বিশ্বায়নের যুগে আমাদের ‘দেশাত্মবোধ’ কি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে? আমরা কি ক্রমশ ভুলে যাচ্ছি তাঁদের কথা, যাঁদের জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি? এমনই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে রাগ অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ একাডেমি একটি সুন্দর সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন আইসিসিআর-এ। স্বাধীনতার নামে তো স্বেচ্ছাচারিতা চলতে পারে না। আদর্শ নাগরিক হয়ে ওঠার জন্য শৈশব থেকেই তাদের সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে বাবা-মায়ের প্রেরণাতেই। এমনই বার্তা-সংবলিত অনুষ্ঠানটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল ‘চেতনা’। বন্দেমাতরম দিয়ে শুরু। সম্মেলকের পরেই কথার বাণী, ‘যেদিন সুনীল জলধি হইতে উঠিলে জননী ভারতবর্ষ....’। বা ‘ভারত বালোঁ অব্ না বাঁটো/ বাতেঁ প্যার কী, অব তো করো....’।
এ দিন শুরুতেই অনুষ্ঠানের পরিকল্পক ও নির্দেশক স্মৃতি লালা সংবর্ধনা জানান বিজ্ঞানী অধ্যাপক বিকাশ সিংহ এবং দীপক ঘোষকে। তাঁর দাবি, স্বাধীনতার এই চেতনা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হবে যখন সেই সব আত্মত্যাগীদের স্মরণ করবে মানুষ। অনুষ্ঠানের মূল স্ক্রিপ্টে পর পর সাজানো হয়েছিল গান, কবিতা ও কথা-মালা। যেমন, ‘অন্তর মম বিকশিত করো/ অন্তর তর হে, নির্মল করো উজ্জ্বল করো/ সুন্দর করো হে....’। গান ও সুরে সেই অনুভব প্রতিধ্বনিত হয়, ‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী, উঠ আদি জগৎ-জন-পূজা, দুঃখ দৈন্য সব নাশি, কর দূরিত ভারত-লজ্জা....। এ সব দেশাত্মবোধক গান এখন তো বেশি শোনাই যায় না। এ দিন শুনতে শুনতে কেমন মনের অজান্তে শিহরন জেগে ওঠে। সবচেয়ে ভাল লেগেছে, প্রবীণদের পাশাপাশি নবীন প্রজন্মও এই গান শুনতে এসেছেন দেখে।
‘তুঁ হামারা দিলকি রোশনি, তুঁ হামারা জান, মেরা সোনেকি হিন্দুস্থান।’ অথবা ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে, সার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালবেসে।’
এমনই আবেগ প্রতিটি পর্বে। স্বাধীনতা দিবসের সেই শৈশব যেন ফিরে আসে কথার ফাঁকে। ‘... মরতে হবে পরের তরে/ করতে হবে আত্মদান/ ভুলতে হবে নিজের সুখ/ পরের দুঃখে কাঁদুক প্রাণ....’। স্মৃতি লালার সঙ্গে অন্য শিল্পীরা সম্মিলিত ভাবে গাইলেন ‘আমরা বাঁধন ছেঁড়ার জয়গানে, নির্মম নির্ভীক উদ্দাম উচ্ছল, নেই কো পিছিয়ে যাবার ভয় প্রাণে, দুরন্ত দুর্মদ দুর্বার উজ্জ্বল, আমরা....’। এই গান এখনও এত টানে শ্রোতাদের? ঠাসা মঞ্চের প্রায় সকলেই কণ্ঠ মেলালেন, যা সচরাচর দেখা যায় না। ‘লক্ষ প্রাণের দুঃখ যদি, বক্ষেরে তোর বাজে, মূর্ত করে তোলরে তারে, সকল কাজের মাঝে...’ বা ‘এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন, এক কার্যে সঁপিয়াছি সহস্র জীবন, বন্দেমাতরম...’। শেষ হয় ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা...’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট বিচারপতি অমিতাভ লালা-সহ অনেকেই।
মঞ্চসজ্জা ও আলোর ব্যবহার অনুষ্ঠানটির মাধুর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
হে মোর দেবতা
চৈতী ঘোষ
সম্প্রতি উত্তমমঞ্চে সৃজনছন্দের ‘হে মোর দেবতা’ পরিবেশিত হল। রাজীব ভট্টাচার্যের পরিচালনায়। বেদ ও উপনিষদের শ্লোক, গীতাঞ্জলির কবিতা ও রবীন্দ্র-গানের সঙ্গে ওড়িশি নৃত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন দর্শকদের মুগ্ধ করে। জীবনের উত্থান-পতনের যন্ত্রণা থেকে একমাত্র আধ্যাত্মিকতাই মনকে দিশা দেখায়—এই ছিল মূল বিষয়। ‘জগৎ জুড়ে উদার সুরে’, ‘কবে আমি’ প্রভৃতি গানের সুচারু ব্যবহার, বিশেষত ‘মেঘের পরে’ গানটির মাধ্যমে জীবনের আলো-আঁধারের খেলার ব্যঞ্জনা মূর্ত হয়ে ওঠে। অবশেষে আসে আত্মসমর্পণের পালা। ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার’ গানটির সঙ্গে রাজীবের সুন্দর মুখজ অভিনয় মনে রাখার মতো। সঞ্চালনায় ছিলেন ঊর্মিলা ভৌমিক।