Advertisement
E-Paper

ভায়োলেন্সের প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদ

‘ম্যাকবেথ’ নাটকটি দেখে এসে লিখছেন মনসিজ মজুমদারস্বর সঙ্গমের উদ্যোগে মঞ্চস্থ হল মণিপুরের কোরাস রেপার্টরি থিয়েটারের ‘ম্যাকবেথ’ (নাটক: শেক্সপিয়র। পরিচালনা: রতন থিয়াম)। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথের মতো হিরো নয়, দুর্মরতম ভিলেন মাত্র। পরিচালকের নিজের ব্যাখ্যায় উগ্র লিপ্সা একটি রোগ, যার নাম ম্যাকবেথ। একটি প্রক্ষিপ্ত দৃশ্যে এই রোগে বিধ্বস্ত নানা ম্যাকবেথকে দেখা যায় একটি আধুনিক হাসপাতালে। বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির এত উন্নতির দিনে এই রোগের থেকে মুক্তি নেই।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০০:১৩

স্বর সঙ্গমের উদ্যোগে মঞ্চস্থ হল মণিপুরের কোরাস রেপার্টরি থিয়েটারের ‘ম্যাকবেথ’ (নাটক: শেক্সপিয়র। পরিচালনা: রতন থিয়াম)। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথের মতো হিরো নয়, দুর্মরতম ভিলেন মাত্র। পরিচালকের নিজের ব্যাখ্যায় উগ্র লিপ্সা একটি রোগ, যার নাম ম্যাকবেথ। একটি প্রক্ষিপ্ত দৃশ্যে এই রোগে বিধ্বস্ত নানা ম্যাকবেথকে দেখা যায় একটি আধুনিক হাসপাতালে। বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির এত উন্নতির দিনে এই রোগের থেকে মুক্তি নেই। বস্তুত এই প্রযোজনা সাবেক অর্থে ম্যাকবেথের ট্র্যাজেডি নয়। ম্যাকবেথের স্বৈরাচারিতা, সন্ত্রাস, হিংসা ও হত্যার বলি যারা এই নাটক তাদের ট্র্যাজেডি। এই ট্র্যাজিক চেতনার উৎস সেনা-নিয়ন্ত্রিত মণিপুরে হিংসা ও হানাহানির পরিবেশ। থিয়ামের প্রায় প্রতিটি নাটকের মতো ‘ম্যাকবেথ’-ও এই মণিপুরী চেতনায় নিহিত ভায়োলেন্সের প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদ।

কিন্তু শেক্সপিয়র যে অনুপস্থিত তা বলা যাবে না। কিছু কাটছাঁট এবং দুটি প্রক্ষিপ্ত দৃশ্য সত্ত্বেও, আছে মূলনাটকের দৃশ্যপরম্পরা। কিন্তু শেক্সপিয়রকে তিনি নিজেরই তৈরি প্রাচ্য নাট্য ঐতিহ্যের ছাঁচে ঢালাই করেছেন। অতি সংহত নির্মিতি, ছবির মতো দৃশ্য রচনা, কুশীলবদের সাড়ম্বর সামন্ততান্ত্রিক পোশাক ও অস্ত্রশস্ত্র, তাদের দলবদ্ধ বা একক মঞ্চচারণার নিখুঁত কোরিওগ্রাফি, ঘাতবাদ্যের রূঢ় আওয়াজ সব মিলিয়ে উপস্থাপনায় ভাবগম্ভীর ট্র্যাজিক মেজাজ। আলো-আঁধারি পোশাকের লাল-কালো, গাঢ় লালে মোড়া ম্যাকবেথের শব আর ব্যাঙ্কোর সাদা প্রেতাত্মা প্রযোজনার ট্র্যাজিক অভিঘাতকে আরও ব্যঞ্জনাময় করে বর্ণোজ্জ্বল দৃশ্যময়তায়।

রতন থিয়ামের নাট্যকলা দৃশ্যপ্রধান। রিচ্যুয়ালের নানা আঙ্গিক জনজাতিক প্রাণশক্তিতে উদ্দীপ্ত, স্টাইলাইজড দেহভাষা ও অভিনয়। এমনকী নটনটীদের স্বরক্ষেপে একটা প্যাটার্ন আছে। ফলে গোটা প্রযোজনা এক নিটোল ঘটনাদৃশ্যের মিছিল। ভাষা মণিপুরী হলেও, মূল নাটকের সঙ্গে পরিচয় থাকলে সংলাপগুলি অনুসরণ করা যায়। কিন্তু প্রবল অন্তরের বিবেকের দংশনে বিপর্যস্ত, পাপাতঙ্কে বিবর্ণ ম্যাকবেথকে (সোমো) এই প্রযোজনায় এক একক মাত্রায় দেখতে পাওয়া যায় না।

সে দিন আমার
শিখা বসু

রাজার উপস্থাপনার ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ পা রাখল একশোতম পর্বে। সম্প্রতি কলামন্দির মঞ্চটি সাজানো হয়েছিল আকাশবাণীর এফ এম স্টুডিয়োর আদলে। নজরুল-রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল? গানের মধ্যে মিল ছিল কি কোথাও কোনও অদৃশ্য সূত্রে? এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই প্রথম পর্বে আসর জমালেন দুই বোন। নজরুলের গানে ইন্দ্রাণী সেন, রবীন্দ্রগানে শ্রাবণী সেন। শ্রাবণীর গলায় নরম কাব্যিক চিত্রময়তা, আর নজরুলের গানে আসর মাতালেন ইন্দ্রাণী। গানের সঙ্গে দুই বোনের মজাদার খুনসুটি, যন্ত্রীরা কার সঙ্গে ভাল বাজাচ্ছেন তাই নিয়ে ঝগড়া। শ্রাবণীর লাবণ্য ভরা পরিবেশন ‘ও যে মানে না মানা’ তো ইন্দ্রাণীর ‘সৃজন ছন্দে’, ‘আমার ব্যথা যখন’-এর পরে ‘উচাটন মন ঘরে’। পরে ‘আমার মন মানে না’ ও ‘ছাড়িয়া যেয়ো’। দ্বিতীয় পর্বে শুধুই রবীন্দ্রনাথ। আমরা কতটুকু চিনেছি রবীন্দ্রনাথকে। শিল্পীত্রয় শ্রীকান্ত আচার্য, লোপামুদ্রা মিত্র আর জয়তী চক্রবর্তী। এ পর্বে মন ভরল গানে। বিশেষ করে শ্রীকান্ত এবং লোপামুদ্রার সেরা নিবেদন ‘হৃদয় আমার’ কী যে চিত্রময়তা। লোপা গাইলেন ‘সে দিন আমার’। জয়শ্রী চক্রবর্তী গেয়েছেন ভাল। কিন্তু স্বরলিপির দিক থেকে বের হয়ে আরও-একটু প্রাণময় হতে হবে তাঁকে। তাঁর উপভোগ্য নিবেদন ‘প্রখর তপন তাপে’। আরও অনেক গানই ছিল, তবে অনুষ্ঠান শেষে সব ছাপিয়ে সব ভাসিয়ে কানে বাজতে থাকে শ্রীকান্ত আচার্যের অসামান্য নিবেদন ‘চোখের জলের লাগল জোয়ার’। দুটি পর্বেই শিল্পীদের সঙ্গে কথায় ও পাঠে ছিলেন রাজা।

পরম্পরার ঐতিহ্য

গুরু গিরিধারী নায়েকের পরিচালনায় ‘ওড়িশি আশ্রম’-এর ‘এক ওড়িশি সন্ধ্যা’র প্রথম নিবেদন ‘গুরু ব্রহ্মা, গুরু বিষ্ণু’ ব্রহ্মসঙ্গীতটির নৃত্যাভিনয়টি চিরাচরিত গুরু-শিষ্য পরম্পরার ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ওই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পরিবেশনা ছিল ‘মঙ্গলাচরণ’। এর পর সুজাতা নায়েকের একক অভিনয় ‘প্রিয়ে চারুশীলে’ শিল্পীর দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করে। ‘মোহনা পল্লবী’তে ছোট্ট অহনা বসু যথেষ্ট আশা জাগায়। ‘অর্ধনারীশ্বর’-এ সুজাতা নায়েক ও রঘুনাথ দাস অনবদ্য। ‘ধারা শ্রীরাধা’য় সুমেধা সেনগুপ্তের ‘কৃষ্ণ’ ও সুজাতা নায়েকের ‘রাধা’ পরিবেশনাগুণে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। এ ছাড়াও উল্লেখ করতেই হয় গুরু গিরিধারী নায়েকের পাখোয়াজ বাদন ও কণ্ঠসঙ্গীত সহযোগে দেবাশীষ সরকারের অসামান্য মেলবন্ধনের প্রসঙ্গ যা অনুষ্ঠানটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছিল।

গানের অংশই উপভোগ্য
শিখা বসু

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ প্রথম ভাগে ছিল শ্রুতিনাটক রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’। দ্বিতীয়াংশে ছিল রবীন্দ্রগান ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতে ধ্রপদী গানের প্রভাব’। শ্রুতিনাটকে ছিলেন জগন্নাথ বসু, কাজল সুর এবং অপালা বসু, যথাক্রমে সন্দীপ, নিখিলেশ আর বিমলার ভূমিকায়। এঁরা স্বভাবতই ভাল পাঠ করেন। শ্রোতাদের মন জয়ের ক্ষমতাও করায়ত্ত। কিন্তু এ দিন কেন জানি না, নাটক জমে উঠল না ঠিক মতো। তবুও চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।

দ্বিতীয়ার্ধের রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর বরং তুলনায় উপভোগ্য। শিল্পীরা হলেন অনুরাধা বিশ্বাস, মাধবী দত্ত, সুমন ভট্টাচার্য, সঞ্জয় ভট্টাচার্য। সকলেই তাঁদের গায়কিতে ছিলেন আন্তরিক। ‘মহারাজ একি সাজে’ সমবেত গানে গলা একটু খোলামেলা হলে আরও জমত। পর পর দুটি নারীকণ্ঠের গান ‘আজি মম জীবনে’ এবং ‘মোরে বারেবারে’ সুগীত। পুরুষকণ্ঠে ধ্রুপদাঙ্গের গান ‘বাণী তব ধায়’। এর পর ধামার পর্যায়ের গান ‘হরষে জাগো আজি’ সুগীত। ভাষ্যপাঠে মধুমিতা বসু আর অনিন্দিতা কাজি মন টানেন। আয়োজক আন্তরিক।

nana rakom
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy