All you need to know about the battle of Ramree Island in 1945 Where Crocodiles Allegedly Killed Hundreds dgtl
WWII’s Crocodile Massacre
শয়ে শয়ে সেনার প্রাণ কাড়ে বিশ্বের বৃহত্তম সরীসৃপের ক্ষুধা! ভারতের উপকণ্ঠেই ঘটেছিল নৃশংস ‘মৃত্যুখেলা’
শয়ে শয়ে কুমিরের আস্তানা রামরির ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। যে-সে কুমির নয়, বিশেষ প্রকৃতির ‘সল্টওয়াটার ক্রোকোডাইল’ বা নোনাজলের কুমিরের আঁতুড়ঘর সেটি। এই কথা জানা ছিল না জাপানিদের।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৫ ১০:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
বিশ্ব জুড়ে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। তারই মাঝে শয়ে শয়ে সেনার প্রাণ হারানো কোনও বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চলেনি কোনও গোলাগুলি। মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল একঝাঁক কুমির!
০২১৬
সাল ১৯৪৫, মাস ফেব্রুয়ারি। জাপান তখন নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার জোটশক্তিকে।
০৩১৬
জাপানকে বাগে আনার জন্য ব্রিটিশেরা ঠিক করলেন মায়ানমারের (তখনকার বর্মা) উপকূলে একটা বিমানঘাঁটি বানাবেন। জাপানিদের বশে আনার মোক্ষম উপায় ছিল সেটা।
০৪১৬
জাপানিরাও অত সহজে হার মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। ব্রিটিশদের কাজে বাধা দেওয়ার জন্য রামরি দ্বীপে ছুটে গেলেন তাঁরা। শুরু হল বিশাল যুদ্ধ। এই সকল ‘ছোটখাটো’ যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হামেশাই হত। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় রামরি দ্বীপের যুদ্ধকে আর পাঁচটা যুদ্ধের থেকে আলাদা করে মনে রাখা হয় এক অন্য কারণে।
০৫১৬
রামরি দ্বীপে ব্রিটিশদের হয়ে জাপানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন একদল ভারতীয় সেনা। যুদ্ধে হার মেনে নিতে বাধ্য হন জাপানিরা। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পালাতে শুরু করেন তাঁরা, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পথেই তাঁদের মৃত্যু ঘটে।
০৬১৬
মারমুখী শত্রুসেনার আক্রমণ থেকে পালানোর রাস্তা হিসাবে রামরি দ্বীপে মাইলের পর মাইল জুড়ে থাকা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পথকে বেছে নেন জাপানি সৈন্যরা। যুদ্ধের শেষে জাপানিদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী। কিন্তু সেই কথা তাঁরা কানে তোলেননি। যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াকেই সুরক্ষিত বিকল্প হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা।
০৭১৬
জাপানি সেনাদল ব্রিটিশদের দিকে না এগিয়ে উল্টো দিকের রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করেছিল। দিগন্তবিস্তৃত ঘন জঙ্গল আর কাদামাটির পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই জঙ্গলেই তাঁদের জন্য লুকিয়ে ছিল ‘মৃত্যুদূত’।
০৮১৬
শয়ে শয়ে কুমিরের আস্তানা রামরির সেই ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। যে-সে কুমির নয়, বিশেষ প্রকৃতির ‘সল্টওয়াটার ক্রোকোডাইল’ বা নোনাজলের কুমিরের আঁতুড়ঘর সেটি। এই কথা জানা ছিল না জাপানিদের।
০৯১৬
ব্রিটিশ সেনারা কিন্তু রামরি দ্বীপের ভয়ঙ্কর জীবের উপস্থিতির কথা জানতেন। তাদের জানা ছিল যে, আত্মসমর্পণ না করলেও জাপানি সেনাদের বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
১০১৬
রামরি দ্বীপে বসবাসকারী নোনা জলের কুমিরেরা স্বাদু জলের কুমিরদের চেয়ে ভয়ঙ্কর। এই কুমিরগুলি গড়ে ১৬-১৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়, সেগুলির মধ্যে কোনওটি ২২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ওজনের দিক থেকে এরা ১০০-১৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এদের ফাঁকি দিয়ে প্রাণ বাঁচানো কার্যত অসম্ভব।
১১১৬
কেবল ভয়ঙ্কর এই সরীসৃপই নয়, রামরি দ্বীপে অন্যান্য বিপদেরও সম্মুখীন হতে হয় জাপানি সৈনিকদের। ঘন জঙ্গলে বিষাক্ত সাপ থেকে বিষাক্ত মাকড়সা, এমনকি মশা, বিছের উপদ্রবের মুখেও পড়তে হয়েছিল জাপানিদের। তার উপর কাদামাটি পেরিয়ে দ্রুত এগোনোও সম্ভব ছিল না। বহু সেনা সেই জঙ্গলে রোগে ভুগে, অনাহারে প্রাণ হারান।
১২১৬
ফেব্রুয়ারির শীতল রাতে কাদামাটি পেরিয়ে আসার সময়ে জাপানি সেনারা দেখতে পান জলের আড়াল থেকে একের পর এক চোখ জ্বলে উঠছে। তখনই তাঁরা বিপদের আঁচ পান। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। একের পর এক দানবাকৃতি কুমির জলের ভিতর থেকে মাথা তুলে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসে।
১৩১৬
নোনা জলের সেই কুমিরেরা ছিল নিশাচর। ফলত রাত বাড়লেই মানুষের গন্ধে সেগুলি ধেয়ে আসত। এ ভাবে রাতের পর রাত সেনারা ভয়ের পরিবেশে কাটিয়েছেন। তাঁদের কাছে আর কোনও বিকল্পও ছিল না। জঙ্গল পেরিয়ে এগোনোর সময় রাত নামলেই মৃত্যুর প্রহর গুনতেন জাপানি সেনারা। ভাবতেন, সেই রাতটাই হয়তো তাঁদের অন্তিম রাত।
১৪১৬
জানা গিয়েছে, হাজারখানেক জাপানির মধ্যে মাত্র ৪৮৪ জন বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশেরা সেই সংখ্যা মেনে নেননি। তাঁদের দাবি, মাত্র ২০ জন জাপানি সেনা সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি পেরিয়ে বেঁচে ফিরেছিলেন।
১৫১৬
মৃত সকল জাপানি সেনাই যে কুমিরের খিদের বলি হয়েছিলেন সেই ধারণাও ভুল। অনেকে অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার ফলেও প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ সেনাই কুমিরের আক্রমণে মারা গিয়েছিলেন।
১৬১৬
রামরি দ্বীপের এই হাড়হিম করা ঘটনা জাপানিদের কাছে নেমে এসেছিল একটি ধাক্কা রূপে। অনেকের মতে, এর পর থেকেই তাঁরা বিশ্বযুদ্ধে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েন। ১৯৪৫ সালের অগস্টেই হিরোসিমা এবং নাগাসাকিতে আমেরিকার পরমাণু হামলা যুদ্ধে জাপানের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছিল।