Advertisement
০২ মে ২০২৪

জ্বর আসছে মনে হলেই আগে প্যারাসিটামল খেয়ে নিন

তবে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। পরামর্শ দিলেন ডা. সিদ্ধার্থ পুরকায়স্থ। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়তবে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। পরামর্শ দিলেন ডা. সিদ্ধার্থ পুরকায়স্থ। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০০:১৯
Share: Save:

প্র: বর্ষা আসতে না আসতেই জ্বরের ধুম পড়ে গেছে। ঘরে ঘরে জ্বর। আর এক বার পড়লে নাকি হপ্তাখানেকের ধাক্কা?

উ: এ বারের আবহাওয়ার জন্যই এত সব ঝামেলা। কখনও ভীষণ গরম আবার কখনও বৃষ্টির ঠান্ডা, সামলে চলতে না পারলেই মুশকিল।

প্র: কিছু ওষুধ বলুন, যাতে জ্বর হলেও তাড়াতাড়ি রেহাই মেলে।

উ: গা-হাত-পা ম্যাজম্যাজ করছে, জ্বর জ্বর ভাব লাগছে মনে হলেই প্যারাসিটামল খান। দিনে তিনটে।

প্র: প্যারাসিটামল না খেলে হবে না?

উ: জ্বর এলে এটাই সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ। সঙ্গে মাথা, গা-হাত-পা ব্যথা থাকলেও কমবে।

প্র: প্যারাসিটামল খেলে তো কিছু ক্ষণের জন্য রেহাই। তার পর আবার যে কে সেই।

উ: দিন তিনেক দেখুন না।

প্র: এ দিকে তো কাজের দফারফা। জ্বর এলে কাজও করতে পারছি না।

উ: জ্বর গায়ে আবার কাজ করবেন কী! বিশ্রাম নিন।

প্র: তিন দিন বাড়িতে বসে থাকব?

উ: নইলে আরও বেশি দিন থাকতে হতে পারে।

প্র: তাই তো বলছি ভাল ওষুধ দিন, যাতে তাড়াতাড়ি জ্বর কমে।

উ: প্যারাসিটামলই খাবেন। জ্বর ১০১-এর বেশি হলে ভাল করে মাথা ধুইয়ে গা মুছতে হবে। খুব বেশি জ্বর উঠলে বরফ জল দিয়ে মাথা ধোবেন। বা জলপট্টি দেবেন। রুমালের মধ্যে বরফ নিয়ে কুঁচকি, বগলের তলায় সেঁক দেবেন। যে করে হোক জ্বরটা নামাতে হবে। এতে না কমলে কিন্তু ডাক্তার দেখাতে হবে। তখন অ্যন্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে।

প্র: তার থেকে আগেভাগে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নিলে তো খামকা তিন দিন প্যারাসিটামল খেয়ে সময় নষ্ট করতে হয় না?

উ: না। তিন দিন পর জ্বর না কমলে কিছু রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। বুকে কফ বসলে চেষ্ট এক্স-রে করাতে হবে। বিশেষ করে বয়স্কদের। সেই রিপোর্ট দেখে তার পর ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন। নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।

প্র: কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তো দুর্বল হয়ে পড়ব। তখন তো জ্বর কমলেও অফিস করা যাবে না।

উ: সঙ্গে ভিটামিন খেলে এমনটা হবে না। আর খাওয়াদাওয়াটাও ভাল করে করতে হবে।

প্র: জ্বরের মুখে সবই বিস্বাদ লাগছে। কিছুই তো খেতে ইচ্ছে করছে না।

উ: এক বারে অনেকটা না খেয়ে একটু একটু করে বারে বারে খান। যা মুখে ভাল লাগে, তাই খান। তেল-মশলা না খেলেই হল।

প্র: কাঁচা-মিঠে আম খেতে পারব?

উ: খান না। অসুবিধে কী...

প্র: জ্বরের মধ্যে! তার ওপর সর্দি?

উ: কাঁচা আম, তেঁতুল এগুলি ভিটামিন-সি তে ভরপুর। জ্বরের মুখে ভালও লাগে। অরুচি কমবে। আবার সর্দিতে-ও কাজ দেবে। টক-মিষ্টি আপেলও খেতে পারেন।

প্র: ভাত খাওয়া যাবে?

উ: ভাত, রুটি, খিচুড়ি যা ইচ্ছে খেতে পারবেন। বেশি করে জল খাবেন।

প্র: সঙ্গে যদি পেটের গোলমাল থাকে?

উ: সে ক্ষেত্রে অবশ্যই হাল্কা ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। ডাবের জল খাবেন। এক-দুই বার বাথরুমে গেলেই বার বার নুন-জল খান। নইলে ও আর এস। খাওয়ার পর যে কোনও হজমের ওষুধ খেতে হবে। না কমলে অ্যান্টি ডায়রিয়াল খেতে হবে। জলটা অবশ্যই ফুটিয়ে খাবেন।

প্র: বাইরের তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রি ছাড়ালে তখন কি আর ফোটানো জল খাওয়া যায়?

উ: ফোটানো জল ফ্রিজে রেখে খান। তবে সর্দি-কাশি থাকলে আর ফ্রিজের জলে হাত দেবেন না।

প্র: কাশির জন্য কী করব?

উ: কাফ সিরাপ খেতে পারেন। লিভোসিট্রাজিন জাতীয় অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেটও খেতে পারেন। নাক বন্ধ থাকলে নরম্যাল স্যালাইন ওয়াটার নাকে দিন। স্টিম ভেপার নিলেও কাজ হবে।

প্র: আর গলা ব্যথার জন্য? সেই গার্গলের প্রেসক্রিপশন?

উ: হ্যা।ঁ নুন জল দিয়ে গার্গল করলে তো খুবই ভাল। দিনে তিন বার করুন। গলা ব্যথা কমবে।

প্র: গার্গল করতে বিচ্ছিরি লাগে। করলে বমি পায়।

উ: বমির সঙ্গে কফও বেরিয়ে আসবে। না ইচ্ছে করলে গরম লিকার চা, গ্রিন টি, স্যুপ বার বার খান। গলায় আরাম লাগবে। প্যারাসিটামলেও গলা ব্যথা কমবে।

প্র: শুনেছি বয়স্কদের ক্ষেত্রে জ্বরটা শেষমেশ নিউমোনিয়া পর্যন্তও গড়াচ্ছে?

উ: আগে থেকে সাবধান না হলে হতে পারে। এ জন্য বাচ্চা বা বয়স্কদের সর্দি-কাশি হলেও যদি দেখেন কফ বেরোচ্ছে না, বুকে বসে গেছে, তবে অবশ্যই একটা চেষ্ট এক্স-রে করে ডাক্তার দেখাতে হবে।

প্র: এই জ্বর নাকি আবার ঘুরে আসতে পারে?

উ: একটু সাবধানে থাকলে আসবে না।

প্র: কী রকম?

উ: বাইরে বেরোলে মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে নিন। বাড়ি এসে আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন। খুব গরম পড়লে বার বার এসি আর বাইরে করবেন না।

প্র: মাস্ক পরে অফিস! হয় না কি?

উ: জ্বরের হাত থেকে বাঁচতে হলে পরতে হবে। মেট্রো বা বাসে যাওয়ার সময় অন্তত রুমাল দিয়ে মুখটা ভাল করে ঢেকে নিন। ওড়না বা স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে বেরোলে অসুবিধে কী?

প্র: তা করা যায়। মুখ ঢেকে রাখলে এই বিচ্ছিরি জ্বরটা হবে না?

উ: না হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। পাশাপাশি বাড়িতে পার্সোনাল হাইজিনটা খেয়াল রাখতে হবে। যার হয়েছে তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চা আর বয়স্কদের। বাইরের জোলো হাওয়া লাগতে দেবেন না। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলে দরজা-জানলা বন্ধই রাখুন। তখন আর বাড়ি ফিরে স্নান না করাই ভাল। করলেও ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করুন।

প্র: অফিসে তো একটানা এসির মধ্যে থাকতে হয়। তাতে অসুবিধে হবে না তো?

উ: না। একটানা ঠান্ডায় থাকলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তবে আপনার যদি এসি সহ্য না হয়, তবে কান, নাক, মুখ ঢেকে রাখবেন। বার বার এসি থেকে বাইরে বেরোবেন না। ঠান্ডা-গরম করলে সমস্যা হতে পারে।

প্র: কিন্তু বাড়িতে তো আর সেন্ট্রাল এসি নেই। তখন কী করব?

উ: ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলে এসি বন্ধ করে দেবেন। সরাসরি এসির হাওয়া গায়ে লাগাবেন না। আর যখন বেরোনোর দরকার হবে, তার কিছু ক্ষণ আগে এসি বন্ধ করে দেবেন। যাতে বাইরের সঙ্গে তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE