Advertisement
E-Paper

লোহিত কণায় প্রেম

রক্তে যেন কেউ প্রেমের বীজ বুনে দিয়ে ছিল কৈশোরে। ওঁর প্রেমিকাদের কথা লিখছেন বীথি চট্টোপাধ্যায়কমপ্যানি অব উওমেন’ নামে জনপ্রিয় একটা উপন্যাস লিখেছিলেন খুশবন্ত সিংহ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন তাঁর জীবনে নানা পর্বে আসা মহিলাদের কথা। সেই মহিলাদের প্রভাবের কথা। রুশদি সোচ্চারে তাঁর প্রেমিকাদের নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান। এই তুলনায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজের কৈশোর আর যৌবনের দুটি মাত্র বিবাহপূর্ব প্রণয়ের উল্লেখ করেছেন নিজের লেখায়।

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৫

কমপ্যানি অব উওমেন’ নামে জনপ্রিয় একটা উপন্যাস লিখেছিলেন খুশবন্ত সিংহ।

সেখানে তিনি লিখেছিলেন তাঁর জীবনে নানা পর্বে আসা মহিলাদের কথা। সেই মহিলাদের প্রভাবের কথা।

রুশদি সোচ্চারে তাঁর প্রেমিকাদের নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান। এই তুলনায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজের কৈশোর আর যৌবনের দুটি মাত্র বিবাহপূর্ব প্রণয়ের উল্লেখ করেছেন নিজের লেখায়।

বছর দশেক আগে একবার মার্কিন মুলুকের আনন্দবাজারেরই সাহিত্যমঞ্চে এক সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন যে, নিজের বিয়ের আগের কয়েকটি প্রেম নিয়ে তিনি স্পষ্ট করে লিখেছেন। কিন্তু বিয়ের পরের প্রেমিকাদের কথা খোলাখুলি লেখেননি। কবিতায়, কাহিনিতে সেই সব প্রেম আর প্রেমিকাদের কথা আভাসে আছে।

নিজের স্ত্রীর সঙ্গে তিনি স্বচ্ছন্দ থাকতেন, অনেকটা পথ একসঙ্গে চলার পরে একটা সন্তর্পণ স্পিরিট আসে যে কোনও সম্পর্কেই। কিন্তু নিজের বিয়ের পর লক্ষ লক্ষ অক্ষর লিখেছেন সুনীল। তবুও কোথাও এমন একটিও মুদ্রিত কথা নেই যেখানে তিনি তাঁর বিবাহ-পরবর্তী কোনও প্রেমিকার কথা সরাসরি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমার দেখা যদি ভুল না হয়, তাহলে জীবনের অন্তিমপর্ব পর্যন্ত অন্য মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিশেষ যোগাযোগ ছিল। তাঁর জীবনের শেষ পর্বে যাওয়ার আগে একটু ওঁর প্রথম জীবনের কথা বলছি।

সুনীল বেশ কয়েক বছর আগে একটা গল্প লিখেছিলেন। সেই গল্পে একজন প্রৌঢ় লোক বাজার করতে গিয়ে হঠাৎ কামরাঙা দেখে কিনে ফেললেন তাড়াহুড়ো করে। এতে সেই প্রৌঢ় লোকটির এমন আনন্দ হল যে তিনি রাজ্যজয়ের খুশি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।

বাড়ির সকলকে ডেকে ডেকে দেখাতে লাগলেন কচি সবুজ ফলগুলি। বাড়ির কেউ তেমন উচ্ছ্বাস দেখাল না।

ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী যে যার জগতে ব্যস্ত। শুধু এই প্রৌঢ় মানুষটি এমন একটি খুশিতে ডুবেছিলেন যে তাঁর মনে হচ্ছিল ফলগুলি কারও সঙ্গে ভাগ করে খেতে পারলে ভাল হত।

প্রচণ্ড টক ফলটি খেতে খেতে তাঁর মনে পড়ছিল নিজের কৈশোরের এক গভীর অপমানের কথা।

মনে পড়ে যাচ্ছিল তাঁর কৈশোরের একটা দিন। সেদিন পাড়াতুতো এক দিদি আর তার প্রেমিক গাছতলায় একটা নিরিবিলি জায়গায় প্রেম করছিল। এমন সময় সেখানে এসে পড়েছিলেন আমাদের কাহিনির সেই প্রৌঢ়টি। তার তখন কিশোর বয়স। চোদ্দো বা পনেরো।

তিনি পাড়াতুতো দিদির মতো মেয়েটিকে মনে মনে শ্রদ্ধা করতেন। শ্রদ্ধা করতে করতে ভালবেসে ফেলেছিলেন লুকিয়ে। জানতেন কাউকেই বলতে পারবেন না এই ভালবাসার কথা। সেই ভালবাসার মেয়েটিকে প্রেমিকের সঙ্গে দেখে ছোট ছেলেটি গুটি গুটি এগিয়েছিল ওদের দিকে। কিছুটা ঈর্ষা কিছুটা কৌতূহলে।

ছেলেটি দেখেছিল মেয়েটির কোলের কাছে অনেকগুলি কামরাঙা ফল। প্রেমিকযুগলও হঠাৎ দেখতে পেয়েছিল ছেলেটিকে। ছোট ছেলেটিকে দেখে সেই মেয়েটির প্রেমিক একটি কামরাঙা ফল হাতে তুলে নিয়ে ছেলেটির দিকে ফলটা ছুড়ে দিয়ে মোটা গলায় বলেছিল, ‘যা ভাগ’।

সেই কিশোর ছেলেটির তখন প্রবল অভিমানে মনে হয়েছিল সে তো ফল চাইতে আসেনি, কেনই বা এসেছিল তবে? এবং কাহিনিতে প্রৌঢ় চরিত্রটি কামরাঙা ফলে কামড় বসিয়েই চমৎকৃত হয়েছেন যে সেই কবেকার এক অজ পাড়াগাঁয়ের একটি স্মৃতি কত বছর পরেও ক্ষত হয়ে রয়ে গিয়েছে। সেই পাড়াতুতো দিদিকে হয়তো আর চিনতেই পারবেন না দেখলে। কিন্তু দিদির প্রেমিকের সেই আস্ফালন ছবির মতো মনে আছে।

এই ছোট গল্পটায় সুনীল তাঁর কৈশোরের এক প্রেমিকাকে কাহিনির আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন— এটা উনি বলেছিলেন একটা ঘরোয়া আসরে। মনোমত পরিবেশ হলে উনি অনেক সময় অনেক খাঁটি কথা বলতেন খুব আবেগের সঙ্গে।

সবে শৈশব পেরিয়েই পূর্ববঙ্গের গ্রামের একটি বয়সে বড় মেয়ের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

মেয়েটি এক দিন স্নান করে ঘরে ফেরার পথে তাঁকে গাছ থেকে কয়েকটি ফল পেড়ে দিতে বলেছিল।

তিনি তখন বেশ বেঁটেখাটো আকৃতির। কিছুতেই গাছের নাগাল পাচ্ছিলেন না।

সুনীল বলেছিলেন, “গাছ থেকে ফল পাড়ার এক রকম লাঠি থাকে যাকে আঁকশি বলে, সেই মেয়েটির হাতে একটা আঁকশি ছিল। আমি সেই আঁকশি নিয়ে চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই নাগাল পেলাম না। গাছে উঠে ফল পেড়ে দিতে যাব এমন সময় মেয়েটির প্রেমিক চলে এল। সে স্বভাবতই বয়সের কারণে লম্বা। ফটাফট করে কয়েকটা ফল পেড়ে একটা ফল আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে ছেলেটি খুব তাচ্ছিল্য করে আমায় বলেছিল, যা ভাগ। সেইটা আমার এখনও মনে আছে।”

উনি বলেছিলেন, পূর্ববঙ্গের সেই মেয়েটি গ্রামের মধ্যে একটু লেখাপড়া করত। মাজামাজা রং, অন্য মেয়েদের থেকে তুলনায় একটু সাহসী, প্রতিবাদী ধরনের ছিল সেই মেয়ে। শৈশব পেরোনো বয়সে সেই মেয়েকে ভালবেসেছিলেন সুনীল।

তার পর দেশ স্বাধীন হল। দেশ বিভাগ এল মানুষের জীবনে। মানুষ মনে মনে রক্তাক্ত হতে হতে সেই দেশ বিভাগ দেখল। তাছাড়া আর কিছু করারও ছিল না বুঝি সাধারণ মানুষের। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে শুরু হল মানুষের নতুন জীবন। নতুন সেই যুগে মানুষ যেন একটু দিশেহারা।

আমাদের যাদের জন্ম স্বাধীনতার বেশ কিছু বছর পরে তবুও আমরা দেখেছি তখনও দেশ বিভাগের একটু একটু দুঃখের ছাপ লেগে আছে বাংলার অনেক গৃহস্থ বাড়িতে।

এই দেশবিভাগের ফলে যাদের জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেল সুনীল বোধ হয় তাঁদের অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন। কলকাতায় সুনীল ও তাঁর পরিবার উদ্বাস্তু।

আমার দেখা অনুযায়ী এই বাস্তু হারাবার বেদনা, শক্তি এবং স্বভাব তাঁর মধ্যে আমৃত্যু ছিল। তাঁর প্রেমের ভিতরেও তাঁর উদ্বাস্তু ব্যক্তিত্ব ছায়া ফেলেছে গাঢ় ভাবে। যেমন তুচ্ছ কারণে প্রেমিকাদের প্রতি বিরক্ত বোধ করতেন তিনি। কখনও সেই বিরক্তি থেকে লিখেও ফেলতেন— ‘ভালবাসা চলে যায় এক মাস সতেরো দিন পর।’

কিন্তু এই কথা বোধ করি তাঁর নিজের জীবনেও সত্যি হয়নি। তাঁর মধ্যে এবং প্রেমিকাদের প্রতি তাঁর ব্যবহারের মধ্যে মাঝে মাঝে একটা অধৈর্যতার ভাব আসত।

তাঁর কোনও হ্যাংলামি ছিল না মেয়েদের নিয়ে। কোনও মেয়ের জন্য নিজের অমূল্য জীবনকে থামিয়ে দেবার মানুষ তিনি ছিলেন না বলেই তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল।

তিনি বলতেন, তিনি নিজের জীবন কারও জন্য নষ্ট করেননি। জীবন দুর্মূল্য, এই শিক্ষা নাকি তিনি তাঁর উদ্বাস্তু জীবন থেকেই পেয়েছিলেন।

তিনি বলতেন, মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশও তাঁর ধাতে নেই। কিন্তু আমার একটা কথা মনে হয়। সমস্ত দুঃখকষ্টকে চেপে রাখা, প্রেমের অভিব্যক্তিগুলোতে প্রায়ই উচ্ছ্বসিতভাবে প্রকাশ না করার প্রবণতা ছিল সুনীলের মধ্যে। এই চাপা স্বভাবের জন্য তাঁর শরীর মনে গভীর একটা কষ্টের আবর্ত তৈরি হত। তাঁর মাত্রাছাড়া মদ্যপান, মুডি স্বভাব, সিগারেট, অল্পে বিরক্ত হওয়া মেজাজ, এ সব এসেছিল তাঁর অপ্রকাশিত সেই সব চাপা কষ্টের জন্যই।

প্রয়াণের তিন-চার মাস আগে আমি ওঁকে প্রচণ্ড অসুস্থ শরীরে সাত-আট পেগ মদ্যপান করতে দেখেছি। নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার মনে হয়েছে এ একপ্রকার আত্মঘাতই যেন। শুধু প্রত্যক্ষ আত্মঘাতের অতি নাটকীয়তাটুকু বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টায় সুনীল এসব করতেন।

কোনও আসরে সুনীলের বয়সি কেউই পান বা জীবনকে অতটা লাগামছাড়া করতেন না। যতটা তিনি করতেন। তিনি মুখে বলতেন যে কারও জন্য, বিশেষত কোনও নারীর জন্যে তিনি জীবনকে নষ্ট করেননি কিন্তু বহু দমচাপা কষ্টের সমন্বয়ে উনি নিজের আয়ু তিলে তিলে কমিয়েছেন কিছুটা।

কলকাতায় এসে সদ্য যৌবনে যে মেয়েটির সঙ্গে তাঁর প্রণয় হয় সেই মেয়েটির কথা তিনি লিখেছেন অনেক বার।

তাঁর কথায় তিনি তখন উদ্বাস্তু পরিবারের কাঠবেকার ছেলে, ফলে কলকাতার বনেদি পরিবারের সেই মেয়েটি একটি ‘সুযোগ্য’ যুবককে বিয়ে করেন যথাসময়ে। কোনও সামান্য অনুযোগও করেননি তিনি সেই মেয়েটিকে নিয়ে। বরঞ্চ অনেক বার মেয়েটিকে বিদুষী, তেজি ইত্যাদি বলে উল্লেখ করেছেন।

লেখাপড়ার প্রতি যে সব মেয়ের টান আছে সুনীল অনেক সময় সেই সব মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হতেন। তাঁর লেখা পড়ে, তাঁকে কাছ থেকে এবং দূর থেকে দেখে আমার একথা মনে হয়েছে।

তাঁর ফরাসি প্রেমিকা মার্গারেটের সঙ্গে তাঁর অপরূপ সম্পর্কের কথা তিনি নিজে অসংখ্য বার লিখেছেন বলে বিষয়টি নিয়ে বলার প্রয়োজন কম। একটাই উল্লেখ্য যে ওই ফরাসি প্রেমিকাও ছিলেন প্রখর বিদুষী। কাব্য সাহিত্যে পারদর্শী।

মেয়েদের বনেদিয়ানার প্রতিও সুনীলের সুপ্ত ঝোঁক আমি লক্ষ করেছি। যেমন ফরাসি প্রেমিকা মার্গারেটকে নিয়ে লিখতে গিয়ে উনি লিখেছেন যে, মেয়েটি ফরাসি বলেও তিনি একটা বাড়তি আকর্ষণ বোধ করেছেন। ফরাসিদের রুচি, সংস্কৃতি দুনিয়া-বন্দিত। এই উচ্চতর রুচির আবেদনটি সুনীল এড়িয়ে যেতেন না।

নিজের একমাত্র স্ত্রীর সঙ্গে প্রণয়ের উল্লেখ তিনি যেখানে করেছেন সেখানেও দেখি স্ত্রীর ফরাসি শিক্ষা, সঙ্গীতশিক্ষা, পারিবারিক সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর মনে একটা চাপা গর্ব রয়েছে।

তিনি লিখেছেন, বিয়ে তিনি শুধু করেছিলেন কারণ তখন তাঁর স্বল্প হলেও রোজগারপাতি রয়েছে। সেখানে কোনও ভালবাসার মেয়ের সঙ্গে থাকতে আর কোনও বড় বাধা নেই। সেই একসঙ্গে থাকাটা নির্বিঘ্ন করতেই বিয়ে নামক অকিঞ্চিৎকর একটি কাজ তিনি করেছিলেন। এ কথা লিখেওছেন তিনি।

বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রতি তাঁর কোনও অগাধ শ্রদ্ধাভক্তি আমি দেখিনি। শেষ কুড়ি বছর ধরে তাঁর উপন্যাস গল্পে হামেশাই এমন নরনারী দেখা গিয়েছে যাঁরা স্বেচ্ছায় অবিবাহিত। যারা বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাদের কথায় আর জীবনে।

এই সময় যে সব মেয়ের কথা সুনীল লিখেছেন তাঁরা অতি আত্মবিশ্বাসী। সমাজের চিরাচরিত নিয়মকে পরোয়া করে না। কারও কাছে স্বীকৃতি, আশ্রয় চায় না কিন্তু দয়া করে কাউকে আশ্রয় দেবার ক্ষমতা রাখে। এই সব লেখা পড়েই বোঝা যায় বিয়ে হয়ে গেছে বলেই অন্য নারীর প্রতি তাঁর ভালবাসা জন্মাবে না এমন নিয়মে বাঁধা থাকার মানুষ তিনি ছিলেন না। বিবাহ-পরবর্তী জীবনে অনেক মহিলা ভক্ত ছাড়াও বেশ কয়েক বার গভীর ভাবে প্রেমে পড়েছিলেন সুনীল। মানসিক প্রেম, শারীরিক প্রেম এই সব ভাগ তিনি প্রেমের ব্যাপারে করতেন না। শরীর মন সেখানে একাকার হয়ে উঠত বইকী। তবে বিবাহ-পরবর্তী প্রেমিকাদের সঙ্গে তাঁর শয্যাসম্পর্ক ছিল না বলেই আমার অনুমান।

মনের দেওয়া নেওয়া এবং শরীরের টুকিটাকি চুমুটুমু, এটা ছিল সুনীলের একস্ট্রা ম্যারিটোরিয়াল রসায়ন।

বাহাত্তর, পঁচাত্তর, আটাত্তরেও বিবাহ-বহির্ভূত আপাতগোপন প্রেমিকার উত্তাপ, ঝঞ্ঝা, বিপত্তি তাঁর জীবনে এসেছে। সুনীল কখনও খোলাখুলি লেখেননি সে সব কথা।

সে সব প্রেমিকার কথা ঘরভর্তি রঙিন মানুষের মধ্যে নীরবতা হয়েই আছে।

মেঘের আড়ালে সূর্যের মতো শব্দের মধ্যে নৈঃশব্দ্য হয়ে রয়ে গেল সুনীলের জীবনের খানিকাংশ এবং তাঁর পরিণত বয়সের কয়েক জন প্রেমিকা।

bithi chattopadhyay sunil gangopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy