Advertisement
১০ মে ২০২৪

পেট না কেটেও

সিস্ট, ফাইব্রয়েড বা পলিপ যে কোনও সমস্যার সমাধান ল্যাপারোস্কপিতেই। ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

প্র: আজকাল নাকি মেয়েদের নানা সমস্যায় অস্ত্রোপচার করতে হলে আর পেট কাটার দরকার হচ্ছে না?

উ: হ্যা।ঁ এখন প্রায় সব অপারেশনই ল্যাপারোস্কপিতে করা হচ্ছে। মানে পেটে চারটে ফুটো করলেই কাজ হয়ে যাচ্ছে। পেট কাটার দরকার হচ্ছে না।

প্র: সব অপারেশন?

উ: সিজার ছাড়া প্রায় সব। গলব্লাডার আর অ্যাপেনডিক্স যেমন আর পেট কেটে হয় না, সে রকমই।

প্র: চারটে ফুটো দিয়ে অপারেশন, কোনও সমস্যা হবে না তো?

উ: বরং সুবিধে হয়। পেটের মধ্যের সব কিছু বাইরের ক্যামেরায় বড় করে দেখা যায়। ফলে অপারেশন খুব সহজ হয়। অপারেশনের জটিলতা কম হওয়ায় রোগীও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।

প্র: তাই?

উ: তা ছাড়া এই ধরনের অপারেশনে ইনফেকশন বা ভবিষ্যতে হার্নিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে রোগী বাড়ি চলে যান। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করা যায়। অফিস করতে পারেন।

প্র: ধরুন বিশাল বড় একটা টিউমার হল জরায়ুতে। সেটাও এই ছোট ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাবে? অসুবিধে হবে না?

উ: একেবারেই নয়। অনেক বড় আকারের টিউমারও ল্যাপারোস্কপি করেই বের করে আনা হয়। আসলে টিউমারগুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নেওয়া হয়। তার পর সেগুলোকে আরামসে বের করে আনা যায়। এই ভাবে বিশাল বড় টিউমারও বেরিয়ে গেল, অথচ বড় করে পেট কাটারও দরকার হল না। টিউমার জরায়ুর ভেতরে থাকলে সে ক্ষেত্রে হিস্টেরোস্কপি বাইপোলার রিসেকশন করা হয়। তাতে তো আরও বেশি সুবিধে হয়।

প্র: সেটা আবার কী?

উ: এটা একটা নতুন যন্ত্র। যন্ত্রটা প্রসবের রাস্তায় প্রবেশ করিয়ে জরায়ুর ভেতর থেকে টুকরো টুকরো করে টিউমারকে বের করে আনা হয়। ফলে শরীরে কোনও দাগের ঝামেলাও রইল না।

প্র: বা দারুণ তো!

উ: অনেক সময় জরায়ুর ভেতরের নানা সমস্যার জন্য প্রেগন্যান্সি আসে না। সেই সব সমস্যাও এই যন্ত্র দিয়ে খুব সহজে মিটিয়ে ফেলা হয়। অথচ কোনও দাগ হল না। পরে না জানলে কেউ বুঝতেই পারবে না অপারেশন হয়েছে। আসলে এই নতুন যন্ত্র এসে যাওয়ায় অনেক জটিল অপারেশন সহজ হয়ে গিয়েছে।

প্র: কী রকম?

উ: একটা ঘটনা বলি, ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। কমবয়সি একটি মেয়ের পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর থেকে কিছুতেই ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছিল না। ওষুধ খেয়েও নয়। আসলে মেয়েটির জরায়ুতে তিনটে টিউমার ছিল। আগে যে ভাবে জরায়ুতে ক্যামেরা ঢুকিয়ে অপারেশন করা হত, তাতে বড় টিউমার হলে দুটো সিটিং-এর দরকার হত। ফলে সমস্যা হত। এখন ‘বাইপোলার হিস্টোরস্কোপ’ আসার পর বড় বড় টিউমারও এক বারে বার করে দেওয়া যায়।

প্র: সে ক্ষেত্রে তো পেট কেটেও অপারেশন করা যেত?

উ: অবিবাহিত মেয়েদের পেট কেটে জরায়ুর ভেতর অপারেশন করলে ভবিষ্যতে প্রেগন্যান্সি আসতে সমস্যা হয়। তা ছাড়া দাগটাও বেমানান।

প্র: নতুন এই অপারেশনে খরচও নিশ্চয়ই খুব বেশি?

উ: একেবারেই নয়। বরং খরচ কম। আর সুবিধেও অনেক। পুরোটাই ডে-কেয়ার। অপারেশনের ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর থেকে রোগী সুস্থ হয়ে যান। হাঁটাচলা করতে পারেন।

প্র: আর বাড়ি ফেরা?

উ: বললাম না, ডে-কেয়ার। সকালে অপারেশনের পর বিকেেল বাড়ি যেতে পারবেন। পর দিন থেকে অফিস করতে পারবেন।

প্র: সত্যি? আগের দিন অপারেশন, আর পর দিন অফিস!

উ: আসলে এই অপারেশনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন নেই বললেই চলে। তাই রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

প্র: তবে তো সব ক্ষেত্রে এই অপারেশন করলেই হয়?

উ: না। জরায়ুর ভেতরকার টিউমার, পলিপ বা জরায়ুর মধ্যের কোনও ত্রুটি থাকলেই এই অপারেশন করা হয়। সমস্যা জরায়ুর বাইরে হলে ল্যাপারোস্কপিই করা হয়।

প্র: কিন্তু ল্যাপারোস্কপি করলে তো ফুটোর দাগ থাকবেই।

উ: সেটা এমন কিছু নয়। আর দাগ মেলানোর খুব ভাল ওষুধ আছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে দাগ অনেকটাই হাল্কা হয়ে যাবে। মিলিয়েও যেতে পারে। তবে একেবারেই দাগ না চাইলে কম বয়সিদের ক্ষেত্রে অনেক সময় সিঙ্গল পোর্ট সার্জারি করা হয়।

প্র: সেটা আবার কী?

উ: এতে নাভি দিয়ে একটা মাত্র ফুটো করা হয়। তাতেই পুরো অপারেশন হয়ে যায়। দাগের কোনও ব্যাপার নেই। অবিবাহিত মেয়েরা অপারেশন গোপন করতে চাইলে এই অপারেশন করা হয়।

প্র: অপারেশন গোপন করবে কেন?

উ: আসলে এখনও অনেকে মনে করেন পেটের অপারেশন মানেই সেই মেয়ে ভবিষ্যতে মা হতে পারবেন না। বিশেষ করে কোনও গায়নোকলজিক্যাল অপারেশন হলে। ধরুন সিস্টের অপারেশন হয়েছে, তাতেও ভিত্তিহীন ভাবে ধরে নেওয়া হয় পরে সে আর মা হতে পারবে না। তাই বিয়ের আগে অপারেশন হলে অনেকেই ব্যাপারটা লুকিয়ে যেতে চান। তা ছাড়া সৌন্দর্যের ব্যাপারটাও তো আছে।

প্র: কিন্তু একটা মাত্র ফুটো দিয়ে অপারেশন, অসুবিধে হবে না?

উ: না। ট্রেনিং নিয়ে নামা হচ্ছে। রোগীর কোনও অসুবিধে হয় না।

প্র: শুনেছি মোটা মেয়েদের ল্যাপারোস্কপিতে সমস্যা হয়।

উ: একেবারেই নয়। বরং চেহারা ভারী হলে ল্যাপারোস্কপিতেই সুবিধে। পেট কেটে অপারেশন করলে চর্বির স্তরের জন্য অপারেশন করতে অসুবিধে হয়। সব কিছু জড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। ল্যাপারোস্কপিতে সহজেই অপারেশন করা যায়। তাড়াতাড়ি হাঁটাচলা করতে পারায় অপারেশন পরবর্তী জটিলতাও কম হয়।

প্র: শুনেছি ল্যাপারোস্কপিতে অপারেশন শুরুর পরও আবার পেট কাটার দরকার হয়?

উ: কিছু জটিল সমস্যায় এমনটা হতে পারে। তবে কমবয়সিদের এমনটা খুব কম হয়। তেমন দরকার হলে আর একটা অতিরিক্ত ফুটো হলেই কাজ হয়ে যায়।

প্র: অপারেশনের পর কোনও বাধানিষেধ?

উ: তেমন কিছু না। অপারেশনের পর সাত থেকে দশ দিন রোগীকে তেল-ঝাল-মশলা জাতীয় খাবার খেতে বারণ করা হয়। কয়েক দিন ভারী ওজন তুলতেও বারণ।

প্র: আর যৌন জীবন?

উ: আগের মতোই। একমাত্র ল্যাপারোস্কপি করে প্রসবের রাস্তা দিয়ে জরায়ু বের করা হলে সপ্তাহ দুয়েক সহবাস করা, মাস খানেক সাঁতার, বাথটবে স্নান করতে বারণ করা হয়। তার পর স্বাভাবিক জীবন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE