কপিরাইট উঠে যাওয়ার পরেও তিনি যে রবীন্দ্রগানকে স্বমহিমাতেই রেখেছেন প্রতিনিয়তই তার প্রমাণ পাই। সম্প্রতি রবীন্দ্র ওকাকুরায় স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের একক অনুষ্ঠান ‘এক রবীন্দ্রমগ্ন দোভাষীর আপন মনের ডায়রি’ প্রসঙ্গে এই কথা। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্যালাক্সি’তে তিনি বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। যে গানগুলি তিনি নির্বাচন করেছিলেন তার সর্বাগ্রে ছিল বহুশ্রুত ‘আমি যখন তাঁর দুয়ারে’ ও পরিশেষে ছিল ‘পথ চেয়ে যে কেটে গেল’। প্রতিটি মূল গানের পরেই অনূদিত গানগুলি গীত হয়েছে এবং এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যা এক সূত্রে বাঁধা। গায়কও তিনি, যন্ত্রীও তিনি। গানের ‘প্রিলিউড’ ও ‘ইন্টারলিউড’ একেবারে গানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই। সব কটি গানের মধ্যে রাবীন্দ্রিক সুরের যে রূপটি পাওয়া গেল তা মধুর ব্যঞ্জনাময়, তৃপ্তিকর। স্বীকার করতেই হবে ‘আমি যখন তাঁর দুয়ারে’ গানটিতে যেমন কণ্ঠস্বর ও গভীরতা দাবি করে স্বাগতালক্ষ্মীর মধ্যে তার সবটুকু পেয়ে যাই। ‘বাজে করুণ সুরে’ অন্তর্নিহিত রূপটিকে যেন নিংড়ে আনলেন শিল্পী। আয়োজক ‘অশোকরেণু’।
একক গানের বাহবা
শিখা বসু
একক গানে সুপ্রতীক দাস জি ডি বিড়লা সভাঘরে শোনালেন রবীন্দ্রসঙ্গীত সহ বিভিন্ন ধরনের বাংলা গান। সঙ্গে আড্ডার সূত্র ধরিয়ে দেবার জন্য ছিলেন অতি চমৎকার এক কথক (ঘোষণা না হওয়ায় যাঁর নাম জানা গেল না)। রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘কার মিলন চাও’ দিয়ে শুরু। তারপর নজরুল, ডি এল রায়, হেমন্ত, মানবেন্দ্র, ধনঞ্জয়, শচীনকর্তা কার না গান ছিল সেদিন শিল্পীর ঝুলিতে। রবীন্দ্রসঙ্গীত তুলনায় ঈষৎ ম্লান হলেও বাকি গানে সেদিন তিনি ছিলেন স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। অথচ প্রত্যেক গায়কের গায়নভঙ্গি মিশেছিল তাঁর নিবেদনে। এই সন্ধ্যার সব সেরা নিবেদন কোনটিকে যে বলি ভাবতে হয়। কী ভাল যে গাইলেন শচীন দেব বর্মনের ‘শোন গো দখিন হাওয়া’। বারবার শুনতে ইচ্ছে করে। শ্যামল মিত্রের ‘ওই আঁকাবাঁকা’, মানবেন্দ্রর ‘মনে নয় বনে মোর’, ধনঞ্জয় কণ্ঠের ‘ওই ঝিরঝির বাতাসে’ ত্রিশ চল্লিশ বছর আগের রাতভর জলসার নস্ট্যালজিয়াকে জাগিয়ে তোলে। ভাল গাইলেন ডি এল রায়ের ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার হতে’ একদা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র গাওয়া সেই বিখ্যাত গান। ‘পাগলা মনটারে তুই বাঁধ’ মাত্র এক লাইনের এই অতুলপ্রসাদী গানে যদিও একেবারেই মন ভরল না।
আপন বর্ণমালায়
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে চারুকণ্ঠ’র ‘বিশেষ সংস্কৃতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ঈশিতা দাস অধিকারী শোনালেন কেশবরঞ্জনের ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’, তসলিমার ‘কলকাতা প্রিয় কলকাতা’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘হোরিখেলা’ এই তিনটি কবিতা। সঙ্গে নৃত্যে ছিলেন শিঞ্জিনী সরকার। বিদিতা ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্গে শ্রীলগ্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৃত্য, কেশবরঞ্জনের ‘আপন বর্ণমালা’ নিয়ে আবৃত্তিকার কঙ্কনা সরকারের ‘এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাপ্রোচ’।
রবীন্দ্র কবিতায় ছিলেন অরুণাভ বিশ্বাস। এ ছাড়াও ছিল বাসব দত্ত মজুমদারের দুটি তাল ছন্দের কবিতা। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণা মজুমদার, দীপক মুখোপাধ্যায় ও কৃষ্ণকলি বসু।
এখনও অনন্য
গিরিশমঞ্চে গাইছিলেন তিনি ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’। আধুনিক নয়, রবীন্দ্রগানেও তিনি সমান পারদর্শী। তিনি বনশ্রী সেনগুপ্ত। এখনও কণ্ঠ কত সতেজ ও সুরেলা।
এ দিন তিনি আরও কয়েকটি গান শোনালেন শ্রোতাদেই অনুরোধে। শিল্পীর পরে গাইলেন অচিন মুখোপাধ্যায় ‘শুধু তোমার বাণী’। গানটি শিল্পীর কণ্ঠে অন্য মাত্রা পায়। সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ‘বাদল মেঘে মাদল বাজে’। আয়োজক-কসবা সঞ্চারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy