All need to know about Rajasthani Temple that survived Pakistan’s bomb attack in two war dgtl
Tanot Mata Temple
’৬৫, ’৭১-এর যুদ্ধে পাকিস্তানের ছোড়া তিন হাজার বোমার একটিও ফাটেনি, দেবীর ‘চমৎকারে’ প্রাণ বাঁচে ভারতীয় সেনার!
রাজস্থানের ভারত-পাক সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম তনোট। রাজস্থানের জৈসলমের শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে সেই গ্রামেই রয়েছে তনোট দেবীর মন্দির। বহু বছর ধরেই মন্দিরটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৫৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময় দেশের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যুদ্ধগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধ। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে লঙ্গেওয়ালার ভারতীয় সীমান্ত ঘাঁটিতে আক্রমণকারী পাকিস্তানি সেনা এবং ভারতীয় বাহিনীর মধ্যে এই যুদ্ধ হয়েছিল।
০২২০
সেই যুদ্ধে দু’-তিন হাজার পাকিস্তানি সেনা এবং তাঁদের ট্যাঙ্কের হামলা রুখে দেন ১২০ জন ভারতীয় সৈন্য। লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর লড়া অন্যতম সেরা যুদ্ধ এবং প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সামরিক বিজয়ের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।
০৩২০
কিন্তু এই যুদ্ধ নিয়ে অনেক কিংবদন্তিও রয়েছে। মনে করা হয়, ওই যুদ্ধ লড়ার সময় ঈশ্বরের দ্বারস্থ হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনার ডাকে নাকি ‘সাড়া’ও দিয়েছিলেন দেবী।
০৪২০
এই কাহিনি রাজস্থানের লঙ্গেওয়ালা সীমান্তের তনোট মন্দিরের। কথিত আছে, লঙ্গেওয়ালা যুদ্ধের সময় স্থানীয় দেবী তনোট (যিনি আওয়াদ মাতা নামে পরিচিত)-এর কৃপায় পাক সেনার ছোড়া বোমা ওই মন্দির এবং সংলগ্ন এলাকার কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। মন্দির চত্বর এবং আশপাশে আছড়ে পড়া একটি বোমাও নাকি ফাটেনি।
০৫২০
স্থানীয়দের দাবি, দেবী তনোটের কৃপায় ১৯৭১-এর যুদ্ধে পাক সেনাকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল ভারতীয় সেনা। ১৯৬৫ সালেও নাকি ভারতীয় সেনার প্রতি কৃপাদৃষ্টি দিয়েছিলেন দেবী তনোট।
০৬২০
তনোট হল রাজস্থানের ভারত-পাক সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। রাজস্থানের জৈসলমের শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে সেই গ্রামেই রয়েছে তনোট দেবীর মন্দির। বহু বছর ধরেই মন্দিরটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র।
০৭২০
দেবী তনোটের নামেই তনোট গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। কথিত আছে, দেবী হিংলাজের একটি রূপ দেবী তনোট। পরে তিনি কর্ণী মাতার রূপ ধারণ করেন। অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকে রাজস্থানে তনোট দেবীর মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল।
০৮২০
১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় রাজস্থান সীমান্তে পাকিস্তানি হামলায় প্রথম দিকে কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের গোলাবারুদের জবাব দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ছিল না ভারতীয় সেনার কাছে।
০৯২০
পাকিস্তানি বাহিনী এই সুযোগ নিয়ে সাদেওয়ালা পোস্টের কাছে কিসানগড়-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার দখল নেয়। ওই এলাকায় থাকা ভারতীয় সেনারা একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল।
১০২০
সেই সময় ভারতের ১৩ গ্রেনেডিয়ার বাহিনীর সেনারা নিজেদের সেনাঘাঁটি টিকিয়ে রাখতে লাগাতার লড়াই চালিয়ে যায় সাদেওয়ালায়।
১১২০
১৭ নভেম্বর সাদেওয়ালায় তনোট দেবীর মন্দিরের কাছে একটি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালাতে শুরু করে পাক সেনা। হামলার সময় একাধিক বোমা মন্দিরের আশপাশে এসে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে একটি বোমাও ফাটেনি।
১২২০
কিংবদন্তি অনুযায়ী, ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তনোট মন্দিরের আশপাশে প্রচুর বোমা ফেলেছিল পাক সেনা। এ-ও কথিত আছে, দেবী নাকি নিজেই ভারতীয় সেনা জওয়ানদের স্বপ্নে এসে দেখা দিয়েছিলেন এবং মন্দিরের কাছে থাকলে তাদের প্রাণরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
১৩২০
১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করার পর তনোট মন্দিরের দায়িত্ব নিয়ে নেয় বিএসএফ। বিএসএফ মন্দির চত্বরে একটি ঘাঁটি তৈরি করে এবং মন্দিরের পুজোর দায়িত্বও নেয়। এখনও পর্যন্ত মন্দিরটি বিএসএফ দ্বারা পরিচালিত হয়।
১৪২০
১৯৭১ সালেও ‘চমৎকার’ করেছিলেন তনোট দেবী। ’৭১-এর যুদ্ধে পাক সেনা সাদেওয়ালার পরিবর্তে লঙ্গেওয়ালা ঘাঁটিতে হামলা করে। সেই ঘাঁটিও ছিল মন্দিরের কাছেই। মেজর কুলদীপ সিংহ চাঁদপুরীর নেতৃত্বে ১২০ জন সেনা লঙ্গেওয়ালা ঘাঁটি পাহারা দিচ্ছিলেন।
১৫২০
বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ওই ঘাঁটির সেনারা সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছিল দেবী তনোটের উপর। ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের একটি পূর্ণ ব্যাটালিয়ন এবং বহু ট্যাঙ্ক লঙ্গেওয়ালা ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
১৬২০
কিন্তু সে বারেও নাকি পাক সেনার ছোড়া একটি বোমাও ফাটেনি। উল্টে মুষ্টিমেয় ভারতীয় জওয়ানের কাছে পরাজিত হয় বিশাল পাক বাহিনী।
১৭২০
১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে তনোট দেবী এবং মন্দিরের খ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মন্দিরের ভিতরে একটি জাদুঘর তৈরি করে বিএসএফ। আরও বড় করে তৈরি করা হয় মন্দিরটি।
১৮২০
শোনা যায়, ১৯৬৫ এবং ’৭১-এর যুদ্ধে মন্দিরের আশপাশে নাকি তিন হাজারেরও বেশি বোমা ফেলে পাক সেনা। কিন্তু একটা বোমাও ফাটেনি। মন্দির চত্বরের ভিতরে বিএসএফ নির্মিত জাদুঘরে সেই বোমাগুলির কয়েকটি এখনও রাখা রয়েছে।
১৯২০
লঙ্গেওয়ালার জয়কে চিরস্মরণীয় করে রাখতে মন্দির প্রাঙ্গণে একটি বিজয়স্তম্ভ তৈরি করে ভারতীয় সেনা। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় উদ্যাপন করতে মন্দিরের বাইরে আনন্দে মেতে ওঠে বাহিনী।
২০২০
১৯৭১ সালে লঙ্গেওয়ালা সীমান্তে ভারত-পাক সেনা সংঘাতের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল বিখ্যাত বলিউড ছবি ‘বর্ডার’। কী ভাবে ওই সীমান্ত এলাকায় ১২০ জন ভারতীয় সেনা দু’হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি সেনাকে পরাস্ত করেছিল, তা এই ছবিতে দেখানো হয়েছিল। তনোট দেবীর উপর সেনার ভরসার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছিল ছবিতেও।