সাদ্দামকে খুনের জন্য মোসাদের সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন ব্র্যাম্বল বুশ’। ১৯৯২ সালে সেই অভিযান শুরু করেছিল ইজ়রায়েলি গুপ্তচরেরা। তবে অভিযান ব্যর্থ হয়।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৯:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ ভেঙে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানোর অভিযোগ তুলে ইরানে হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলের আশঙ্কা ছিল ইরান দ্রুত পরমাণু বোমা তৈরি করার জায়গায় চলে আসবে। যদিও ইরানের দাবি ছিল, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্যই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি চলছে।
০২১৮
এই আশঙ্কা থেকেই ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায় ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েল সেই অভিযানের নাম দেয় ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’। এর পর প্রত্যাঘাত করে ইরানও।
০৩১৮
ইরান এবং ইজ়রায়েল— দু’পক্ষই একে অন্যের উপর লাগাতার হামলা চালাতে শুরু করে। শুরু হয় যুদ্ধ। তবে সেই সংঘাত শেষ হয়েছে। ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে মার্কিন হামলার পর পশ্চিম এশিয়ায় ফিরেছে শান্তি।
০৪১৮
ইহুদি হানায় ইরানের কম ক্ষতি হয়নি। ইজ়রায়েলের হামলায় ইরানের বেশ কয়েক জন শীর্ষ সামরিক কর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানী মারা গিয়েছেন বলে খবর।
০৫১৮
আর তার পর অনেকেরই স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে ১৯৯০-এর দশকের একটি ঘটনা। যখন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে হত্যার জন্য ছক কষেছিল ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ।
০৬১৮
সাদ্দামকে খুনের জন্য মোসাদের সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন ব্র্যাম্বল বুশ’। ১৯৯২ সালে সেই অভিযান শুরু করেছিল ইজ়রায়েলি গুপ্তচরেরা। তবে অভিযান ব্যর্থ হয়। উল্টে মারা যায় ইজ়রায়েলের বহু সৈন্য। মুখ পোড়ে ইহুদি দেশটির। কিন্তু কী ভাবে?
০৭১৮
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়, যুদ্ধের অংশ না হওয়া সত্ত্বেও ইরাক থেকে ছোড়া একাধিক স্কাড ক্ষেপণাস্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছিল ইজ়রায়েলকে। এর পরেই সাদ্দামকে দেশের জন্য ‘বিপজ্জনক হুমকি’ হিসাবে দেখেছিল ইহুদিরা।
০৮১৮
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ইজ়রায়েল তখন খবর পায় যে, সাদ্দাম গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছেন। এর পরেই শত্রুনিধনে ইজ়রায়েল কড়া পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ঠিক করেছিল একটি জনসভাতেই সাদ্দামকে নিকেশ করবে ইজ়রায়েলি সেনা।
০৯১৮
সেই অভিযানেরই নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ব্র্যাম্বল বুশ’। মোসাদের গুপ্তচরেরা খবর এনে দেওয়ার পর থেকে তথ্য পাওয়ার পর ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষকর্তারা সেই অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন। অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইজ়রায়েলের অন্যতম সেরা কমান্ডো ইউনিট, ‘সায়রেত মতকল’কে।
১০১৮
মোসাদ খবর আনে, নিজের শহর তিকরিতে একটি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা আছে সাদ্দামের। সেই সময়ই সাদ্দাম-নিধনের সিদ্ধান্ত নেয় ইজ়রায়েল।
১১১৮
ঠিক হয়, সাদ্দাম ওই শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিলেই এলাকা ঘিরে ফেলবে ‘সায়রেত মতকল’-এর কমান্ডোরা। সাদ্দামের কনভয় লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে তারা।
১২১৮
১৯৯২ সালের ৫ নভেম্বর নেগেভ মরুভূমিতে গুলি চালিয়ে মহড়া চালায় ‘সায়রেত মতকল’। কী ভাবে হামলা চালানো হবে, আগেভাগে তার অনুশীলন করে নেয় তারা।
১৩১৮
এমনকি, সেই মহড়া চলাকালীন আসল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে তার ফল হয় উল্টো।
১৪১৮
‘সায়রেত মতকল’-এর কমান্ডোরা ধরে নিয়েছিল, তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি নেই। ফলে মহড়াও হবে নির্ভুল। কিন্তু বিপদ ঘটান ‘সায়রেত মতকল’-এর এক সদস্য।
১৫১৮
মহড়া চলাকালীন ভুল করে তাঁর নিজের দলের দিকেই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েন তিনি। সহযোদ্ধার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মারা যান ‘সায়রেত মতকল’-এর পাঁচ দক্ষ সেনা। গুরুতর আহত হন ছ’জন।
১৬১৮
ইতিহাসে সেই ঘটনা ‘জে’এলিম বেট বিপর্যয়’ নামে পরিচিত। নেগেভ মরুভূমিতে বিপর্যয়ের কারণে ‘সায়রেত মতকল’-এর শক্তি ক্ষয় হয়। অবিলম্বে ‘অপারেশন ব্র্যাম্বল বুশ’ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় ইজ়রায়েল।
১৭১৮
‘জে’এলিম বেট বিপর্যয়’ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। তদন্তে উঠে আসে, পরিকল্পনা এবং ঝুঁকি মূল্যায়নে গলদ ছিল ইজ়রায়েলের অন্যতম সেরা বাহিনীর। আর সে কারণেই বিপর্যয় ঘটে।
১৮১৮
সাদ্দামকে মারার ছক কষতে গিয়ে ‘নির্বুদ্ধিতা’র কারণে নিজেদের সেরা সেনাদের মৃত্যুর তথ্য বহু বছর ধরে গোপন রেখেছিল ইজ়রায়েল। কিন্তু পরবর্তী কালে তা প্রকাশ্যে আসে।