Advertisement
০৫ মে ২০২৪

art exhibition: চারুবাসনায় শিল্পকলার ‘নন্দন উৎসব’

১৯৮৩-তে করা গোবর্ধন আশের গোয়াশটিতে জলরঙের স্বচ্ছতা ও নমনীয়তা দেখার মতো, রচনা হিসেবে অনন্যসাধারণ। স্বল্পবর্ণ, কিন্তু টেকনিক অসামান্য।

অতনু বসু
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫২
Share: Save:

বছরভর পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র কোনও না কোনও মেলা লেগেই আছে। কোনও উৎসবের অঙ্গ হিসেবে বা এমনিই। কলকাতার কিছু গ্যালারিও গত কয়েক বছরে চিত্রকলা, ভাস্কর্য, গ্রাফিক্স, সেরামিক, টেরাকোটা, সরাচিত্র মায় কার্টুন ইলাস্ট্রেশন, পুতুল পর্যন্ত নিয়ে ছোট-বড় নানা ধরনের আর্টমেলার আয়োজন করে। এখনও পর্যন্ত জনপ্রিয় ও আকর্ষক মেলা হিসেবে শিল্পরসিক, শিল্পীদের কাছেও ১৯৭৩-এ শুরু হওয়া শান্তিনিকেতন কলাভবন আয়োজিত ‘নন্দন মেলা’ই বিখ্যাত। এ মেলা শুরুর অনেক আগেই সেই সময়কার বহু প্রাতঃস্মরণীয় শিল্পী-ভাস্করের কাজ নাকি ‘বুক’ করে রাখতেন অনেক ছাত্রছাত্রী, এমনকি শিল্পী বা গ্যালারিও। পুরনো স্মৃতি-ইতিহাসকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘চারুবাসনা’ গ্যালারিতে ‘নন্দন উৎসব’ নামে দেড়শোর উপরে শিল্পবস্তুর প্রদর্শনী ও আর্ট মেলা।

প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের মধ্যে গোবর্ধন আশ, হরেন দাস, গোপাল ঘোষ, নিখিল বিশ্বাস, সোমনাথ হোর, কে জি সুব্রহ্মণ্যম, প্রকাশ কর্মকার, রবীন মণ্ডল, গণেশ পাইন, বিজন চৌধুরী, শর্বরী রায়চৌধুরীর কাজ যেমন ছিল, তেমনই বৃন্দাবন সোলাঙ্কি, গণেশ হালুই, সনৎ কর, লালুপ্রসাদ সাউ, লক্ষ্মা গৌর, যোগেন চৌধুরী, মনু পারেখ, অঞ্জলি এলা মেনন, আর বি ভাস্করন, এস জি বাসুদেব, শুভাপ্রসন্ন, ওয়াসিম কপূর ছাড়াও সমকালীন ও তরুণতর শিল্পীদের কাজও দেখা গিয়েছে। বৈচিত্র ও মাধ্যমগত দিক থেকে বহু কাজই মনে রাখার মতো।

১৯৮৩-তে করা গোবর্ধন আশের গোয়াশটিতে জলরঙের স্বচ্ছতা ও নমনীয়তা দেখার মতো, রচনা হিসেবে অনন্যসাধারণ। স্বল্পবর্ণ, কিন্তু টেকনিক অসামান্য। ১৯৪৯-এ করা হরেন দাসের সুগার অ্যাকোয়া টিন্টে মাঝখানের অনেকটা বাদামি-কমলা আলোর পটভূমিতে কালোতে করা বহু বাদ্যযন্ত্রীর ‘কনসার্ট’ অপূর্ব গ্রাফিক্স। যদুবংশ ধ্বংসের কাহিনির সামান্য উল্লেখ-সহ লিখিত অক্ষরমালার পাশে দুর্গা ও প্রতীক চিহ্নিত রূপ-সহ মানবের কিছু ড্রয়িং, কাটাকুটি, উপবেশন ভঙ্গির মুহূর্তগুলিকে কালো রেখায় অসাধারণ রূপ দিয়েছেন গণেশ পাইন, দু’টি পেন-ইঙ্কের কাজে। ২০১৩-তে করা তিনটি বর্ণে ছাড়া ছাড়া রূপবন্ধের ব্যবহারে ব্যাঘ্রাসীন দেবীমূর্তির ব্রাশ ড্রয়িংয়ে গাঢ় খয়েরি বর্ণের কাগজের পটভূমিতে কে জি সুব্রহ্মণ্যমের কাজটি ভীষণ আকর্ষক। সামান্য আলঙ্কারিক বিমূর্ততায় সরার উপর সাদাকালো অ্যাক্রিলিকের একটি মনোগ্রাহী কাজ করেছেন গণেশ হালুই। ছন্দের ভারসাম্য রক্ষাকারী রূপবন্ধগুলি পল্লবিত প্যাটার্নে আবদ্ধ। ইঙ্কে টেরাকোটা প্লেটের উপরে যোগেন চৌধুরী ছন্দোময় মৎস্যের আধাবর্তুল আবহে নিছক ব্রাশের ড্রয়িংয়ে যেন খেলা করেছেন। তাঁর ছোট্ট ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যটি প্রত্ন-লোকশিল্প-ট্রাইবাল আর্টকে মনে পড়ায়। পেন-ইঙ্কে অনেকটা স্পেস ছেড়ে শরীরের প্রত্যঙ্গের এক আশ্চর্য কম্পোজ়িশন করেছেন প্রকাশ কর্মকার, কালো রেখায়। সারল্যময় এই গভীরতা আচ্ছন্ন করে মনকে। মুখোশের মতো অ্যাক্রিলিকের মেলামেশায় একটি মুখ এঁকেছেন রবীন মণ্ডল। এস জি বাসুদেবের তিনটি অনবদ্য অয়েল অন ক্যানভাস-এ কোথাও সামান্য হলেও মনু পারেখকে মনে পড়ে। আদিত্য বসাকের আঠেরো হাত সম্বলিত অসুরদলনী দেবী, বিমল কুণ্ডুর সূক্ষ্মতর পেন-ইঙ্কের গাঁধী, ওয়াসিম কপূরের কালো কালিতে সরার উপর কপালে কণ্টকমুকুট সদৃশ দু’টি মুখ, সমীর আইচের কালো অ্যাক্রিলিকে করা ‘দেবী’, তাপস কোনারের মিশ্র মাধ্যমে অসাধারণ দু’টি সরা ড্রয়িং, শিপ্রা ভট্টাচার্যের সরায় করা রঙিন কাজটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ছত্রপতি দত্তর দু’টি সরা পেন্টিংই বেশ বলিষ্ঠ কাজ, চমকপ্রদও। পুলিশকর্মী তথা চিত্রকর জয়ন্ত পালের রঙিন আধাবিমূর্ত পেন-ইঙ্ক এবং কালো ইঙ্কের কাজটিও বেশ অন্য রকম। ভাল কাজ করেছেন অঞ্জলি এলা মেনন, অতীন বসাক, সনাতন দিন্দা, শেখ শাহজাহান, ডেভিড মালাকার, ছন্দক মজুমদার প্রমুখ।

দেবব্রত দে-র ভাস্কর্যগুলি মানবজীবনের টানাপড়েন, সময় কাটানোর মুহূর্ত, দৈন্য, অস্ফুট যন্ত্রণায় টেরাকোটার জীবন্ত মুহূর্ত। স্টাইলটিও বড় মনকাড়া, অন্তরঙ্গ। শর্বরী রায়চৌধুরীর ব্রোঞ্জের উড়ন্ত পাখি, সোমনাথ হোরের ব্রাশ ও সরু পেনের ড্রয়িংগুলি অসামান্য। অমল চক্রবর্তীর কিছু বিখ্যাত কার্টুন ও উদয় দেবের কার্টুন-ক্যারিকেচার সম্বলিত প্রতিকৃতি ও পুতুল মনোমুগ্ধকর। এ ছাড়াও মনু পারেখ, লক্ষ্মা গৌর, অখিলচন্দ্র দাস, শুভাপ্রসন্ন, সনৎ কর, প্রদীপ মৈত্র, জয়শ্রী চক্রবর্তী, চন্দ্র ভট্টাচার্য, বিজন চৌধুরী প্রমুখের কাজও অসাধারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE