‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র অভিযোগে মামলাতেও অনুব্রতকে সমন পাঠিয়েছে সিবিআই। তবে গরুপাচার মামলায় প্রথম বার ‘কেষ্ট’(অনুব্রতের ডাক নাম, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই নামেই ডাকেন)কে ডেকে পাঠানো হয় ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল। তখন পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট চলছে। ২৫ তারিখ ভোট ছিল কলকাতাতেই। ২৪ তারিখ চিঠি যায় অনুব্রতের কাছে। তবে সে ডাকের জবাব মেলেনি। অনুব্রতর আইনজীবী নির্ধারিত দিনে কলকাতায় নিজাম প্যালেসে এসে জানিয়ে যান অনুব্রত আসতে পারছেন না।
অনুব্রতকে তৃতীয় বার এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই ডেকে পাঠায় ২৫ ফেব্রুয়ারি। এ বার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তৃণমূল নেতাকে। ২৫ ফেব্রুয়ারি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় নিয়ে বোলপুরের সিয়ান মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন অনুব্রত। চিকিৎসকরা অবশ্য তাঁকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছেড়ে দেন। কিন্তু কেষ্টর নিজাম প্যালেসে আসা হয় না আর।
এর পর ১৫ মার্চ অনুব্রতকে তলব করে সিবিআই। অনুব্রত আবার সেই তলব উপেক্ষা করেন। অবশ্য অসুস্থতার কারণ দেখাননি বীরভূমের দাপুটে নেতা। ১৪ মার্চ গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের জেরা থেকে রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর আইনজীবীরা সিবিআইকে জানিয়ে দেন, যেহেতু অনুব্রত ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছেন এবং মামলাটি বিচারাধীন, তাই তিনি হাজিরা দিতে পারবেন না।
৬ এপ্রিল। আবার অনুব্রতকে সিবিআই ডেকে পাঠায়। নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে যাওয়ার কথা ছিল। আগের দিনই কলকাতার চিনার পার্কের বাড়িতে পৌঁছে যান তৃণমূল নেতা। কিন্তু সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁকে নিয়ে তাঁর গাড়ি সোজা পৌঁছে যায় এসএসকেএম হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তৃণমূল নেতার। আছে পেটের সমস্যাও। উডবার্ন ব্লকের ২১১ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয় অনুব্রতকে। তৈরি হয় আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডও। অপেক্ষা শেষ হয় না নিজাম প্যালেসে। অনুব্রত অবশ্য জানিয়েছিলেন, সিবিআই চাইলে তাকে হাসপাতালে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।
২৩ এপ্রিল। আগের বারের অসুস্থতার জেরে ১৭ দিন হাসপাতালে থেকে সবে বাড়ি ফিরেছেন কেষ্ট। বাড়ি ফিরেছেন শুনে সিবিআইও সমন পাঠায়। এ বার নিশ্চয়ই তিনি জিজ্ঞাসাবাদে হাজির থাকতে পারবেন। অনুব্রত জানিয়ে দেন পারবেন না। তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও যথেষ্ট দুর্বল, হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হচ্ছে। তাই সিবিআই সকাশে তাঁর পক্ষে আসা সম্ভব নয়। অনুব্রতর জবাব ইমেল মারফত সিবিআই দফতরে এসে পৌঁছয় তাঁর হাজিরা দেওয়ার নির্ধারিত সময়ের ঠিক চার মিনিট আগে।
১৯ মে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান। অনুব্রত নিজেই ফোন করে সিবিআইয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেছেন। আইনজীবীরা জানান, অনুব্রত গরুপাচার মামলায় সহযোগিতা করতে চান। সিবিআইয়ের মুখোমুখি বসতে চান। সেই মতো সিবিআইয়ের দেওয়া সময়ের আগেই নিজাম প্যালেসে পৌঁছে যান কেষ্ট। টানা চার ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে জেরা পর্ব মিটলে নিজাম প্যালেস থেকে সোজা এসএসকেএম হাসপাতালে চলে যান। হাসপাতালের তরফে জানানো হয় অনুব্রত অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে উডবার্ন ব্লকে নিয়ে গিয়ে রুটিন চেক আপ করানো হচ্ছে।
আট তারিখ কলকাতায় এসে এসএসকেএমে যান অনুব্রত। অসুস্থতার পরীক্ষাও করান। হাসপাতাল থেকে অনুব্রতকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন নেই। ভাবা হয়েছিল এর পর তিনি সিবিআইয়ের তলবে সাড়া দিতে নিজাম প্যালেসে যাবেন। কিন্তু অনুব্রতর গাড়ি তাঁর বাড়ির রাস্তা ধরে। চিনার পার্ক হয়ে ওই দিনই বোলপুরে ফিরে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy