বিশ্বে এখন প্রতি আড়াই মিনিটে একটি করে নতুন প্রস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ছে। আর ১৭ মিনিট অন্তর একটি মৃত্যু। চিকিৎসা নতুন করে কি কিছু এগোল?
উ: এগোচ্ছে তো বটেই। কলকাতায় রোবোটিক সার্জারিও শুরু হয়েছে।
এ আবার কেমন সার্জারি?
উ: শরীরে খুব কম কাঁটাছেঁড়া (মাত্র পাঁচটি ফুটো) করতে হয়। সবটাই সেই রোবট করে থাকে। রক্তপাতও খুবই কম হয়। ব্যথা প্রায় হয় না বললেই চলে। সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় নেই। সবচেয়ে বড় কথা বেশি দিন হাসপাতালে শুয়ে থাকার প্রয়োজনই নেই। এমনকী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনেও ফিরে আসা যায়।
স্বাভাবিক জীবন মানে যৌনজীবনও?
উ: পঞ্চাশোধ্বর্র্ বয়সে এবং পারিবারিক ইতিহাসের কারণে প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা যেমন অনেক বেশি, তেমনই এই কারণে তাঁর যৌন জীবনের তো ইতি হয় না। রোবটের সাহায্য নিয়ে ‘রোবট অ্যাসিস্টেড রেডিকাল প্রস্টেটেক্টোমি’ (আর এ আর পি) করা যেতে পারে। এটি একটি রেভোলিউশনারি পদ্ধতি। এতে এতটাই সুক্ষ্ম ভাবে কাজ করা হয় যাতে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড-এর কোনও ক্ষতি না হয়।
রোবোটিক সার্জারি তো এখনও সে ভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। ব্যয়সাপেক্ষ। তাই সাধারণ মানুষ প্রস্টেট ক্যানসার থেকে দূরে থাকবেন কী ভাবে?
উ: দেখুন প্রাথমিক স্তরে এর কোনও রকম উপসর্গ থাকে না। তবে কয়েকটি লক্ষণ থাকে। যেমন বারবার প্রস্রাব করার ইচ্ছা, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসা এবং পিঠে ব্যথা।
এ রকম শারীরিক সমস্যা তো এমনিতেই হতে পারে!
উ: হতে পারে বা অনেকেরই হয়। কিন্তু যদি এর আগে পরিবারের কারও হয়ে থাকে তবে সাবধানে থাকতে হবে। অনেকেই জানেন না, টেক্সটাইল বা ফার্টিলাইজার কারখানায় কাজ করলে ক্যাডমিয়াম ধাতুর সংস্পর্শে অনেকেরই এই সমস্যা হতে পারে। হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের অন্য অনেক ক্ষতির সঙ্গে এই ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়। সূর্যের চড়া রোদ, ধূমপান ও সেক্সুয়ালি ট্র্যান্সমিটেড ডিজিজ থেকেও প্রস্টেট ক্যানসারের সূত্রপাত হয়।
তবে তো ‘প্রস্টেট হেল্থ চেক-আপে’ এই বিপদ টের পাওয়া যায়?
উ: অবশ্যই যায়। কিন্তু ক’জন আর করেন। ওই পরীক্ষায় যদি ‘পি এস এ’ পরীক্ষার ফল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখনই ইমেজিং পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়।
তখন অনেকেরই তো বিনাইন টিউমার ধরা পড়ে। অযথা ভয়ের কিছু থাকে না।
উ: সেটা বিনাইন টিউমার কিনা সেটার জন্যই তো পরীক্ষাটা জরুরি হয়। কিন্তু অনেকেই আসেন, ওষুধপত্র দেওয়া হয়। একটু কমলেই আর পরীক্ষার জন্য আসেন না। ব্যস, তলে তলে বিষ বাঁধা বাসে শরীরে।
প্রস্টেট ক্যানসার থেকে রক্ষা পেতে কোনও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই?
উ: এই ক্যানসার কেন হয় তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে কিছু পদক্ষেপ নিলে প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো যায়। মাছ বেশি করে খেতে হবে। মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। রান্নায় বেশি করে টমাটো খান। স্যালাডের টমাটো নয়। অলিভ তেলে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের পক্ষে উপকারী ফ্যাট থাকে। তবে এখন থেকেই রোজ গ্রিন টি খাওয়া অভ্যাস করুন। প্রস্টেট ক্যানসারের যম।
সত্যি সত্যি ক্যানসার হয়ে গেলে তখন করণীয় কি?
উ: ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে কিনা দেখি। যেটা আমরা ‘আর্লি স্টেজ’ বলি। তবে এর জন্য অবশ্যই এম আর আই ও আইসোটোপ বোন স্ক্যান করে নিশ্চিত হতে হয়।
এখন তো প্রস্টেট ক্যানসার হয়েছে কিনা নিশ্চিত হতে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে। সেটা কী?
উ: বর্তমানে এম আর আই-কে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ ধরা হচ্ছে। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও রেডিও সিগনাল ব্যবহার করা হয়। ফলে এম আর আই থেকে যে ছবি পাওয়া যায় তা কিন্তু নিখুঁত। ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকেই না। আমরা এই ছবি দেখেই ক্যানসারের বিস্তৃতি অনুমান করে নিতে পারি। বোঝা যায়, ক্যানসার প্রস্টেটের রেখা অতিক্রম করেছে কি না। এমনকী অন্য অঞ্চলে কোনও সেকেন্ডারি টিউমার আছে কি না।
আপনার কথামতো ‘আর্লি স্টেজে’ বিপদ থাকে না। তাই তো?
উ: হ্যা।ঁ পুরোপুরি রোগমুক্তি সম্ভব।
কিন্তু কী ভাবে?
উ: সেমিনাল ভেসিকল সহ পুরো প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটিকেই কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
পুরোপুরি বাদ? পরবর্তীতে রোগীর তো অসুবিধা হবে?
উ: সে তো হবেই। আগে তো জীবন। অসুবিধা বলতে অপারেশনের পরে প্রস্রাব ধরে রাখার অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। কারও কারও ইরেকটাল ডিসফাংসন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাও দেখা দেয়।
এই রোগ থেকে সত্যি মুক্তির আশা আছে?
উ: শুনতে আশ্চর্য লাগলেও কথাটা সত্যি যে ঠিকমত চিকিৎসা করালে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী শেষ পর্যন্ত মারা যান বয়সজনিত অন্য কোনও রোগে, ক্যানসারে নয়। এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ পৃথিবী খ্যাত বর্ণবিদ্বেষী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। ২০০১ সাল থেকে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি মারা যান শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কিছু অন্য জটিল রোগে।
যোগাযোগ-৯৮৩১১৭৭১৮৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy