Advertisement
০৪ মে ২০২৪

‘প্রার্থনা’ সমর্পণের গানে

রামকৃষ্ণ মিশন আয়োজিত ‘মঙ্গলে সুন্দর’। রাহুল মিত্রের গান শুনলেন বারীন মজুমদারসম্প্রতি রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্ক আয়োজিত শিল্পী রাহুল মিত্রের কণ্ঠে ‘মঙ্গলে সুন্দর’ রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনার গানের একক অনুষ্ঠানের সূচনা হল অনুপম একটি ভাষ্যপাঠে। শিল্পীর এই ভাষ্য সে দিনের অনুষ্ঠানের মূল সুর বেঁধে দিল রবীন্দ্রগানের এই সন্ধ্যারতিতে! ‘শ্রী’ থেকে ‘কানাড়া’ রাগিণীতে নিবদ্ধ অসাধারণ ৪৪টি গান পরিবেশিত হল। প্রতিটি গানেই শিল্পী প্রত্যাশিত ভাবে নতুন প্রাণ সঞ্চার ঘটালেন।

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

সম্প্রতি রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্ক আয়োজিত শিল্পী রাহুল মিত্রের কণ্ঠে ‘মঙ্গলে সুন্দর’ রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনার গানের একক অনুষ্ঠানের সূচনা হল অনুপম একটি ভাষ্যপাঠে। শিল্পীর এই ভাষ্য সে দিনের অনুষ্ঠানের মূল সুর বেঁধে দিল রবীন্দ্রগানের এই সন্ধ্যারতিতে! ‘শ্রী’ থেকে ‘কানাড়া’ রাগিণীতে নিবদ্ধ অসাধারণ ৪৪টি গান পরিবেশিত হল। প্রতিটি গানেই শিল্পী প্রত্যাশিত ভাবে নতুন প্রাণ সঞ্চার ঘটালেন। ভাবনা ভিত্তিক গানে রাহুল ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন। এ দিনের গান নির্বাচন ও বিষয় বৃত্তান্ত শিল্পীর অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতোই আলাদা ও সুন্দর। গভীর চিন্তাপ্রসূত ও মর্মস্পর্শী। চুয়াল্লিশটি গানে সুর ও বাণীর ঝরনাস্রোত যেন সে দিনের পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে। প্রার্থনা ও সমর্পণের গানে। যে গভীর উপলব্ধি থেকে শিল্পী গান করলেন, সেখানে শ্রোতারা তাঁর সঙ্গে একাত্ম হতে বাধ্য।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে রাগের শাস্ত্রীয় ব্যবহারকে অতিক্রম করেছিলেন তা সর্বজনবিদিত। শিল্পী শুরু করলেন শ্রী রাগে আধারিত ‘আইল শান্ত সন্ধ্যা’ দিয়ে। এই হিন্দি ভাঙা গানটিতে রবীন্দ্রনাথ কথা ও সুরে যে ছবি এঁকেছিলেন, রাহুল তা পূর্ণ করলেন। এর পর বহুশ্রুত তেওড়া তালে ‘কার মিলন চাও’। ধ্রুপদের গম্ভীর মেজাজে যে ভাবে গানটি শোনালেন তাতে বোঝা গেল শিল্পী শাস্ত্রীয় রূপের মধ্যেই গানের বাণী সঠিক ভাবে অনুধাবন করেছেন। পর পর ‘তোমা লাগি নাথ’, ‘বর্ষ ওই গেল’ (পূরবী), ইমন-কল্যাণ ‘পূর্ণ আনন্দ’ প্রভৃতি সুগীত। এই পর্যায়ে ‘এ মোহ আবরণ’ বহু কাল মনে রাখার মতো। খাম্বাজে নিবদ্ধ গানগুলির মধ্যে মুক্তছন্দে ‘তোমায় নতুন করে’ অন্যতম নিবেদন। এর তালবদ্ধ রূপটিও শিল্পীর কণ্ঠে শোনা যায়। কাফি রাগে ‘আছ অন্তরে’, ‘প্রেমানন্দে রাখো’ এবং ‘কে বসিলে আজি’ সেরা নিবেদন। পরেই কী অনায়াসে মধ্য বিলম্বিতে গাইলেন বেহাগে নিবদ্ধ ‘কেন জাগে না’। ত্রিতালে সুরান্তরে ‘চিরসখা ছেড়ো না’ প্রায় অশ্রুত একটি গান। মধ্য-দ্রুত লয়ের একটি বন্দিশ যেন। ‘দেশ’ রাগে ‘অনিমেষ আঁখি’, ‘তুমি ছেড়ে’ মন আকুল করে। রাহুল সুর-লয়ের নিপুণ শিল্পী। দ্বিতীয়ার্ধের গানে লয়ের বৈচিত্র এনে মাতিয়ে দিলেন। এখানে রাগের কথা মনে আসে না। গানের বাণীতে মন আবিষ্ট হয় সুরের মায়ায়। গায়কি ও কণ্ঠের শক্তি তাঁর গানকেও ধারণ করে। কেদারায় ‘হৃদিমন্দির’, ‘স্বরূপ তাঁর’, ছায়ানটে ‘এই যে কালো’, ‘তোমারি সেবক’, স্বরলিপির অন্য সুরে ‘তোমারেই করিয়াছি’উল্লেখনীয়। রাহুল তাঁর প্রতিটি অনুষ্ঠানে নতুন কিছু নিবেদন রাখতে চান। শেষোক্ত গান সেই রকম, যেমন ‘এই যে কালোমাটির’, তিলক-কামোদে ‘মহানন্দে হেরো’, ‘মধুর রূপে’, ‘শান্তি কর’। হাম্বীরে ‘হরষে জাগো’, ‘এসেছে সকলে’। ঝিঁঝিট রাগে ‘তোমারি মধুর’, ‘শান্ত-হরে মম’। পরে ‘বাণী তব’ অনবদ্য। ‘যারা কাছে আছে’ অর্থবহ। কানাড়ার ‘তুমি জাগিছ’ উল্লেখযোগ্য। শেষে ‘আঁধারে সকলই দেখি’ মর্মস্পর্শী। এ দিন শিল্পীকে সহযোগিতা করলেন অম্লান হালদার, গৌতম দত্ত ও গৌতম চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barin mazumder rahul mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE