Advertisement
০১ জুন ২০২৪

নানা রকম

অকালপ্রয়াত এক সার্থক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর নাম রমা মণ্ডল। দশ বছর আগে তাঁর জন্মদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘রমা রম্যবীণা’। তাঁরা রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করেছিলেন এক নৃত্যগীত মুখর সন্ধ্যার। প্রথম পর্বে সংবর্ধনা— দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, সুবীর মিত্র, সত্যম রায়চৌধুরী ও অনুপ মতিলালকে। তার পর গীতি আলেখ্য। চমৎকার ওই পর্বে অংশ নিয়েছিল চারটি সঙ্গীত সংগঠন, রমা রম্যবীণা, রবিতীর্থ, স্ফুলিঙ্গ আর নবনালন্দা।

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

রমা নেই, তবুও তাঁরই ছায়া

রবীন্দ্রসদনে গান ও গীতিনাট্যে ‘মায়ার খেলা’। লিখছেন শিখা বসু

অকালপ্রয়াত এক সার্থক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর নাম রমা মণ্ডল। দশ বছর আগে তাঁর জন্মদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘রমা রম্যবীণা’। তাঁরা রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করেছিলেন এক নৃত্যগীত মুখর সন্ধ্যার। প্রথম পর্বে সংবর্ধনা— দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, সুবীর মিত্র, সত্যম রায়চৌধুরী ও অনুপ মতিলালকে। তার পর গীতি আলেখ্য। চমৎকার ওই পর্বে অংশ নিয়েছিল চারটি সঙ্গীত সংগঠন, রমা রম্যবীণা, রবিতীর্থ, স্ফুলিঙ্গ আর নবনালন্দা। পরিচালনায় যথাক্রমে কোয়েল অধিকারী, অনিতা পাল, শ্রাবণী সেন আর শ্রীপর্ণা ভট্টাচার্য। সমবেত গান। প্রত্যেকেই ভাল গেয়েছেন। তবু সব সেরা বোধ হয় রমা রম্যবীণা আর স্ফুলিঙ্গ। রমা রম্যবীণার নিবেদন খোলামেলা। সুচিত্রা মিত্রের গায়কির স্পষ্ট প্রভাব। খুব ভাল ‘আমি তোমারই মাটির কন্যা’, স্ফুলিঙ্গের নিবেদনে কানে রেশ থেকে যায়। যেমন, ‘কেন চেয়ে আছ গো মা’ গানটি। প্রত্যেক দলের তিনটি করে গান। অন্য দল দুটির প্রাণময়তা কম। এই সন্ধ্যায় রমা রম্যবীণার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ‘দক্ষিণায়ন লন্ডন’।

ছবি: সুব্রতকুমার মণ্ডল

আনন্দ গুপ্তের পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় দক্ষিণায়ন উপস্থাপিত করলেন রবীন্দ্র গীতিনাট্য ‘মায়ার খেলা’। হয়তো দু’এক জায়গায় ঠিক রাবীন্দ্রিক বলা যাবে না, যেমন মায়াকুমারীদের সঙ্গে মায়াকুমারদের অ্যাক্রোবেটিক্স। তবু ভারি দৃষ্টিনন্দন, সুপরিকল্পিত ও জমকালো প্রযোজনা। বলতেই হবে নৃত্যবিন্যাসে বেশ নতুনত্ব আছে। তার সঙ্গে নানা মাপের নানা রঙের কাপড়ের টুকরো নিয়ে নাচ বা সেগুলোকেই বিভঙ্গ করে তোলা, স্টেপস আনা, পাখি সহ দাঁড়, পদ্মফুল, হাতপাখা চমৎকার বিন্যাসে নাচের বিষয় হয়ে ওঠে। পোশাক নির্বাচন দেখতে নয়ননন্দন, কিন্তু রবীন্দ্র নৃত্যে একটু বেশি চোখ ধাঁধানো। তবে সবই তো এখন বদলাচ্ছে। প্রমদাবেশী দেবাঙ্গনা সরকার শুধু নাচে নয়, তাঁর অভিব্যক্তি অভিনয়ে টানটান করে ধরে রাখেন। অনবদ্য অমর আনন্দ গুপ্ত স্বয়ং। তিনিও নাচে ও অভিনয় দারুণ ভাল। এখানে শান্তার বিশেষ কিছু করার থাকে না। তবু বল্লারী ভৌমিক যথাসাধ্য করেছেন। অন্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন কুমার গৌরব দাস, সৌমিক রায়, গার্গী নিয়োগী, রুবেনা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। রুবেনার নৃত্যপদের কয়েকটি অংশ বেশ ভাল। গানের অংশ প্রাণময়। আলো আর মঞ্চসজ্জা পুরো প্রযোজনার মান বাড়িয়েছে অনেকখানি। এক কথায় ‘মায়ার খেলা’ উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা। সংযোজনায় ছিলেন সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নির্ভেজাল অপেরা

শুধু গানে নয়, অভিনয়েও রূপঙ্কর বেশ নজর কাড়েন। লিখছেন মনসিজ মজুমদার

কলকাতায় ইদানীং কালে কোনও নির্ভেজাল অপেরা মঞ্চস্থ হয়েছে বলে মনে পড়ে না। সেই সুবাদে কৃষ্টি পটুয়ার ‘অথ মেঘ রোদে পালা’ (স্ক্রিপ্ট, সঙ্গীত রচনাঃ রূপঙ্কর, পরিচালনা: চৈতালী, দেবদাস, অঞ্জন দেব) এক সাধু উদ্যোগ সন্দেহ নেই। একটি রূপকথাধর্মী কাহিনির নাট্য নৃত্য গান ও দৃশ্য সমেত সঙ্গীতপ্রধান উপস্থাপনাকে বলা হয়েছে ‘রূপঙ্করের অপেরা’। ধ্রুপদী ঐতিহ্যের ইউরোপীয় অপেরার তুল্য না হলেও এই অপেরা অনেকটাই আঙ্গিকনিষ্ঠ এবং নজরকাড়া।

একটু দীর্ঘ হলেও অপেরার উপযোগী লিব্রেট্টো রোমিও-জুলিয়েটের মতো কাহিনি, যদিও ট্র্যাজেডি নয়। মেঘ ও রোদ পরস্পর শত্রু রাজ্য। নিত্য যুদ্ধে উলুখড়ের প্রাণ যায়। অপেরার মূল গায়েন (রূপঙ্কর) ও গায়িকা (চৈতালী) তাদের শিশুকন্যাকে হারিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যে বিবেকের ভূমিকা নেয় মৈত্রীর সম্পর্ক গড়তে। মেঘরাজকন্যার প্রেমে পড়ে রোদরাজকুমার। স্বয়ম্বর সভায় মেঘকন্যা (কস্তুরী) বরমাল্য দেয় রোদকুমারকে (দেবদাস)। দু’পক্ষের রাজ-আপত্তিই খারিজ হয় রূপঙ্করের সাঙ্গীতিক অনুনয়ে। কিন্তু রোদরাজ্যের এক খলনায়কের খপ্পরে পড়ে রোদকুমার। অবশ্যই সঙ্কট দূর হয়। দুটি তরুণ হৃদয়ের মিলনে দুটি দেশের মধ্যে শত্রুতার অবসান হয়।

এই রূপক কাহিনি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মঞ্চে বাদ্যবৃন্দের সঙ্গীত আবহে ও বিভিন্ন স্বরমাত্রায় একক, দ্বৈত ও সমবেত নাচ ও গান বা সুরে উচ্চারিত সংলাপে। অপেরার অন্যতম আবেদন দৃশ্যময়তায়। সঞ্চয়ন ঘোষের মঞ্চে সে আবেদন নেই। অনেকটা পুষিয়ে দিয়েছে সম্মেলক গান বা সুরধ্বনির বা জনতার দৃশ্যে বিভিন্ন চরিত্রের বর্ণাঢ্য পোশাক বৈচিত্রে। পোশাকের বৈচিত্র শুধু রঙে নয় স্টাইলেও। মূল গায়েন সেজেছেন যেন কাউবয়। তেমনই রোদ রাজ্যের রাজা। যদিও মূল গায়িকা ও কুশীলবদের পোশাক সাধারণত ভারতীয়। কাহিনিতে ও উপস্থাপনায় দেশকালের নির্দেশ নেই বলেই স্বয়ম্বর সভার সঙ্গে চমৎকার মিলে যায় সংলাপে ‘ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রি’ বা ‘বাজেট’-এর উল্লেখ। সমস্ত প্রযোজনা যেন সুর ও সঙ্গীতের অবিচ্ছিন্ন স্রোত।

স্বরসপ্তকে

স্বরসপ্তক আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আধুনিক গান শোনালেন নবীন ও প্রবীণ শিল্পী। শুরুতেই কৃষ্ণেন্দু সেন গাইলেন ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে’। নমিতা দাশ একটি নতুন আধুনিক গান শোনালেন যা বাংলা গানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশা জাগায়। তাঁর কণ্ঠে প্রদীপ সাহার লেখা ‘তোমার কথাই শুধু মনে পড়ে’ গানটি অবশ্যই সৃজনশীল সৃষ্টি।

এককে নজর

সম্প্রতি শিশির মঞ্চে একক অভিনয়ে প্রাণ ফিরে পেল ‘ময়না ভোলা’। নির্দেশনা ও অভিনয়ে প্রবীর মণ্ডল। গল্পের শুরু গ্রাম্য মেলার পরিবেশে। অতি দরিদ্র ভোলা মেলায় ঘুরতে আসে। অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা। তার জীবনে প্রেম আসে, কিন্তু টেকে না। ব্যর্থ জীবনে ফের আসে প্রেমের হাতছানি। কয়েকটি ছোটখাটো ত্রুটি ছাড়া বেশ রোম্যান্টিক কমেডি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shikha basu manasij majumder nana nana rakom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE