All need to know about Operation Pawan in Sri Lanka where 1,171 Soldiers of Indian Army killed dgtl
Operation Pawan
প্রাণ হারান ১১৭১ সেনা, আহত সাড়ে তিন হাজারের বেশি! পড়শি দেশে ভারতের অন্যতম কঠিন অভিযান ছিল ‘অপারেশন পবন’
ব্রিগেডিয়ার জে র্যালির নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার ৯১তম ব্রিগেড ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর জাফনার দিকে এগোতে শুরু করে। ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে জাফনার এলটিটিই সদর দফতরে হামলা শুরু করে ভারতীয় বায়ুসেনা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
‘অপারেশন পবন’-এর সময়ে নিহত সৈনিকদের প্রতি মঙ্গলবার শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় সেনার এই অভিযানের প্রথম আনুষ্ঠানিক স্মরণসভার নেতৃত্ব দেন তিনি।
০২২১
১৯৮৭ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ১৯৮৭ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই অভিযানে হাজারের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত এবং সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সেনা আহত হয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত ‘অপারেশন পবন’-এ নিহত সেনাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতেন তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা। এই প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের সম্মানার্থে স্মরণসভার আয়োজন করা হল।
০৩২১
কার্গিলের যুদ্ধ, ‘অপারেশন ব্লু স্টার’, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা শুনলেও ‘অপারেশন পবন’-এর কথা অনেক কম মানুষই জানেন। ভারতীয় সেনার অন্যতম কঠিন অভিযান ছিল ‘অপারেশন পবন’।
০৪২১
‘অপারেশন পবন’ চলাকালীন ভারতীয় সেনার ১১৭১ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৩৫০০ জনেরও বেশি। কিন্তু কী এই ‘অপারেশন পবন’?
০৫২১
১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাজীব গান্ধীর সরকারের সময় ‘অপারেশন পবন’ শুরু করে ভারতীয় সেনা। শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠী এবং সিংহলী সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইন্ডিয়ান পিস কিপিং ফোর্স বা আইপিকেএফ) পাঠায় রাজীব গান্ধীর সরকার।
০৬২১
এর মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় পৃথক তামিল রাষ্ট্রের দাবি নিয়ে লড়াইয়ের নেমেছিল জঙ্গি সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)। শ্রীলঙ্কার মধ্যে তামিলদের জন্য একটি পৃথক বাসভূমি তৈরি করতে চেয়েছিল সংগঠনটি।
০৭২১
ভারতের জন্য তামিলদের অধিকারের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত স্পর্শকাতর। উপচে পড়া শরণার্থীদের ভিড় নিয়েও চিন্তিত ছিল নয়াদিল্লি। ফলে পুরো বিষয়টিকে কূটনৈতিক এবং সামরিক— উভয় ভাবেই সমাধানের চেষ্টা করেছিল ভারত।
০৮২১
১৯৮৭ সালের ২৯ জুলাই শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেআর জয়বর্ধনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে রাজীব গান্ধী সরকার। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, তামিল অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিকে আরও স্বায়ত্তশাসন এবং ক্ষমতা প্রদান করবে শ্রীলঙ্কা। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিও তাদের অস্ত্র ত্যাগ করবে। অন্য দিকে, শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে ভারত।
০৯২১
এর পরই শ্রীলঙ্কায় আইপিকেএফ পাঠায় ভারত। পড়শি দেশে যাওয়া ভারতীয় সেনার সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষ। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে নিরস্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনাকে। যদিও এলটিটিই-সহ অনেক গোষ্ঠীই সেই প্রস্তাব মেনে নেয়নি। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি হয়নি তারা।
১০২১
ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ওই গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সেনা। শুরু হয় ‘অপরাশেন পবন’। ‘অপারেশন পবন’ শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ১১ অক্টোবর। শ্রীলঙ্কার জাফনা উপদ্বীপে এলটিটিই-র বিরুদ্ধে এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল, এলটিটিই-র শীর্ষ কমান্ডারদের নিকেশ করা।
১১২১
তৎকালীন সেনাপ্রধান যে নির্দেশ আইপিকেএফকে দিয়েছিলেন সেগুলি হল, টেলিভিশন এবং রেডিয়ো স্টেশনের মতো শত্রু নেটওয়ার্কগুলি ধ্বংস করা বা দখল করা, এলটিটিই ক্যাম্প এবং চেকপয়েন্টগুলিতে আক্রমণ করা, এলটিটিই-র শীর্ষস্থানীয় কর্মীদের আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা।
১২২১
ব্রিগেডিয়ার জে র্যালির নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার ৯১তম ব্রিগেড ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর জাফনার দিকে এগোতে শুরু করে। ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে জাফনার এলটিটিই সদর দফতরে হামলা শুরু করে ভারতীয় বায়ুসেনা।
১৩২১
অন্য দিকে, কামান নিয়ে পদাতিক সেনাও জাফনা শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হয়। ভারতীয় সেনাকে রুখতে গভীর জঙ্গলে প্রতিরক্ষামূলক ফাঁদ পাতে এলটিটিই। আইইডি, স্নাইপার দিয়ে হামলা শুরু হয় ভারতীয় সেনার উপর। হামলা চালানো হয় বাঙ্কারের ভিতর থেকেও।
১৪২১
এলটিটিই ভারতীয় সেনার রেডিয়ো ট্রান্সমিশন আটকানোর পর সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় আইপিকেএফ। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে শিখ পদাতিক বাহিনী। বাধ্য হয়ে অভিযান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় ভারতীয় সেনা। সংঘাতের তীব্রতা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে জঙ্গলের ভিতর নিজেদের সঙ্গীদের দেহ উদ্ধারেও যেতে পারেনি ভারতীয় সেনা।
১৫২১
শত শত সেনার প্রাণ হারালেও অভিযান পুনরায় শুরু করে ভারতীয় সেনা। ১৯৮৭ সালের ২৬ অক্টোবর জাফনা শহর দখল করতে সক্ষম হয় তারা। পিছু হটতে শুরু করে জঙ্গলের গভীরে পালিয়ে যায় এলটিটিই জঙ্গিরা। কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রাণ হারালেও প্রধান নেতা ভি প্রভাকরণ ধরা পড়েননি।
১৬২১
এর পর ২৫ নভেম্বর প্রভাকরণকে ধরতে জাফনার জঙ্গলে আরও একটি অনুসন্ধান অভিযান চালায় অষ্টম মহার রেজিমেন্টের মেজর আর পরমেশ্বরন। জঙ্গলে জঙ্গিদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন পরমেশ্বরন।
১৭২১
তবে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই ভারতীয় সেনাকে কৌশলগত ভাবে এগিয়ে নিয়ে যান মেজর পরমেশ্বরন। পাল্টা আক্রমণও করেন। হাতে-বুকে গুলি খেয়েও বেশ কয়েক জন জঙ্গিকে নিকেশ করেন তিনি।
১৮২১
জঙ্গলের ভিতর মেজর পরমেশ্বরনের দেহ উদ্ধারে গিয়ে আরও কয়েক জন জঙ্গিকে খতম করে ভারতীয় সেনা। বীরত্বের জন্য মেজর পরমেশ্বরনকে মরণোত্তর পরমবীর চক্র দেওয়া হয়। বলা হয়, ‘অপারেশন পবন’-এ ভারতীয় সেনার ১১৭১ জন সদস্য শহিদ হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি।
১৯২১
‘অপারেশন পবন’-এর সাফল্য সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কায় জাতীয়তাবাদী মনোভাব ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে। শ্রীলঙ্কার কেউ কেউ ভারতীয় বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানালেও রাজীব তেমনটা করতে রাজি হননি। ১৯৮৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে পরাজিত হন রাজীব। শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট রণসিংহে প্রেমদাস ক্ষমতায় আসার ফলে ভারত অবশেষে ১৯৯০ সালের ২৪ মার্চ শ্রীলঙ্কা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।
২০২১
১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমবুদুরে এক নির্বাচনী জনসভায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন রাজীব গান্ধী। ভারত আরও প্রায় দু’দশক ধরে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করেছিল।
২১২১
এর পর ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার সেনার কাছে পর্যুদস্ত হয় এলটিটিই। প্রভাকরণ ওই বছরই নিহত হন সেনার হাতে। শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে এলটিটিই।