল-জবাব উপভোগ করেছেন শ্রোতারা। জিলা কাফি রাগের পরিবেশনাও ভাল লেগেছে।

চিত্রিতা চক্রবর্তী

concerts Music
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy