Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শরীর আগেই জানান দেয়। তাই স্পন্ডিলোসিসের লক্ষণগুলো বুঝে নিন। বললেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রামেন্দু হো

ব্যথাকে অবহেলা নয়

অনেক দিন ধরে ঘাড়ে অল্প-অল্প ব্যথা। কাঁধে একটা কনকনে ভাব। মাঝেমধ্যেই ঘাড়টা একবার নাড়িয়ে নিতে হচ্ছে। না হলে অস্বস্তি যাচ্ছে না। কখনও কখনও ব্যথাটা ছড়িয়ে যাচ্ছে নীচের দিকে। সাবধান! আপনি স্পন্ডিলোসিসের দিকে এগোচ্ছেন না তো?

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

অনেক দিন ধরে ঘাড়ে অল্প-অল্প ব্যথা। কাঁধে একটা কনকনে ভাব। মাঝেমধ্যেই ঘাড়টা একবার নাড়িয়ে নিতে হচ্ছে। না হলে অস্বস্তি যাচ্ছে না। কখনও কখনও ব্যথাটা ছড়িয়ে যাচ্ছে নীচের দিকে। সাবধান! আপনি স্পন্ডিলোসিসের দিকে এগোচ্ছেন না তো?

সোজা কথায়, স্পন্ডিলোসিস হল হাড়ে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্পন্ডিলোসিসের ক্ষেত্রে হাড়ে বয়সের ছাপ দেখা দেয় অনেক আগে। এমনকী কুড়ি-পঁচিশ বছরেও হতে পারে স্পন্ডিলোসিস।

কেন হয়

স্পন্ডিলোসিস হয় মূলত দু’টো অংশে। সার্ভিকাল মানে ঘাড়ের কাছে আর লাম্বার অঞ্চল বা কোমরে। মানুষের ঘাড় সবচেয়ে নরম। চার হাত-পায়ে হামাগুড়ি দেওয়া থেকে শিশু যখন দু’পায়ে দাঁড়ায়, তখন থেকেই ভালনারেবল হতে শুরু করে মেরুদণ্ড।

স্পন্ডিলোসিসের প্রথম ধাপ হল লর্ডোসিস। অর্থাৎ মেরুদণ্ড যখন তার স্বাভাবিক আকার হারাতে শুরু করে। পাশ থেকে দেখলে, আমাদের মেরুদণ্ড কিন্তু সোজা নয়। অনেকটা ধনুকের মতো বাঁকা। আর মাংশপেশি হল সেই ধনুকের ছিলা। মাংশপেশি দুর্বল হতে থাকলে মেরুদণ্ড তার স্বাভাবিক আকার হারাতে থাকে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় স্পন্ডিলোসিস।

যেমন ধরুন, একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, ক্রমাগত মাথা ঝুঁকিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ করে যাওয়া, এক ভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে টিভি দেখা, এমনকী মাথা ঝুঁকিয়ে হাঁটা... এগুলো সবই স্পন্ডিলোসিসের কারণ। শরীর সহ্য করতে না পেরে বিদ্রোহ করে। ব্যথার মাধ্যমে সেটাই আমাদের জানান দেয়। অনেক সময় আর্থ্রাইটিস বা টিউবারকুলোসিস থেকেও স্পন্ডিলোসিস হতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

সমস্ত রোগের শুরুই হয় ধীরে-ধীরে। কিন্তু মনে রাখবেন, শরীর ঠিক সেটা জানান দেবে। হয়তো হাঁচি দিতে গিয়ে বাঁ-দিকে তাকালেন। আর ঘাড় আটকে গেল। অথবা একটানা কাজ করছেন, কিন্তু ঘাড়ে একটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। থেকে থেকেই ঘাড়কে একটু নাড়িয়ে নিতে হচ্ছে। কিংবা ধরুন, মেয়েদের খোঁপার কাছটায় একটা চিনচিনে ভাব। খোঁপাটাকে অসম্ভব ভারী মনে হচ্ছে। এগুলো স্পন্ডিলোসিসের একেবারে প্রথম ধাপ। এই সময়ই ডাক্তার দেখান। এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করবেন না। অনেককে দেখি বারো-তেরো বছরের পুরনো ব্যথা নিয়ে আসেন। সেই ভুলটা অন্তত করবেন না। দেরি হলে, অপারেশন ছাড়া উপায় থাকবে না।

এড়াতে কী করবেন

মনে রাখবেন, স্পন্ডিলোসিস হল একটা লাইফস্টাইল ডিজিজ। তাই প্রথমেই আপনার জীবনযাত্রা ঠিক করতে হবে।

রাতের ঘুম সবচেয়ে জরুরি। ছ’ঘণ্টা হোক কি আট ঘণ্টা, ঘুমোতে হবে রাতে। একটা ভুল ধারণা আছে বালিশ ব্যবহার করা নিয়ে। কখনওই বালিশ ছাড়া ঘুেমাবেন না। সব সময় নরম একটা বালিশ নিন। আর ঘুম থেকে ওঠার সময় সোজা উঠবেন না। পাশ ফিরে উঠুন।

স্নান করা বা পুজোর সময় বসার জন্য একটা স্টুল ব্যবহার করুন। ইন্ডিয়ান টয়লেট ব্যবহার না করাই ভাল। বাড়িতে ওয়েস্টার্ন টয়লেট না থাকলে, একটা প্লাস্টিকের কমোড কিনে নিতে পারেন।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। একসঙ্গে বেড়াতে যান। বাচ্চার সঙ্গে খেলা করুন। কখনওই একটানা বসে টিভি দেখবেন না। ডাক্তারি ভাষায় বলে, স্পন্ডিলোসিস অনেকাংশে সাইকোসোমাটিক। ১৫ শতাংশই মানসিক। টেনশন খুব খারাপ রোগ। মন হাসিখুশি থাকলে, স্পন্ডিলোসিস ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না।

খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে নজর দিন। বেশি করে প্রোটিন খান। প্লাস্টিকের ডিমটিমের চিন্তা ভুলে ডিম খান। আমি তো নিরামিশাষীদেরও ডিম খেতে অনুরোধ করি। প্রোটিন হাড়কে শক্ত করে। ওটা শরীরের জন্য ভীষণ জরুরি।

শেষে বলি, প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটুন। পার্কে হোক কি জিমে, ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন। মনে রাখবেন, মোশন ইজ লোশন। রোগ সারানোর এর চেয়ে ভাল ওষুধ হয় না।

অনুলিখন: অরিজিৎ চক্রবর্তী

মডেল: শ্রীময়ী, মেকআপ: সায়ন্ত ঢালি, ছবি: অমিত দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE