Advertisement
E-Paper

বেশির ভাগের মধ্যেই কিছু করার তাগিদ ছিল

স্নাতক স্তরে অনেকে পেন্টিং নিয়ে পড়লেও, স্নাতকোত্তর পর্বে সকলেই শিল্প-ইতিহাস নিয়ে উত্তীর্ণ। এমনই বারো জন শিল্পী ‘আর্টিজ়ান’ নামে প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে

পারম্পরিক: ‘আর্টিজ়ান’ প্রদর্শনীর কয়েকটি কাজ। সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে

পারম্পরিক: ‘আর্টিজ়ান’ প্রদর্শনীর কয়েকটি কাজ। সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share
Save

স্নাতক স্তরে অনেকে পেন্টিং নিয়ে পড়লেও, স্নাতকোত্তর পর্বে সকলেই শিল্প-ইতিহাস নিয়ে উত্তীর্ণ। এমনই বারো জন শিল্পী ‘আর্টিজ়ান’ নামে প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। গ্রামীণ লৌকিক শিল্প ও কুটির শিল্পের ধারাবাহিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকা কারিগরেরা বংশ পরম্পরায় ও বাজারি চাহিদার শর্তে কাজ করে থাকেন, তাঁদেরই আর্টিজ়ান নামে অভিহিত করা হয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনো এই চিত্রকরেরা কোনও দল তৈরি করে হঠাৎ এমন একটি নাম দিলে কিছুটা খটকা লাগে। কেননা কারও কাজেই লোকশিল্পের প্রত্যক্ষ প্রভাব কাজ করেনি। কেউ কেউ নিজস্ব একেকটি স্টাইল তৈরিরও চেষ্টা করেছেন এবং সে দিক থেকে কিছু দুর্বলতাও চোখ এড়ায়নি। যদিও শিক্ষকতা ও সংসার সামলে অবিরাম চিত্রচর্চার মধ্যে না থাকতে পারলেও, বারো জনের মধ্যে আট জন মহিলা শিল্পীর এই উদ্যম যথেষ্ট প্রশংসনীয়, তাতে সন্দেহ নেই।

‘দ্য মোস্ট প্রেশাস মোমেন্টস অব মাই লাইফ’ শীর্ষক ২০টি ছোট বোর্ডের উপরে মিশ্র মাধ্যমের কাজে রোজ়ালিনা দে তাঁর মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। নির্দিষ্ট কিছু মুহূর্তের উপস্থাপনায় পশুপাখি, জন্তু ও মানব-শরীরের চমৎকার বাঙ্ময় প্রতিচ্ছবি।

জল রং ও কালিতে ডিজ়াইনধর্মী কয়েকটি প্রতীকী সচিত্রকরণের মতো কাজ করেছেন মৌসুমী ঘোষ। তুলনায় কালি-কলমের সাদাকালো সরীসৃপ-প্রধান ড্রয়িংগুলি মনোরম।

গুটিয়ে কুঁকড়ে ওঠা শুঁয়োপোকার মতো ফর্মগুলি কিছুটা আলঙ্কারিক প্যাটার্ন ও ডিজ়াইনে এবং পেন-ইঙ্ক ও জল রঙে চিত্রিত করেছেন মুনমুন বন্দ্যোপাধ্যায়। পেন-ইঙ্কের ব্যবহার ও ছায়াতপ নিয়ে বেশ ভাল লাগে ওঁর কাজ।

উজ্জ্বল ও অনুজ্জ্বল রঙের দুর্বল ক্যানভাস ঝর্না চট্টোপাধ্যায়ের। ওঁর পুরনো কাজের মলিনতা চোখে লাগে।

পুরনো রেকর্ড কভারের ছবি, মুদ্রিত বাক্যাংশ, কোলাজ ও অয়েল প্যাস্টেলের মিশ্র মাধ্যমে গুপ্ত কথা ও সুখী গৃহকোণ নিয়ে ছবি করেছেন দেবদত্ত গুপ্ত। কোথাও নিজের বিবাহের আমন্ত্রণপত্রের লাইনও ব্যবহৃত। ছবি হিসেবে দাগ কাটেনি। প্রমা বসু কিছু পুরনো কাজ দিয়েছেন। নিসর্গকে বিমূর্তায়িত করেছেন মৌমিতা দাস মণ্ডল। অ্যাক্রিলিক ও ক্যানভাসে তাঁর প্রকৃতি উন্মোচনের অন্তরালে এক ধরনের রহস্য ও অলৌকিকত্ব কাজ করেছে। আকাশ, গাছ ও জমির বিন্যাসকে ভেঙেছেন রঙের ও নিজস্ব ফর্মের অস্বাভাবিক উপস্থাপনায়। তৈরি হয়েছে এক অন্য রকম বাতাবরণ, যা নিসর্গের অমন রঙিন আবহে দর্শককে সহজেই টেনে নিয়ে যায়। ক্যানভাসের টেক্সচারকেও এখানে চমৎকার কাজে লাগানো হয়েছে।

‘কাট উইং টু’ এবং ‘কাট উইং থ্রি’ কাজ দু’টিতে কয়েকটি পরিসর তৈরি করে, রেখা ও ছায়াতপের চতুর্দিকে ছড়ানো ছিটানো ছিটকাপড় আটকে, অদ্ভুত এক ধরনের পরিপ্রেক্ষিত ও ডায়মেনশন তৈরি করেও যত্রতত্র গুচ্ছের পাখির পালক আটকে ছবির গুণটুকু খর্ব করেছেন সুমনা দত্ত। শূন্য স্পেসকে অন্যান্য অনুষঙ্গ দিয়ে ভরানোর সুযোগ ছিল। ‘মানব জমিন রইল পতিত’ কাজটিতে অন্য ভাবে আবাদ করলে সোনা ফলতেই পারত।

কাগজে পেন অ্যান্ড ইঙ্কে জমাট কম্পোজ়িশন করেছেন সুমনা বিশ্বাস। জাগ, টি-পট, কাপ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তৃত ফুল, লতাপাতা, নকশা, আলঙ্কারিক বিন্যাসের এই রচনাটি সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। এখানে রঙের গাঢ়ত্ব, আপাতহালকা পরিসর ও নির্দিষ্ট বর্ণের পারস্পরিক বৈপরীত্যও চমৎকার। পর্ণা পুরকায়েত অনেক দিন ধরেই ছোট কাজে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। ড্রয়িংধর্মী পেন-ইঙ্ক এবং জল রঙে পোকামাকড়, সরীসৃপ, বহুরূপী, দোলনা, পাখি, অটো...কাজগুলিতে সূক্ষ্মতা রাখতে গিয়ে কেমন যেন সচিত্রকরণের মতো হয়ে গিয়েছে। যা ছোটদের জন্য মনোগ্রাহী।

বাংলাদেশের জান্নাতুল রায়হানার ‘ব্লু ক্রাই’ ছাপাই ছবির অনন্য নিদর্শন। উডকাট এবং শিনকোলে সমন্বিত কাজটিতে সূক্ষ্ম ঢেউয়ের আঁচড়ের ব্যঞ্জনা এক রকম নাটকীয় আবহ তৈরি করে সাঙ্গীতিক মূর্ছনার দিকে নিয়ে যায়। সেখানে রিভার্সের সাদা লাইনের সঙ্গে কালো, হাল্কা সবুজ ও ফ্লেশ টিন্টের মাঝে টুকটুকে লাল পাতাসদৃশ ফর্মেশনটি ছবিকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।

শুভঙ্কর মণ্ডল কাপড়,

সুতো, কাগজ, দড়ি, সেলাই, এমব্রয়ডারি, উল ইত্যাদি ব্যবহার করে তিনটি ম্যাসোনাইট বর্গক্ষেত্রের সুদৃশ্য ছোট্ট বিভাজনে খুপরি ঘরে সাজিয়েছেন গেরস্থালির টুকিটাকি। চমৎকার ভাবে বিন্যস্ত শিলনোড়া, সোফা, ধুতি-জামা, ঝোলা ব্যাগ, চশমা, পুতুল, বালতি, হাতা, কাপ-ডিশ, তোয়ালে, হাতপাখা এবং আরও নানা জিনিস। তবে ওঁর তুলো, কাপড় ও সেলাই সমন্বিত প্যাঁচানো হাতের ভাস্কর্যগুলি যেন আরও বেশি অসাধারণ!

Art Gallery Exhibition

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}