All you need to know about Hindi film director Awtar Kaul, who died the same day he won national film award for his only film dgtl
Avtar Krishna Kaul
পাকিস্তান, আমেরিকায় চাকরি, জীবনে একটিমাত্র ছবি তৈরি করে জাতীয় পুরস্কার! পুরস্কার জেতার দিনই জলে ডুবে মৃত্যু হয় পরিচালকের
জীবনে একটি মাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনা করেছিলেন। সেই ছবিই এখনও বলিউডের ‘ক্লাসিক’ ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে গণ্য হয়। সেরা হিন্দি ছবি হিসাবে ২১তম জাতীয় পুরস্কারও জিতেছিল ছবিটি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
চিন এবং ইরানের একাধিক পরিচালকের থেকে অনুপ্রেরণা পান তিনি। কারণ, সেই পরিচালকদের উপর সরকারের তরফে বিভিন্ন বিধিনিষেধ চাপানো হলেও তাঁরা সিনেমা পরিচালনা থেকে সরে আসেননি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তেমনটাই জানিয়েছেন বলিউড পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ।
০২২০
কোরীয় ছবি এবং পরিচালকদের থেকেও অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অনুরাগ। পাশাপাশি জানিয়েছেন, ভারতীয় সমান্তরাল সিনেমা আন্দোলনের এক জন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কথাও। কী ভাবে সেই পরিচালক অনুরাগকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন, তা উঠে এসেছে তাঁর সাক্ষাৎকারে।
০৩২০
অনুরাগকে অনুপ্রেরণা জোগানো ভারতীয় সেই পরিচালকের নাম অবতার কৃষ্ণ কৌল। অবতার ছিলেন মণি কৌল এবং মৃণাল সেনের মতো নামী পরিচালকদের সমসাময়িক। কিন্তু তাঁর নাম সে ভাবে কেউ জানেন না। এমনকি, অনেক দিগ্গজ সিনেপ্রেমীও জানেন না তাঁর নাম।
০৪২০
জীবনে একটি মাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনা করেছিলেন অবতার। সেই ছবিই এখনও বলিউডের ‘ক্লাসিক’ ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে গণ্য হয়। সেরা হিন্দি ছবি হিসাবে ২১তম জাতীয় পুরস্কারও জিতেছিল ছবিটি।
০৫২০
১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় অবতারের। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁর ছবির জাতীয় পুরস্কার জেতার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।
০৬২০
১৯৩৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীনগরে জন্ম অবতারের। খুব অল্প বয়সেই অবতারকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন তাঁর বাবা। প্রথমে কয়েক দিন রেলস্টেশনে কাটান তরুণ অবতার। এর পর জীবনযাপনের জন্য একটি চায়ের দোকানে কাজ করা শুরু করেন। পরে একটি হোটেলেও কাজ করেন। সেই হোটেলে দিনে তিন বার খাবার পেতেন অবতার।
০৭২০
হোটেলে চাকরি করতে করতে কষ্ট করে পড়াশোনাও করেছিলেন অবতার। কয়েক বছর পর বিদেশ মন্ত্রকে চাকরি পান তিনি। ভারত সরকারের তরফে অবতারের প্রথমে পোস্টিং ছিল পাকিস্তানে। ১৯৬০ সালে তাঁকে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয়।
০৮২০
সিনেমার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল অবতারের। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর পরই নিউ ইয়র্কের ‘ইনস্টিটিউট অফ ফিল্ম টেকনিক্স’-এ ছবিনির্মাণের উপর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন তিনি। পড়াশোনার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। এর পর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটিতে চলচ্চিত্র নির্মাণে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন অবতার।
০৯২০
পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য আবার চাকরিতে যোগ দিতে হয় অবতারকে। সেখানে এক সংবাদসংস্থার হয়ে কাজ করা শুরু করেন তিনি।
১০২০
অবতারের ভাইপো বিনোদ কৌল এক সাক্ষাৎকারে তাঁর কথা স্মরণ করে বলেছিলেন, ‘‘কাকা একটি সংবাদসংস্থার কপিহোল্ডার হিসেবে কাজ করতেন। এক দিন সম্পাদক তাঁকে আর্থার কোয়েস্টলির ‘ডার্কনেস অ্যাট নুন’ পড়তে দেখেন। সম্পাদকও বুঝতে পারেন যে, কাকা এক জন পণ্ডিত ব্যক্তি। এর পর কাকাকে লেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।’’
১১২০
১৯৭০ সালে কৌল মার্চেন্ট-আইভরি প্রযোজনা সংস্থার ছবি ‘বোম্বে টকি’তে কাজ করার জন্য ভারতে ফিরে আসেন অবতার। সেই ছবিতে কাজ করার পর নিজের ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
১২২০
১৯৭৪ সালে ৮ লক্ষ টাকার বাজেটে তাঁর প্রথম এবং একমাত্র ছবি ‘২৭ ডাউন’ পরিচালনা করেন অবতার। ছবির বাজেটের ৪০ শতাংশ নিজের পকেট থেকে দিয়েছিলেন তিনি। বাকি টাকা দেয় ‘ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এনএফডিসি)’।
১৩২০
‘২৭ ডাউন’ ছবিটি রমেশ বক্সীর লেখা ‘অথরা সুরজ কে পৌধে’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি। এক রেলকর্মীর জীবন, প্রেম, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, চড়াই-উতরাইয়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছিল সেই ছবিতে। অভিনয় করেছিলেন রাখি এবং এমকে রায়না।
১৪২০
‘২৭ ডাউন’ ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া এবং ভুবনেশ্বর মিশ্র। ছবির নির্মাণ পরিকল্পনা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সহযোগী বংশী চন্দ্রগুপ্ত।
১৫২০
১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই ২১তম জাতীয় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। হিন্দিতে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার জেতে ‘২৭ ডাউন’। সাদা-কালো ছবি বিভাগে সেরা সিনেমাটোগ্রাফির জন্যও জাতীয় পুরস্কার জেতে সিনেমাটি।
১৬২০
‘২৭ ডাউন’ জাতীয় পুরস্কার জয়ের খবর ঘোষণা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হয়েছিল অবতারের। মুম্বইয়ের ওয়াকেশ্বরের হোয়াইট হাউস এলাকায় বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যান তিনি।
১৭২০
বিয়ে করেছিলেন অবতার। আমেরিকায় ১৪ বছর থাকার সময় সে দেশেরই বাসিন্দা অ্যান নামে এক জন মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি।
১৮২০
অবতারের ভাইপো বিনোদের কথায়, ‘‘অবতার সব সময় তাঁর পরিবারের কথা ভাবতেন। তাঁর যৌবন কষ্টে কেটেছিল। পরিবার থেকে দূরে থেকেও পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন তিনি। সব সময় পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন।’’
১৯২০
বিনোদ এক সংবাদমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘অবতারের মা অধীর আগ্রহে ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন। মৃত্যুর খবরে তিনি ভেঙে পড়েন। অবতারের ছোট ভাই তাঁকে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় সাহায্য করার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর চাকরি ছেড়েছিলেন। তিনিও ভেঙে পড়েছিলেন।’’
২০২০
‘২৭ ডাউন’ ছবির নায়ক এমকে রায়না চলচ্চিত্র নির্মাতার অকালমৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘‘সাহিত্য, সঙ্গীত, থিয়েটার এবং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি অবতারের গভীর আগ্রহের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল নিউ ইয়র্কে অবতারের প্রশিক্ষণ। তাঁকে একজন মৌলিক কণ্ঠস্বর করে তুলেছিল। যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর হাতে তিনটি চিত্রনাট্য ছিল। যদি বেঁচে থাকতেন তা হলে তিনি অবশ্যই ভারতের এক জন প্রভাবশালী পরিচালক হতেন।’’