Advertisement
১১ মে ২০২৪

মোবাইলের মাতলামি ছাড়াতে

এক মুহূর্ত সুইচ অফ মানে জীবনটাই ছারখার! মোবাইল-রোগ তাড়াতে কী করবেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী এক মুহূর্ত সুইচ অফ মানে জীবনটাই ছারখার! মোবাইল-রোগ তাড়াতে কী করবেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী

অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:১১
Share: Save:

মিনিটে-মিনিটে মোবাইলে চোখ, নতুন হোয়াটসঅ্যাপ নোটিফিকেশন এল কি না।

রেস্তোরাঁর টেবিলে হংকং নুডলস এলেই ইন্সটাগ্রাম। পোস্ট না করে মুখে তোলা যায়!

বড়দিনে সেন্ট পলস বা বছরশেষে পার্ক স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে প্রতি মিনিটে ফেসবুক আপডেট। কী করছি সেটা জানাতে হবে তো!

কিন্তু ছবিতে কিছু কম ‘লাইক’ পড়লে মন খচখচ। নেটওয়ার্ক না থাকলে পাগল পাগল অবস্থা।

মিলে যাচ্ছে নিজের সঙ্গে?

তা হলে নতুন বছরে রেজোলিউশন নিতে পারেন ডিজিটাল ডিটক্স। কিছু সময়ের জন্য ডিজিটাল দুনিয়া থেকে বিরতি।

‘‘মোবাইল নয়। মোবাইল ছাড়া চলবে না — এই আসক্তিটা সমস্যার। পরিভাষায় বিহেভরিয়াল অ্যাডিকশন। যার ফলে নজর দেওয়া হয় না প্রয়োজনীয় জিনিসে। বঞ্চিত হয় আপনজন। সমাধান একমাত্র ডিজিটাল ডিটক্স,’’ বলছিলেন ইন্সটিটিউট অব সায়কায়াট্রি-র অধিকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রদীপকুমার সাহা।

বিদেশে শুরু হয়ে গেছে ডিজিটাল ডিটক্স ক্যাম্প। যেখানে অনলাইনের নেশা কাটাতে মোবাইল জমা দিয়ে, নেটদুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে যাচ্ছে লোকে। সেলেনা গোমেজ, কেন্ডল জেনারের মতো সেলিব্রিটিরাও সেখানে।

এ দেশের অবস্থাও তেমনই। কলকাতাতেও ইন্সটিটিউট অব সায়কায়াট্রি চালু করতে চলেছে একটা ডিজিটাল ডিটক্স সেল।

সব সময় গুগল করবেন না

ফোনের সঙ্গে সব সময় আঠার মতো আটকে থাকতে থাকতে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়। পরে সেটাই চেহারা নেয় নেশার। এতটাই যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হলে শুরু হয় অস্বস্তি। নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে না বলে বাতিল করতে হয় অরুণাচল প্রদেশ বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা। সমস্যা এখানেই শেষ নয়। অনেকেই স্মার্টফোনকে ব্যবহার করেন একটা বাড়তি মস্তিষ্ক হিসেবে। তথ্য মনে রাখার দরকার নেই, গুগল করে নিলেই হবে। ফলে, দু’-তিনটের বেশি মোবাইল নম্বর মনে থাকে না। বন্ধুর জন্মদিন মনে রাখতে ভরসা করতে হয় ফেসবুক নোটিফিকেশনের ওপর।

‘‘সমস্যাটার মূলে দু’টো বিষয় রয়েছে। এক, ইন্সট্যান্ট গ্রাটিফিকেশন। অর্থাৎ যা চাইছি সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে পেতে হবে। না হলেই অ্যাংজাইটি। অন্যটা, ইনফরমেশন ওভারলোড। ইন্টারনেটের দৌলতে অপ্রয়োজনীয় অনেক তথ্যে ভরে যাচ্ছে মাথা। কিন্তু মাথার ক্ষমতার তো একটা মাত্রা আছে। তাই দরকারি জিনিস আর মাথায় থাকছে না। ডিজিটাল ডিটক্সের দরকারটা যে এখন সবাই বুঝছে, সেটা ভালই,’’ বলছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রিমা মুখোপাধ্যায়।

ফোনে না, মাথায় থাক

মোবাইল ছাড়া থাকব বললেই তো আর থাকা যায় না। ‘‘আমাদের পড়ানোও তো হয় ডিজিটাল মিডিয়ামে। ক্লাস শেষের পর পাওয়ার পয়েন্টের ফাইলটা আপলোড করে দেন স্যর। বাড়ি গিয়ে সেখান থেকে পড়ে নিই। প্রতিদিন ৬০-৬৫টা স্লাইড প্রিন্ট করা তো সম্ভব না। তাই অভ্যেস হয়ে গেছে। কাগজে লেখা নোটসও ছবি তুলে রেখে দিই ক্লাউডে। পরীক্ষার আগে নেটওয়ার্ক না থাকলে তাই আমি গন,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া রোশনি বসু।

‘‘সত্যিই এটা অসুবিধার। আমরা বড্ড বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছি টেকনলজির ওপর। অনেক বাবা-মা দুঃখ করেন বাচ্চার মনঃসংযোগের অভাব নিয়ে। আরে, হবে না কেন! ছোট বয়সেই যদি হাতে মোবাইল থাকে, আর সেখানে সেকেন্ডে সেকেন্ডে নোটিফিকেশন — বাচ্চা ফোকাস করবে কী করে? পার্কে দেখি বাচ্চারা বসে আছে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে,’’ বলছিলেন ডা. রিমা মুখোপাধ্যায়।

একটু অফলাইন হোন

কিন্তু জোর করে নেশা ছাড়াতে গেলে যেমন উইথড্রল সিনড্রোম হয়, অনলাইন নেশার ক্ষেত্রেও তো সেটা ঘটতে পারে। ‘‘অবশ্যই হতে পারে। হঠাৎ করে ছাড়া যাবে না। আস্তে আস্তে সাইকোথেরাপির সঙ্গে করতে হবে এই ডিটক্স,’’ জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রদীপকুমার সাহা।

মনোবিদদের পরামর্শ, সকালে বা বিকেলে হাঁটতে বেরোলে মোবাইলটা বাড়িতেই রেখে দিন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার সময় ফোন এরোপ্লেন মোড বা সায়লেন্ট করে দিন। ঘণ্টাখানেক নেটদুনিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকলে কোনও ক্ষতি হবে না।

সবসময় ‘অনলাইন’ থাকার ফলে মনটা কখনও বিশ্রাম পায় না। হার্ভার্ড আর অক্সফোর্ডে তাই ডিজিটাল ডিটক্সের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের চর্চা। যেখানে ‘অফলাইন’ হয়ে বাস্তব দুনিয়ায় মনঃসংযোগ করছেন।

নতুন বছরে তাই ডিজিটাল ডিটক্স আর মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের রেজোলিউশনটা নিয়ে দেখতে পারেন।

এখনও সময় আছে

• প্রথমে দিনের একটা সময় ঠিক করে নিন ডিজিটাল ডিটক্সের জন্য


• ওই সময়টায় মোবাইল ফোন-ট্যাব-ল্যাপটপ সব সুইচড অফ করে রাখুন


• বই পড়ুন, ছবি আঁকুন বা কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজানো অভ্যাস করুন


• বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলুন। অন্যের কথা মন দিয়ে শুনুন


• বাকি সময়েও ফোনের ইন্সট্যান্ট নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন


• দিনের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় লগ ইন করবেন না

পরামর্শ: ডা. রিমা মুখোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mobile phones
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE