Advertisement
E-Paper

মাধুরীর বিড়ম্বনা

ফিরে পেতে চাইছেন হারানো সিংহাসন। বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সময়। ব্যর্থ বারবার। লিখছেন আভা গোস্বামী।ফিরে পেতে চাইছেন হারানো সিংহাসন। বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সময়। ব্যর্থ বারবার। লিখছেন আভা গোস্বামী।

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০০:০০

২০০২। দেবদাস-এর সাফল্যের পর মাধুরী দীক্ষিত যখন সেলুলয়েড থেকে বিদায় নিলেন, গোটা ইন্ডাস্ট্রি কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। ভাবনাটা এই যে, এ বার কী হবে! প্রতিভা, সৌন্দর্য, তার সঙ্গে দুর্ধর্ষ নাচের এমন মিশেল তা’ও একজনের মধ্যে, আর তো কারও নেই! তা হলে? জায়গাটা ভরাট হবে কাকে দিয়ে?

নিঃসন্দেহে, ইন্ডস্ট্রির কাছে সেটা ছিল এক বিশাল ক্ষতি। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। মাধুরী নিজেই তখন তাঁর কেরিয়ারের বিনিময়ে বেছে নিয়েছিলেন তাঁর পরিবার, তাঁর ডাক্তার স্বামীকে।

কাট টু ২০১৩। অভিনয়ের পোকাটা আবার মাধুরীকে কুরে কুরে খেতে লাগল। তখন ক্যামেরার সামনে ফিরে আসাটায় ওঁর এত ইচ্ছে ছিল যে, সুদূর ডেনভার থেকে নেনে-পরিবার বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে সোজা হাজির হয়েছিলেন মুম্বই। প্রায় একই রকম কাণ্ড ঘটেছিল ২০০৭-এ। তখন যশরাজ ফিল্ম মাধুরীকে অফার দেয় ‘আজা নাচলে’-র জন্য। কিন্তু তখন অবশ্য মাধুরী ফিল্মটাকে ভারতে ছুটির ফাঁকে একটা কাজ হিসেবেই দেখে ছিলেন।

তো, এই মুহূর্তে মাধুরীর কেরিয়ারের অবস্থাটা কী?

ছোট্ট কথায় বলতে গেলে, সব রকমের চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর কেরিয়ার এখনও উড়ান দেওয়ার অপেক্ষায়।

অনুষ্কা, আলিয়া, পরিণীতি, দীপিকাদের জমানায় মাধুরী দীক্ষিত পায়ে পায়ে হোঁচট খাচ্ছেন। তার মধ্যেই ‘দেড়ইশকিয়া’ আর ‘গুলাব গ্যাং’ করেছেন। দুটো ফিল্মই সুপারডুপার ফ্লপ।

বহু বছর বাদে মাধুরী যখন ইন্ডাস্ট্রিতে ফেরার রাস্তা খুঁজছেন, তখন সেই বলিউডের মধ্যে একটা বড়সড় পরিবর্তন ঘটে গেছে। বিশেষ করে গত এক দশকে। ফলে তাঁর সব রকমের চেষ্টা একেবারেই বিফলে যাচ্ছে।

মার্কিন চিত্রপরিচালক বিলি ওয়াইল্ডার্সের ছবি ‘সানসেট বুলেভার্ড’-এর কথা মনে পড়ে? সেখানে গ্লোরিয়া সোয়ানসন-এর চরিত্রটার কথা খেয়াল করুন। এক অভিনেত্রী। যিনি কি না, তাঁর সোনার সময়টা পিছনে ফেলে এসেছেন, তবু ভেবে চলেছেন, এখনও তাঁর মধ্যে যা আছে, তা দিয়েই তিনি শিখর ছুঁতে পারেন। মাধুরীর হয়েছে সেই দশা। কিছুতে বুঝতেই পারছেন না, ২০০২-এ যখন তিনি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে কার্যত বিদায় নিলেন, তখন মোবাইল ফোন ছিল লাক্সারি। আর আজ, এই ২০১৪-য় দাঁড়িয়ে? আপনি কখনও এ কথা বলতে পারবেন? পরিবর্তনের এই তীব্রতাটা মাধুরীকে বুঝতেই হবে।

এবার দেখা যাক, নিজের পড়তি দশা মেরামতির জন্য মুম্বইয়ে ফিরে এসে মাধুরী কী কী করেছেন?

মুম্বইয়ে আসার পরে পরেই শুরু করলেন নাচের স্কুল (গোড়ার দিকে যা ছিল একেবারে খবরের চুড়োয়। আর এখন? একেবারেই তা নয়।)। যেখানে উৎসাহীদের বলিউডি নাচ শেখানো হবে।

এর পর কী করলেন? তাঁর ডাক্তার স্বামীকে সঙ্গে করে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি নিয়ে একটা হাসপাতাল চালু করবেন বলে কিছু টাকাপয়সা জোগাড় করলেন (হাসপাতালের ভবিষ্যৎ নিয়ে নেনে-পরিবারের কাছ থেকে এখনও অবধি কিছুই জানা যাচ্ছে না)।

তার পর? তাঁর বহু বছরের বিশ্বস্ত ম্যানেজার, বলতে গেলে তাঁর কেরিয়ারের গোড়ার পর্ব থেকে যিনি ছিলেন ছায়াসঙ্গী, সেই রিক্কু রাকেশনাথকে ছেঁটে ফেললেন। তার জায়গায় দায়িত্বে আনলেন ‘ম্যাট্রিক্স বে’ নামের একটি ব্যবসায়ী সংস্থাকে। যারা কি না তাঁর ব্যবসাপত্র, কাজকর্ম, এনডোর্সমেন্ট ইত্যাদি দেখবে।

সব মিলিয়ে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, ইন্ডাস্ট্রিতে যে সব অদলবদল ঘটে গেছে, তার গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে চাইছেন মাধুরী। যে জন্য সাততাড়াতাড়ি বেশ কিছু অদলবদল ঘটিয়ে, ক্ষমতার মুকুটে আরও কিছু পালক-টালক জুুটিয়ে ইন্ডাস্ট্রির মূলস্রোতে ফিরতে চাইছেন তিনি।

কিন্তু এই সব করতে গিয়ে খুব বিশ্রী ভাবে রিক্কুকে ছেঁটে ফেললেন। কোন রিক্কু, যে কি না তিরিশ বছর ধরে মাধুরীর পাশে ছিলেন। যাঁর জন্য ‘রাম লখন’, ‘তেজাব’, ‘ত্রিদেব’, ‘পারিন্দার’র মতো ছবি করতে পেরেছেন তিনি। ’৮০ কি ’৯০-এর দশকে ‘মাধুরী দীক্ষিত’ গড়ে তোলার পিছনে যাঁর ভূমিকা বেশ বড় মাপের। এমনকী বলিউডে যে বদলের হাওয়া বইছে তার জন্য ক্ষতির শিকার হয়েছেন রিক্কু নিজেও।

বলিউডে নিজের উপস্থিতিটা টের পাইয়ে দেওয়ার জন্য সব চেয়ে ভাল উপায় হল বড় ব্যানারের নীচে কাজ করা। মাধুরীর ক্ষেত্রে যেটা ছিল করণ জোহরের ধর্মা প্রোডাকশন। মাধুরী তাই করলেন।

একটা স্পেশাল আইটেম নাম্বারে এখনকার অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম হার্টথ্রব রণবীর কপূরের সঙ্গে নাচ। নিশ্চিত করেই যা ছিল খবরে ফিরে আসার বা বলিউডের ট্রেড সার্কেলে নিজের উপস্থিতি টের পাইয়ে দেওয়ার জন্য মাধুরীর পক্ষে যথেষ্ট। উঠতি প্রযোজক বা পরিচালকদের কাছে বার্তাও গেল মাধুরী আবার ফিরে এসেছেন।

ঘটনাটা সবচেয়ে উত্তেজিত করে দিয়েছিল সেই সব চিত্র পরিচালককে, যাঁরা কি না ’৮০ আর ’৯০ দশকে মাধুরী দীক্ষিতের ফিল্ম দেখতে দেখতেই বড় হয়ে উঠেছেন। অভিষেক চৌবে আর সৌমিক সেন হলেন তেমনই প্রজন্মের দুজন পরিচালক।

অভিষেক মাধুরীর কাছে গিয়েছিলেন তাঁর ‘দেড় ইশকিয়া’ ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন মাধুরী। ‘গুলাব গ্যাং’-এর জন্য অবশ্য সৌমিককে অপেক্ষা করতে হয় কম সে কম তিন ঘণ্টা।

দুটো ছবিতেই মাধুরী একেবারে মুখ্যচরিত্রে। ‘দেড় ইশকিয়া’র যেখানে তাঁর সৌন্দর্যের সঙ্গে নাচের ক্ষমতায় আলো ফেলল, সেখানে ‘গুলাব গ্যাং’ ছিল অভিনয়ের ক্যারিশমায়। কিন্তু দুটো ছবিই মাধুরীর ‘কামব্যাক’-এর পক্ষে ঠিক গেল না। বক্সঅফিসে বিন্দুমাত্র কোনও প্রভাবই ফেলল না।

কথা হচ্ছিল ট্রেড-অ্যানালিস্ট আমোদ মেহরার সঙ্গে। তাঁর মতে, ও দুটোর একটাও মাধুরীর পক্ষে কোনও কামব্যাক-এর ব্যাপারই ছিল না। বক্স অফিস অন্তত সেই কথাই বলে। মাধুরী এখন যেটা করে যাচ্ছেন, তা হল, টেলিভিশন শো আর এনডোসর্মেন্টের কাজকম্ম। মাধুরীকে নিয়ে ছবির ব্যাপারে কোনও প্রযোজকই এখন আগ্রহী নন।

অনেকেরই মতে, মাধুরী বুঝতে পারছেন না, এখন তাঁর চলা উচিত অনেকটা টাবুর মতো। হিরোইনের রোল ছেড়ে টাবু এখন দিব্যি বিশাল ভরদ্বাজের নতুন ছবি ‘হায়দার’-এ শহিদ কপূরের মায়ের ভূমিকায় কাজ করলেন। লিড রোল ছেড়ে ক্যারেকটার রোল করে টাবু বেশ খুশিও। এতে করে তাঁর অভিনয় দেখানোর কিছুটা সুযোগ তো পাচ্ছেন। বলাবাহুল্য, যদি ‘হায়দার’ সফল হয়, আর টাবুর চরিত্রটা প্রশংসিত হয়, আরও কিছু ছবির কাজ পেতে টাবুর কোনও অসুবিধে হবে না।

জুহি চাওলার উদাহরণ দিলেন ফিল্ম রাইটার দিলীপ ঠাকুর। বললেন, “জুহিকে দেখুন। বোনের চরিত্র কী শালীর চরিত্রে কী ভাবে কাজ করে চলেছেন। জুহি এখনও যথেষ্ট ব্যস্ত তাঁর ফিল্ম নিয়ে। অন্য দিকে দর্শকও তাঁকে নিচ্ছে, অসুবিধে নেই সেখানেও। ঘটনা হল, ‘গুলাব গ্যাং’-এ মাধুরীর চেয়ে টাবুর অভিনয়ই বেশি প্রশংসা পেয়েছে। নতুন পরিচালকদের কাছে মাধুরী এখনও নিশ্চয়ই সেই ‘ধক্ ধক্’ মাধুরীই আছেন, কিন্তু ট্র্যাডিশনাল দর্শক প্রত্যেকটা ‘ঝলক’ অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে তাঁর নাচ পছন্দ করেছেন না। শো-এ মাধুরী অতটা নিজেকে প্রজেক্ট না করলেই বোধহয় ভাল।”

দিলীপ ঠাকুরের মতে, মাধুরী প্রায় পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু সেই তুলনায় তিনি যথেষ্ট মেনটেন্ড। তাঁর জাদুময়ী হাসি এখনও অন্যকে মোহিত করে দেবার পক্ষে যথেষ্ট, “কিন্তু সেন্ট্রাল রোল পাওয়ার জন্য ওর এই চেষ্টা করে যাওয়াটা ঠিক না। তাছাড়া চল্লিশের ওপর বয়েসের সে রকম লিড রোলই বা কোথায়?”

বলিউডের ধারণা, শ্রীদেবী ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ করে বেশ সফল একটা ‘কামব্যাক’ করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে মেহরা অন্য একটা কথা বললেন। তাঁর মতে, “কামব্যাক ব্যাপারটা কিন্তু তখনই হয়, যখন পর পর ছবির কাজ আসে আর হিট হয়। শ্রীদেবী ফিরে এসে একটাই ছবি করেছেন মাত্র। এটাকে ঠিক ‘কামব্যাক’ বলে না। শ্রীদেবীর পরের ছবিটাও যদি রিলিজ করে এবং হিট হয়, তবেই না সেটা কামব্যাক।”

মাধুরী কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না, বাজারটা এখন বেশ বড় আর ভিড়ে ঠাসা। তার ওপর সুন্দর দেখতে অভিনেতা, বা সত্যিকারের মাথাওয়ালা অভিনেতারও কোনও কমতি নেই আজকের বলিউডে। আর মাধুরীর সব চেয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওর বয়স। মাধুরী তাও চেষ্টা করে যাচ্ছেন, এখনও বলিউডে আগের মতোই ফিরে আসতে এবং লিড রোলে। তাতে ওঁর নাছোড় মনের প্রকাশ পাচ্ছে বটে কিন্তু লাভের লাভ হচ্ছে না।

হলিউডে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে, যখন অভিনেত্রীরা বয়েসটাকে মেনে নিয়ে, প্রথম সারি থেকে সরে এসে দাঁড়িয়েছেন পিছনের দিকে। তাতে সাফল্যও এসেছে। অত দূরও যেতে হবে না, শ্রীদেবীর কথাই ধরুন না। এত বছর বাদে এত বয়েসে ফিরে তিনি কী ধরনের ফিল্মে এলেন। কী অসাধারণ একটা ফিল্ম, যা তাঁকে ঘর থেকে বার করে আবার ইন্ডাস্ট্রিতে এনে ফেলল।

বলিউডের ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেরই ধারণা, এবার বোধহয় মাধুরীর সময় এসেছে, একটু শান্ত হয়ে ধীরেসুস্থে বাস্তবটাকে মেনে নেওয়া। দর্শককে সৌন্দর্য বা নাচ দিয়ে মুগ্ধ করতে ইন্ডাস্ট্রিতে লোকজনের কোনও অভাব নেই, কিন্তু অভিনয়ে যেটা হয়তো বা আছে। মাধুরী জাত অভিনেত্রী। বার বার তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তাকে ভরসা করেই তাঁর ভবিষ্যতের লাইনআপ ঠিক করতে হবে। সেখানে যদি একটা ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ থাকে, মাধুরী তবেই ফিরতে পারবেন। তবে অন্য ঢঙে। ‘ধক্ ধক্’ মাধুরীর আর ফেরার কোনও জায়গাই নেই আজকের বলিউডে।

madhuri dixit ava goswami
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy