Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সঙ্গীত সমালোচনা ২...

অভাবনীয় দক্ষতায়

‘ক্ষুধিত পাষাণ’। হৃদয়নাথ, করিম খাঁ ও মেহের আলির চরিত্রে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়রবীন্দ্রনাথের গল্প ভিত্তি করে তপন সিংহের চলচ্চিত্র ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, পরে কয়েকটি নাটকও বিভিন্ন সময়ে মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু শ্রুতি নাটকের মাধ্যমে যে এ রকম একটা গল্পকে আকর্ষণীয় ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তা সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে সারস্বত-র নিবেদনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে শ্রোতাদের কাছে। মূল সাতটি চরিত্র নিয়ে শ্রুতিনাটকের নাট্যরূপ গৌতম বণিকের। সতীনাথ মুখোপাধ্যায় একাই হৃদয়নাথ (কালেক্টর), করিম খাঁ ও মেহের আলির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একই কণ্ঠ দিয়ে তিনটি ভিন্ন চরিত্রের সংলাপ বলা। অসাধারণ।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

রবীন্দ্রনাথের গল্প ভিত্তি করে তপন সিংহের চলচ্চিত্র ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, পরে কয়েকটি নাটকও বিভিন্ন সময়ে মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু শ্রুতি নাটকের মাধ্যমে যে এ রকম একটা গল্পকে আকর্ষণীয় ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তা সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে সারস্বত-র নিবেদনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে শ্রোতাদের কাছে। মূল সাতটি চরিত্র নিয়ে শ্রুতিনাটকের নাট্যরূপ গৌতম বণিকের। সতীনাথ মুখোপাধ্যায় একাই হৃদয়নাথ (কালেক্টর), করিম খাঁ ও মেহের আলির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একই কণ্ঠ দিয়ে তিনটি ভিন্ন চরিত্রের সংলাপ বলা। অসাধারণ। তিনটিতেই উত্তীর্ণ সতীনাথ। স্তম্ভিত শ্রোতারা। করিম খাঁ-এর হিন্দি সংলাপ শুনে কে বলবে তা একজন বাঙালি শিল্পীর মুখনিঃসৃত। গলার উপরে অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ না থাকলে অতি চড়া পর্দায় মেহের আলির বারংবার আর্তনাদ ‘সব ঝুটা হ্যায়, তফাত যাও’ ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। হৃদয়নাথ চরিত্রের রোমান্টিকতা, কথায় কথায় কবিতা, গান আবেগঘন মুহূর্তের সংবেদনশীল অভিনয় সেখানেও সতীনাথ অনায়াস স্বতঃস্ফূর্ত। মুহূর্তে মুহূর্তে কণ্ঠের এই চকিত পরিবর্তন সত্যিই প্রশংসনীয়।

আলেয়া চরিত্রে নমিতা চক্রবর্তীর স্বরক্ষেপণও উল্লেখযোগ্য। কণ্ঠে এক অদ্ভুত মাদকতা ও রহস্যময়তা সাবলীল ভাবে ফুটে উঠছিল। বাকি চরিত্রগুলোতেও সুদক্ষ অভিনয়ের ছাপ। যত্নশীল ছিলেন বিমল কোনার, রবীন সেনগুপ্ত, অমিতা ঘোষ রায়।

ছোট ছোট পর্বের মাধ্যমে মূল গল্পের রহস্যময়তা, অতৃপ্ত প্রেমের কাহিনি ও বিয়োগান্তক আবহ নিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছিল। রাজা সেনগুপ্তের আবহ সঙ্গীতের প্রয়োগেও প্রশংসনীয় মুন্সিয়ানার ছাপ ছিল।

তিন প্রজন্মের যোগসূত্র
আরতি মুখোপাধ্যায়ের গান এখনও কত নস্টালজিক

ইন্দুমতী সভাগৃহে ‘অন্বেষা’র আয়োজনে গানে, কবিতায় ও আড্ডায় অংশ নিলেন তিন প্রজন্মের বিভিন্ন শিল্পী। আরতি মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানগুলি এখনও যেন ফেলে আসা দিনগুলির সেই নস্টালজিক অনুভূতি ফিরিয়ে আনে বারবার। শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল ‘নাই রস নাই, দারুণ দহনবেলা’, ‘তখন তোমার একুশ বছর প্রায়’ প্রভৃতি গানগুলি এখনও এই প্রজন্মে কত সমাদৃত। এ দিন গান শোনালেন অন্যান্য শিল্পীরাও। সুতপা চৌধুরীর ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে’ ও নন্দিনী ভট্টাচার্যের ‘আমায় রাখতে যদি’ প্রশংসনীয়। তানিয়া দাসের অনুভবী কণ্ঠে স্বল্পশ্রুত রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘বুঝি ও সুদূরে’, সুছন্দা ঘোষের সুরঋদ্ধ নিবেদনে ‘এসো আমার ঘরে এসো’ এ দিনের বিশেষ প্রাপ্তি। সুলগ্না বসুর পরিণত নিবেদন ‘কখনও আমার মাকে’ আবৃত্তির গণ্ডি পেরিয়ে শ্রোতাদের মনকে ছুঁয়ে যায়। এছাড়া গানে সুদীপ্তা বর্মন, অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায় ও সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, একক আবৃত্তিতে কৃষ্ণা মজুমদার ছিলেন যথাযথ। সায়ন্তনী দাশগুপ্তের ‘আমার আপন চেয়ে’ ও কমলিকা চক্রবর্তীর ‘জোছনা করেছে আড়ি’ শ্রোতাদের প্রত্যাশা বাড়ায়। আইরিন সরকারের ‘সুন্দরী কমলা নাচে’ শ্রোতাদের মন সত্যিই নাচিয়ে তোলে। সন্ধ্যাশ্রী দত্তের নিবেদনে ‘তোমার দেওয়া অঙ্গুরী’ বিশেষ প্রশংসনীয়। সঞ্চালনায় সুপ্রকাশ মুখোপাধ্যায়।

সৃষ্টি ও নারী

আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত ‘সৃষ্টি ও নারী’ অনুষ্ঠানটির শুরুতেই ঈশিতার দাস অধিকারীর প্রথম নিবেদনে ছিল ‘পৃথিবী’। সেই কবিতার ভাবনায় সুপর্ণা ঘোষ গাইলেন ‘ওগো মা ভুবনেশ্বরী’। ‘বলো যদি মেঘ হই’ কবিতার সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রগীতি ‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই’। ‘নাচনী’ কবিতাতে ঈশিতা শোনালেন ‘এখন কি আর নাগর’। সুপর্ণা গাইলেন রজনীকান্ত সেনের ‘আমরা রাঁধিয়া বাড়িয়া’, রবীন্দ্রনাথের ‘হোরিখেলা’ কবিতার সঙ্গে ‘রং লাগালে বনে বনে’ সুন্দর পরিবেশন।

নৃত্যে ছিলেন রুমেলা চট্টোপাধ্যায়।

হে পান্থ তুমি
শিখা বসু

সম্প্রতি জি ডি বিড়লা সভাঘরে ‘সৃষ্টি পরিষদ’ ও ‘নব রবি কিরণ’ নিবেদন করেছিল ‘হে চিরনতুন’। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনায় ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। এর পরে একক গানে ছিলেন শাশ্বতী সেনগুপ্ত। তিনি শোনালেন ‘তুমি বাহির থেকে ছিলে’, ‘বলো সখী বলো’ প্রভৃতি গানগুলি। তবে এ দিনের উল্লেখযোগ্য গান হল ‘হে পান্থ তুমি পান্থ জনের সখা হে’।

ওগো নাও বাইয়া যায়

‘তরণী মাঝির ঘাটে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে শোনা গেল ভাটিয়ালি গান যা শ্রোতাদের কাছে বেশ অভিনব এবং আনন্দদায়ক। শিল্পীরা যে গানগুলি নির্বাচন করেছিলেন তা সচরাচর শোনা যায় না। ‘মাঝি যখন নৌকা চড়ে, দুই হাতে বৈঠা ধরে’ গাইলেন নাজমুল হক। শিল্পীর গানের শেষ পর্বে ছিল রাগমিশ্রিত এক অদ্ভুত আলাপ। যা ওই দিনের পরিবেশে বেশ মানানসই ছিল। দীপান্বিতা আচার্য গাইলেন ‘ওগো নাও বাইয়া যায়’। এ ছাড়াও গাইলেন বিমল দে ‘সেলাম চাচা, সেলাম তোমার পায়ে’। ঋষি চক্রবর্তী ‘সোনা বন্ধু রে’, মৌমিতা বৈরাগী ‘পদ্মা নদীর নাইয়া রে’, প্রাণেশ সোম ‘মাঝি বাইয়া যাও রে’ গেয়ে প্রশংসা কুড়োলেন।

লালপাহাড়ির গান

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ‘হৃদকমল’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে লোকগান গাইলেন দেব চৌধুরী ও সহজিয়া। বাউল, ফকির, দরবেশি, সুফি, ভাওয়াইয়া সহ অন্যান্য প্রদেশের লোকগানও গাইলেন তাঁরা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রসের গৌর’, ‘হৃদমাঝারে রাখব’, ‘সোহাগ চাঁদ বদনী’ প্রভৃতি গান। লালপাহাড়ির কবি অরুণ চক্রবর্তীর ‘মন দে যৌবন দে’ গানটির সময় তিনিও কণ্ঠ মেলালেন মঞ্চে। পরবর্তী পর্যায়ে দেব চৌধুরী শোনালেন তাঁর নিজের লেখা সুরে দশটি গান।

রাবীন্দ্রিক গায়কি

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে বাসবী বাগচির কণ্ঠে শোনা গেল রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি গান। প্রথমেই তিনি গাইলেন ‘পূব হাওয়াতে দেয় দোলা’। দ্বিতীয় গানটি ছিল ‘আমি কী গান গাব’। রাবীন্দ্রিক গায়কি পূর্ণমাত্রায় রক্ষা করে এবং শান্তিনিকেতনী ধারার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে শিল্পী তাঁর প্রত্যেকটি গানেই শ্রোতাদের সুনাম কুড়িয়েছেন। শিল্পীর কণ্ঠে এ দিন উল্লেখযোগ্য গান ছিল ‘বহুযুগের ওপার হতে’, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’। অনুষ্ঠান শেষ হয় শিল্পীর ‘আমার দিন ফুরালো’ গানটি দিয়ে।

প্লাবন যখন চোখে

অবনীন্দ্র সভাগৃহে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল কাব্য সঙ্গীতের সংক্ষিপ্ত আয়োজন। অনুষ্ঠানটিতে আধুনিক গান শোনালেন দেবারতি মিত্র। তাঁর নির্বাচনে ছিল প্রথম গান ‘প্লাবন যখন চোখের পাতায়’। সুর ও ভাবের প্রকাশে গানটি এক অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। এ ছাড়াও অন্যান্য আধুনিক গানগুলিতে পাওয়া গেল শিল্পীর নিজস্ব ঘরানার প্রতিফলন। অনুষ্ঠানটির শেষে ছিল সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রদানের পালা। এ দিন কলকাতার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

music
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE