Advertisement
০৩ মে ২০২৪
নাটক সমালোচনা...

ঘটনা যেন আজকের

‘আরব্য রজনী’ নাটকটি দেখে এমনই মনে হয় মনসিজ মজুমদার-এরবাংলা মঞ্চকে যে সব সাম্প্রতিক বিষয় আকৃষ্ট করতে পারে তার মধ্যে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা অন্যতম। এ রকম ঘটনার ইদানীং বাহুল্য ও প্রাত্যহিকতা নানা প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি করছে— সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিবাদ, আবার ‘ছিল-আছে-থাকবে’-র সাফাই।

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

বাংলা মঞ্চকে যে সব সাম্প্রতিক বিষয় আকৃষ্ট করতে পারে তার মধ্যে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা অন্যতম। এ রকম ঘটনার ইদানীং বাহুল্য ও প্রাত্যহিকতা নানা প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি করছে— সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিবাদ, আবার ‘ছিল-আছে-থাকবে’-র সাফাই। এমনই বিষয় ইন্দ্ররঙ্গের প্রযোজনা অপেরার মতো নাটক ‘আরব্য রজনী’র। (রচনা ও পরিচালনা: উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়)। প্রযোজনার বিষয় ও আখ্যান কাঠামো ‘ছিল-আছে’-র মতোই, কিন্তু ‘থাকবে’ কিনা তা নিয়েই নাটক একটি নিটোল কমেডি।

সাজপোশাকে মঞ্চে বর্ণাঢ্য আরব্য রজনীর মতো গল্প, কিন্তু ঘটনা আজকের। তাই আধুনিক কবিরাজের বিধানমত নিঃসঙ্গ নায়ক বাঁদী কেনে স্যুটেড বুটেড দালালের কাছ থেকে। এই ‘ছিল আছে’-র কাঠামোয় নাটকের শুরু। নেশায় বুঁদ নায়ক এখন শেহেরজাদা, সংলাপে তার আধিপত্যের পৌরুষ। বাঁদী তাকে গল্প শোনায়। গল্প অপছন্দ হলে বাঁদীকে ধর্ষণ, খুনের হুমকি দেয়। বাঁদী ফুলটুসির গল্প বলায় বাদ সাধে নায়ক নিঃস্ব। নায়ক-নায়িকার নাটকীয় দ্বন্দ্বের হাতিয়ার নিজের নিজের গল্প। ফুলটুসির গল্পে আছে মায়া, ভালবাসা ও সুখের পরিণতির অভিমুখ। নিঃস্ব সে অভিমুখ পাল্টে দিয়ে গল্পে আনতে চায় স্বার্থপরতা, বিদ্বেষ ও নৈরাশ্যের পরিণতি। আশাবাদী ফুলটুসি ‘ছিল-আছে’-র অন্ধকার থেকে যেতে চায় আলোয়, আশাহীন নিঃস্ব জানে অন্ধকারই ‘থাকবে’। শেষ পর্যন্ত ফুলটুসি তার পূর্ণ যৌবনের উচ্ছল প্রাণময়তায় ‘ছিল-আছে-থাকবে’-র চিরসত্যকে মিথ্যে প্রমাণ করে নিঃস্বের নিঃস্বতাকে পূর্ণতায় ভরে দেয়। নাচ, গান, সংলাপ, মঞ্চসজ্জা (হিরণ মিত্র), সঙ্গীত (রূপঙ্কর) সব নিয়ে আদ্যন্ত বর্ণময় পরিচ্ছন্ন প্রযোজনা। তূর্ণা দাশের জীবনমুখী ফুলটুসি সহস্র ফুলঝুরির আলোর মতো প্রাণপ্রাচুর্যের ফোয়ারা। তার পাশে গৌতম হালদারের নিঃস্ব নিতান্তই নিঃস্বতায় ম্রিয়মাণ। গৌতমের অভিনয়ে নিঃস্ব এক উৎকেন্দ্রিক ব্যক্তি-চরিত্র। তাতে নেই স্বাভাবিক পুরুষের ধর্ষকামী আধিপত্য প্রবণতা। তূর্ণা এই প্রযোজনার অন্যতম সম্পদ কিন্তু প্রযোজনার সাফল্য অন্যান্য কুশিলবের সংহত সমবেত অভিনয়ে।

দুই রূপে বিনোদিনী

দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়

রামকৃষ্ণ ও গিরিশ ঘোষের মঞ্চশিষ্য বিনোদিনীর (১৮৬৩-১৯৪১) সার্ধশতজন্মবর্ষ। বর্তমানে বিনোদিনী কোনও একক চরিত্র নয়, অভিনেত্রী জীবনের সামগ্রিক প্রকাশ। যা এক অবহেলিত ইতিহাস বা ইতিহাসের অবহেলা। সম্প্রতি ‘গোবরডাঙা নক্সা’র মঞ্চ প্রযোজনা ‘বিনোদিনী— এ উওম্যান এ হিউম্যান’-এ যেন তারই প্রতিফলন। মৈনাক সেনগুপ্তের নাট্যরূপে পরিচালনা করেছেন আশিস দাস।

প্রথাগত মঞ্চনাট্য-ধারায় পরিবেশন না করে নাটকীয় একক সংলাপের স্বতন্ত্র আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয়েছে এই বিনোদিনী-চরিত্র। মঞ্চে মুখোমুখি দাঁড়ায় এক বিনোদিনী— প্রৌঢ়া আর যুবতী দুই বেশে। মঞ্চের পর্দা সরে কর্ণার্জুনের দর্শক প্রবীণা বিনোদিনীর স্মৃতি সারণিতে। প্রবীণার সামনে ফেলে আসা জীবন-যৌবন নিয়ে হাজির হয় তন্বী বিনোদিনী। তাঁর আপন স্মৃতি নির্ভর ‘আমার কথা’ আর ‘আমার অভিনেত্রী জীবন’ রচনা-সহায়তায় নাট্যকার স্তরে স্তরে মেলে ধরেছেন ভালবাসা, প্রবঞ্চনা, আনন্দ, বেদনা, বিরহের দীর্ঘ জীবনের চুম্বক রূপারোপ। অ-বাবু গিরিশচন্দ্র-গুর্মুখ প্রতাপ জহুরীর সঙ্গে নানা ঘটনাবলিতে মূর্ত হয় দুই বিনোদিনীর সম্মুখ জীবনদর্শন। কখনও বিল্বমঙ্গল, কখনও পাণ্ডব-কৌরব, কখনও চৈতন্যলীলা আবার কখনও বা পুরুবিক্রম— এমন নানা নাটকের খণ্ডিত দৃশ্যে বিনোদিনীর বয়ান। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মঞ্চ কল্পনা ও সঞ্জয় নাথের আলো নিয়ে আরও একটু ভাবলে ভাল হয়। বনানী বসু ও সেঁজুতি সেনের নৃত্যভাবনা ভাল। অভিনয়ে প্রশংসার দাবি রাখেন তন্বী বিনোদিনী ভূমিসুতা দাস। প্রৌঢ়া বিনোদিনীর ভূমিকায় দীপান্বিতা বণিক দাস। পুরুষ-চরিত্রের অভিনেতারা সবাই কম বেশি আড়ষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE