Advertisement
E-Paper

পুনর্জন্ম পেলে ইস্টবেঙ্গলে

গড়িয়াহাট থেকে ভেটকি কেনেন। বাড়ি করতে চান দার্জিলিঙে। এ কোন হোসে ব্যারেটো? ময়দানের সবুজ তোতার সামনে প্রীতম সাহাগড়িয়াহাট থেকে ভেটকি কেনেন। বাড়ি করতে চান দার্জিলিঙে। এ কোন হোসে ব্যারেটো? ময়দানের সবুজ তোতার সামনে প্রীতম সাহা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০০:০০
ছবি: উৎপল সরকার

ছবি: উৎপল সরকার

পত্রিকা: ভারতের নাগরিকত্ব থাকলে ভোট দিতে পারতেন। আফশোস হচ্ছে?

ব্যারেটো: ইন্ডিয়াতে পপুলেশনের ঠেলায় এমনিতেই হিমশিম অবস্থা। তার ওপর আরও একটা ভোট বাড়িয়ে লাভ কী?

পত্রিকা: এ দিকে আপনাকে তো দিব্যি ভোটের প্রচারেও দেখা গেল...

ব্যারেটো: গেল। তাতে কী! প্রচারে গেলেই ভোট দেওয়াটা কি বাধ্যতামূলক?

ভেরোনিকা ও ছেলেমেয়ের সঙ্গে বাড়িতে

পত্রিকা: পনেরো বছর ময়দানে কাটালেন। এ বারই প্রথম ফুটবলার ব্যারেটোকে দেখতে পাওয়া যাবে না...

ব্যারেটো: কোথাও না কোথাও তো শেষ করতেই হত।

পত্রিকা: মোহনবাগান ছাড়ার পরে আরও দু’বছর খেললেন...

ব্যারেটো: দু’বছর আগে মোহনবাগান ছাড়লেও আমার মনে হয়নি ফুটবলকে চিরবিদায় জানানোর ওটাই সঠিক সময়। ভবানীপুরের ইনিংসটা ছিল ফুটবলকে পাল্টা কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই। যে ফুটবল আমাকে এত নাম-যশ-অর্থ-সম্মান-ভালবাসা দিয়েছে, সেই ফুটবলকে আমার গুরুদক্ষিণা। কিন্তু এত পরিশ্রমের পরেও ভবানীপুরকে আই লিগে না তুলতে পারার আফশোসটা কোনও দিন যাবে না।

পত্রিকা: ফুটবলহীন ব্যারেটোর কাছে এখন জীবনটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

ব্যারেটো: ফুটবল খেলার চেয়েও বেশি কঠিন। পনেরো বছর ধরে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সময় দিয়ে উঠতে পারিনি, এখন তাদের আবদার মেটানোর সময় এসেছে। আর এটা এমন একটা দায়িত্ব যার থেকে কোনও দিন অবসর নেওয়া যায় না।


ছেলের এখন
আবদারের শেষ নেই

পত্রিকা: তা হলে বলছেন এ বার স্ত্রী ভেরোনিকার হেঁশেলে গোল করতে হবে?

ব্যারেটো: কেন, আপনি কি ভাবছেন আমি রান্না করতে পারি না? বাঙালি মাছের ঝোল হয়তো রাঁধতে পারব না, কিন্তু বাড়িতে যখন কোনও পার্টি-গেটটুগেদার হয়, তখন আমিই কিন্তু চিফ কুক। বার্বিকিউ আমার স্পেশ্যালিটি। মাংস কাটা, ধোয়া, পেয়াজ-রসুন-মশলা ম্যারিনেট করা, সব একাই করি।

পত্রিকা: সব্জি-বাজারটাও?

ব্যারেটো: সেটা পার্টি বলে নয়, নিয়ম করে গড়িয়াহাট বাজারে যাই। ওই সব মল-টল আমার পোষায় না। পাতি বাজারেই টাটকা আর স্বাস্থ্যকর খাবার পাওয়া যায়।

পত্রিকা: মাছ রান্না করতে পারেন না। কিন্তু কলকাতায় এত দিন থাকার পরে মাছ খেতেও কি ভালবাসেন না?

ব্যারেটো: দারুণ ভালবাসি। সব মাছ নয়। বাজারে গেলেই ভেটকি খুঁজি। ভেরোনিকা ঝাল-ঝাল করে খুব ভাল রান্না করে।

পত্রিকা: ঝাল! ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা শুনেছি খাবারে গোলমরিচ দিতেও বারণ করে। ঝাল তো দূরের কথা।

ব্যারেটো: ঠিক। কিন্তু আমার বোধহয় কলকাতায় থাকতে থাকতে মুখের স্বাদ বদলে গিয়েছে। রেস্তোরাঁয় গেলে বিরিয়ানি, চিকেন চাপ, মটন কষা ছাড়া ভাবতেই পারি না। পার্ক স্ট্রিটের একটা রেস্তোরাঁর বিফ-স্টেক্স আর সিজলার তো আমার হট ফেভারিট।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

পত্রিকা: ফুটবল ছেড়েছেন বলে এ বার কি যখন তখন বিফ স্টেক আর বিরিয়ানি?

ব্যারেটো: হা হা হা হা। আমি কিন্তু ঘুরতেও খুব ভালবাসি। সুযোগ পেলেই দার্জিলিং চলে যাই। পাহাড়ি নিরালা পরিবেশটা খুব এনজয় করি। ভেরোনিকা, ছেলেমেয়েদের নিয়েও অনেক বার গিয়েছি। আমি তো ভেবেই রেখেছি, যদি সম্ভব হয় দার্জিলিংয়ে একটা বাড়ি কিনব। ওখানেই থাকব পরিবারকে নিয়ে। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন বলতে পারেন।

পত্রিকা: তা হলে তো কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে হয়?

ব্যারেটো: তা কেন? কলকাতা ছেড়ে ব্রাজিলেই ফিরে যেতে পারলাম না, আপনি বলছেন চলে যাব! আমার তো সব কিছুই এই শহরে। কলকাতাকে ছেড়ে যাওয়ার আর উপায় নেই। এখানে আর পাহাড়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে থাকব। শিলিগুড়িতে আমার যে অ্যাকাডেমিটা আছে, তার দেখাশোনাও হয়ে যাবে।

পত্রিকা: এ বার থেকে ব্যারেটো মানে ফুটবল প্রশাসক?

ব্যারেটো: বলতে পারেন। আমার মোট তিনটে অ্যাকাডেমি আছে। শিলিগুড়ি, গোয়া এবং মুম্বইয়ে। জুনের প্রথম সপ্তাহে মুম্বইয়ের অ্যাকাডেমির উদ্বোধন। এ ছাড়া কোচিং নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছি। আইএসএলে কলকাতা ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে একপ্রস্থ কথাবার্তা হয়েছে। আশা করি জুনের প্রথম দিকে সেটা ফাইনাল হয়ে যাবে।

পত্রিকা: আপনি তো গিটারও বাজান?

ব্যারেটো: সে এক কালে ছিল বটে। এখন তেমন সময় পাই না। আসলে ফুটবলটা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে খেলেছি। শর্টকাট ভাবিনি। আমাকে নিয়ে যে প্রত্যাশার চাপ তৈরি হয়েছিল, তাতে অন্য কিছু বিষয় নিয়ে ভাবার সময়ই ছিল না। শখ-আহ্লাদ, পরিবার-স্বজনসব কিছুকে বিসর্জন দিতে হয়েছিল। গিটারটাও সেই স্রোতে ভেসে গিয়েছে।

পত্রিকা: এখন তো আবার শুরু করতে পারেন?

ব্যারেটো: আর হবে না। জীবনে একবার যে সময় চলে যায়, সেটা আর ফিরে পাওয়া যায় না।

পত্রিকা: তা হলে আপনার অবসর সময়ে কী করেন?

ব্যারেটো: কলকাতায় থাকলে খুব একটা বাড়ির বাইরে যেতে পছন্দ করি না। বন্ধুদেরই বাড়িতে ডেকে নিয়ে হই-হুল্লোড় করি।

পত্রিকা: ভেরোনিকার সঙ্গে শপিং-টপিংও নয়?

ব্যারেটো: সে যাই। গড়িয়াহাটে মাঝেমধ্যেই কেনাকাটা করি।

পত্রিকা: কোনও দিন শাড়ি কিনে দিয়েছেন ভেরোনিকাকে?

ব্যারেটো: ও শাড়ি খুব একটা পছন্দ করে না। শাড়ি দেখতে ভাল লাগে। কিন্তু পরতে এত ঝামেলা! পোষায় না। দু’একবার আমি ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। খুব জটিল একটা ব্যাপার। এত বছরে হয়তো তিনটে শাড়ি কিনেছি ওর জন্য। শেষ বার একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে পরে গিয়েছিল। সেটাও তিন বছর আগের কথা।

পত্রিকা: ছুটির দিনে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঘুরতেও যান না?

ব্যারেটো: খুব কম। নাতালিয়া, ইসাবেলা এবং জন নিকো পার্কটা খুব পছন্দ করে। ওখানেই যাই। তাতে ওদের সঙ্গে আমাদেরও একটা চেঞ্জ হয়ে যায়। তবে তা’ও সপ্তাহের প্রথম দিকে যাই। যাতে ভিড়-ভাট্টার মধ্যে না পড়তে হয়।

পত্রিকা: ছেলেমেয়ে নিয়ে ভেরোনিকা প্রায় পনেরো দিন হল ব্রাজিলে। আপনি যাবেন না?

ব্যারেটো: এখনও ঠিক নেই। এখানে অনেকগুলো কাজে আটকে পড়েছি। চেষ্টা করছি যাতে বিশ্বকাপ শুরুর আগে যেতে পারি!

পত্রিকা: বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার ভবিষ্যদ্বাণী?

ব্যারেটো: ব্রাজিলের জেতার খুব ভাল সুযোগ আছে। তবে অনেকের মতো আমার বাজিও জার্মানি।

পত্রিকা: ব্রাজিলের টিম যা হল, তাতে আপনি খুশি?

ব্যারেটো: একদম ঠিকঠাক। কাকা-রোবিনহো এই টিমে আসে না। তবে শুধু নেইমার-নেইমার বলে চেঁচালে বিশ্বকাপ জেতা কঠিন। কনফেডারেশন কাপের মতো একজোট হয়ে খেলতে হবে। স্কোলারির কোচিংয়ে আমি কয়েক বছর খেলেছি বলে বলছি। লোকটার মধ্যে অসামান্য দক্ষতা আছে। ফুটবলাররা যদি ওঁর কথা শুনে খেলতে পারে, তা হলে ব্রাজিলকে আটকানো কঠিন।

পত্রিকা: আর মেসি-রোনাল্ডো...

ব্যারেটো: একটা কথা শুনে রাখুন। মেসি-রোনাল্ডো আর যাই-ই হোক, মারাদোনা নয়। মারাদোনার মতো ফুটবলার আর জন্মাবে না। আর এখন ব্যক্তিগত দক্ষতার জোরে বিশ্বকাপ জেতানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বিশ্বকাপ সেই দলই জিতবে, যাদের টিমগেম থাকবে।

পত্রিকা: ভেরোনিকা এখন নেই। চুপিচুপি একটা প্রশ্ন করব?

ব্যারেটো: কী?

পত্রিকা: বাঙালি মেয়েরা তো অনেকেই খুব সুন্দরী। কখনও কারও প্রেমে পড়েছেন?

ব্যারেটো: (একগাল লাজুক হাসি) কেন ব্রাজিলের মেয়েরা কি সুন্দর হয় না? (একটু থেমে) ঈশ্বরের পরে আমি আমার স্ত্রীকে শুধু ভালবাসি।

পত্রিকা: ধুস্, তা আবার হয় নাকি?

ব্যারেটো: বিশ্বাস করুন, ওকে ছাড়া আর কারও কথা কখনও মনে আসেনি। সুযোগও হয়নি বলতে পারেন। কলকাতায় আসার আগেই ভেরোনিকার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে যায়। না হলে হয়তো ভেবে দেখা যেত। অনেক বিদেশি ফুটবলারই তো ভারতীয় মেয়ে বিয়ে করেছে।

পত্রিকা: ময়দানে তো আপনি ‘সবুজ তোতা’। বাড়িতে?

ব্যারেটো: আরে... বন্ধুবান্ধবরা মাঝেমধ্যেই ওই নামে ডাকে। তবে বাড়িতে আমি ‘জোস’।

পত্রিকা: আরেকটা কথা।

ব্যারেটো: আবার কী! (হাসি) আর কিন্তু ভেরোনিকা না-থাকার সুযোগ নেবেন না।

পত্রিকা: আপনি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন?

ব্যারেটো: ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। কিন্তু দ্বিতীয় জীবন-টিবন... (মাথা নাড়লেন) না।

পত্রিকা: তাও ধরুন পুনর্জন্ম পেলেন। কী হতে চান?

ব্যারেটো: স্পোর্টসম্যানই হতে চাই। ফুটবলারই হতে হবে, তা নয়। অ্যাথলিট, গল্ফার যাই হই, স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই।

পত্রিকা: আর ফুটবলার হলে...

ব্যারেটো: মোহনবাগানে তো খেললাম। পুনর্জন্ম পেলে ইস্টবেঙ্গলে খেলতে চাই।

পত্রিকা: ভেবেচিন্তে বলছেন তো? এই কথাটা কিন্তু সবুজ-মেরুন জনতা ভাল ভাবে নেবে না।

ব্যারেটো: কলকাতা ফুটবল মানে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল। এ বার তো আমার সবটুকু উজাড় করে দিলাম মোহনবাগানে। পরের জন্মে না হয় ইস্টবেঙ্গলে খেলব। তাতে ক্ষোভের কী আছে?

পত্রিকা: ভারতে পনেরো বছরের ফুটবল-জীবনে আপনার দেখা সেরা বিদেশি?

ব্যারেটো: ইয়াকুবু। ওর পায়ে জাদু আছে। এত ভাল বল কন্ট্রোল আর কোনও বিদেশির (ভারতে খেলতে আসা) মধ্যে দেখিনি।

পত্রিকা: আর এ দেশিদের মধ্যে?

ব্যারেটো: ভাইচুং। টোটাল ফুটবলার। মেন্টর, দক্ষ নেতা, বন্ধু কী নামে ডাকব বুঝতে পারছি না। ফুটবলার অনেকেই হয়, কিন্তু ভাল নেতা, যে সামনে থেকে দাঁড়িয়ে দলকে গাইড করবে, পাওয়া খুব কঠিন। আমার কাছে নেতা ভাইচুং ফুটবলার ভাইচুঙের থেকেও অনেক বড়।

পত্রিকা: এ বারের দুই কোচের মধ্যে কাকে এগিয়ে রাখছেন, আর্মান্দো কোলাসো, না সুভাষ ভৌমিক?

ব্যারেটো: দুজনের ফুটবল বুদ্ধি নিয়ে কোনও তর্ক হতে পারে না। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে আমি কোলাসোকেই এগিয়ে রাখছি, যদি ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকে। কেননা সেট টিম পাবে। ভৌমিককে মোহনবাগানে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।

পত্রিকা: কলকাতায় পনেরো বছরে আপনার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত?

ব্যারেটো: (একটুও না ভেবে) মোহনবাগানের হয়ে যেদিন আই লিগ জিতলাম।

পত্রিকা: আর তিক্ততম?

ব্যারেটো: যে দুটো বছর মোহনবাগান ছেড়ে বাইরে চলে গিয়েছিলাম। উফ্, প্যাথেটিক! এখনও আফশোস হয়, যদি ওই দুটো বছর কাঁচি দিয়ে কেটে বাদ দিতে পারতাম! (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) প্লিজ এ বার থামুন। ব্রাজিলে আমার মাকে ফোন করতে হবে।

পত্রিকা: মাদার্স ডে-র শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন?

ব্যারেটো: ইয়েস। ভেরোনিকাকে বলেছিলাম মায়ের জন্য উপহারটা পছন্দ করতে। ও একটা ঘড়ি আর ফুলের তোড়া কিনেছিল। আমি ফোনেই মা-কে উইশ করেছি। সামনাসামনি মাকে খুব মিস করছিলাম। যদি ব্রাজিলে থাকতে পারতাম...

এক কথার সবুজ তোতা

ইস্টবেঙ্গল: বিরাট টিম

ভাইচুং ভুটিয়া: জাদু

ওডাফা ওকোলি: জাদু হতে পারতেন

করিম বেঞ্চারিফা: দক্ষ প্রশাসক

সুব্রত ভট্টাচার্য: (অনেক চিন্তা-ভাবনার পরে) ফাদার ফিগার

এ বারে ‘ফার্স্ট স্লিপ’ প্রকাশিত হল না। আগামী সপ্তাহে যথারীতি থাকবে।

pritam saha barreto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy