China may deliver J 35A fifth generation stealth fighter jet to Pakistan within August, 2025 dgtl
China’s J-35A Fighter for Pakistan
যুদ্ধে কাজ করেনি চিনা অস্ত্র, ‘কোমর ভাঙা’ পাকিস্তানকে পঞ্চম প্রজন্মের জেটে ৫০% ছাড় দিচ্ছে ড্রাগন?
ভারতের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একরকম কোমর ভেঙে গিয়েছে। এই অবস্থায় ত়ড়িঘড়ি ইসলামাবাদের হাতে পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ লড়াকু জেট তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিন। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধবিমানটির দাম ৫০ শতাংশ কমাচ্ছে বেজিং, খবর সূত্রের।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৫ ১৬:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ইসলামাবাদকে ‘শিক্ষা’ দিতে পাকিস্তান বায়ুসেনার কোমর ভেঙেছে ভারত। নয়াদিল্লির ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির বিমানবাহিনীর ১১টি ঘাঁটি। এ ছাড়া একাধিক যুদ্ধবিমান হারিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছে তারা। এই অবস্থায় ফের ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়াল চিন। পাক বায়ুসেনাকে মজবুত করতে বিপুল সংখ্যায় পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট সরবরাহ করতে চলেছে বেজিং।
০২১৯
সূত্রের খবর, চলতি বছরের অগস্টের মধ্যেই চিনের থেকে পঞ্চম প্রজন্মের জে-৩৫এ লড়াকু জেটের প্রথম ব্যাচ হাতে পাবে পাক বায়ুসেনা। বেজিঙের থেকে মোট ৪০টি এই যুদ্ধবিমান কিনেছে ইসলামাবাদ। কূটনৈতিক মহলের দাবি, জে-৩৫এর দামে ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে রাজি হয়েছে ড্রাগন সরকার। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের এ হেন ‘উদারতা’র নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ।
০৩১৯
সাবেক ফৌজি অফিসারদের দাবি, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের ‘যুদ্ধে’ পুরোপুরি ভাবে ব্যর্থ হয়েছে ড্রাগনভূমির হাতিয়ার। ফলে বিশ্ব বাজারে হু-হু করে কমেছে চিনা অস্ত্রের চাহিদা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমানের দামে ছাড় দিয়ে সেখানে টিঁকে থাকতে চাইছে বেজিং। পাশাপাশি, ইসলামাবাদকে সহজে অর্থ প্রদানের বিকল্পও দিয়েছে শি-প্রশাসন।
০৪১৯
বর্তমানে দেউলিয়া হওয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পাকিস্তান। কিছু দিন আগেই ‘আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার’ বা আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড) থেকে ঋণ নিয়েছে ইসলামাবাদ। এর জন্য শাহবাজ় শরিফ সরকারের ঘাড়ের উপর চেপেছে একগুচ্ছ কড়া শর্ত। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সেই কারণে তহবিল থেকে জে-৩৫এর জন্য সরাসরি অর্থ প্রদান করা সম্ভব নয়। আর তাই দাম মেটানোর ক্ষেত্রে ইসলামাবাদকে বিকল্প সুবিধা দিতে বাধ্য হয়েছে বেজিং।
০৫১৯
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জে-৩৫এ লড়াকু জেট কেনার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয় শরিফ প্রশাসন। তবে ওই সময়ে যুদ্ধবিমানগুলি ২০২৭ সালের আগে পাক বায়ুসেনার বহরে শামিল হবে না বলে জানা গিয়েছিল। ভারতের হাতে মার খাওয়ার পরই দ্রুত পরিস্থিতি বদল হয়। ইসলামাবাদের হাতে তড়িঘড়ি এই লড়াকু জেট তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেজিং। এর ফলে নয়াদিল্লির যে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
০৬১৯
সূত্রের খবর, পঞ্চম প্রজন্মের জে-৩৫এ লড়াকু জেট ওড়ানো এবং এর যুদ্ধকৌশল জানতে ইতিমধ্যেই বেজিং গিয়েছেন পাক বায়ুসেনার একগুচ্ছ অফিসার। সেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা রয়েছে তাঁদের। এর পর সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটগুলি নিয়ে ইসলামাবাদ ফিরবেন তাঁরা। জে-৩৫এ-র নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘শেনইয়াং এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশন’।
০৭১৯
দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ‘স্টেলথ’ শ্রেণির জে-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রথম বার আকাশে ওড়ে ২০১২ সালে। যে কোনও পরিবেশ সমান দক্ষতায় হামলা চালানোর সক্ষমতা রয়েছে এই লড়াকু জেটের। ‘স্টেলথ’ শ্রেণির হওয়ায় সহজে এটি শত্রু-রাডারের নাগালে আসবে না। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এর জে-৩৫এ ভ্যারিয়েন্টটি তৈরি করে চিনা সংস্থা ‘শেনইয়াং’। পাকিস্তানই প্রথম দেশ, যাকে এই যুদ্ধবিমান রফতানি করছে বেজিং।
০৮১৯
বর্তমানে চিনের ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ-র বায়ুসেনা ও নৌবাহিনী সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটি ব্যবহার করে থাকে। তাদের একাধিক বিমানবাহী রণতরীতে এটি মোতায়েন রয়েছে। বেজিং হামেশাই জে-৩৫-কে পঞ্চম প্রজন্মের মার্কিন ‘স্টেলথ’ যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ লাইটনিং টুর সঙ্গে তুলনা করে থাকে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এর কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও যুদ্ধে যোগ দেয়নি ড্রাগনের এই যুদ্ধবিমান।
০৯১৯
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গত কয়েক বছরে রফতানি করা হাতিয়ারের ৬০ শতাংশ পাকিস্তানকে বিক্রি করেছে চিন। ফলে ভারতের সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ শুরু হতেই সেগুলির শক্তিপরীক্ষার উপরেও কড়া নজর রেখেছিল বেজিং। সেখানে চিনা হাতিয়ার ‘ডাহা ফেল’ করায় পাক ফৌজের সঙ্গে মুখ পুড়েছে ড্রাগনের। সেই তালিকায় রয়েছে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)।
১০১৯
সংঘাত চলাকালীন ড্রোন হামলা চালিয়ে পাক পঞ্জাব প্রদেশের লাহৌরের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে উড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। সেখানে মোতায়েন ছিল চিনের তৈরি ‘এইচকিউ-৯পি’ নামের একটি এয়ার ডিফেন্স। এ ছাড়া বেজিং থেকে কেনা জেএফ-১৭ নামের দু’টি লড়াকু জেটকে ধ্বংস করে নয়াদিল্লি। সে কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা।
১১১৯
পাক ফৌজের দাবি, ইজ়রায়েলি ‘হারোপ’ দিয়ে লাহৌরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উড়িয়েছে ভারত। গত কয়েক দশক ধরে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই হাতিয়ারটিকে সযত্নে অস্ত্রাগারে সাজিয়ে রেখেছিল নয়াদিল্লি। মোক্ষম সময়ে এর এক আঘাতেই দিশেহারা হয়ে পড়ে ইসলামাবাদ।
১২১৯
গত ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (পাকিস্তান অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) মোট ন’টি জায়গায় হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের গুপ্তঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। ওই সময়ে এ দেশের বিমানবাহিনীকে প্রতিহত করতে চিনের তৈরি বিশেষ একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসলামাবাদ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কোনও রকম বিস্ফোরণ ঘটাতেই পারেনি বেজিঙের ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’।
১৩১৯
পাক বিমানবাহিনীর ব্যবহার করা ওই চিনা হাতিয়ারটির নাম পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র। ভারতীয় লড়াকু জেটকে ধ্বংস করতে সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটি যে ছোড়া হয়েছিল, গত ৯ মে-র সাংবাদিক বৈঠকে তা স্বীকার করে নেয় ইসলামাবাদ। তবে বিস্ফোরণ না হওয়ায় এ দেশের সীমান্তবর্তী গ্রামে এসে পড়ে পিএল-১৫। ফলে অক্ষত অবস্থায় এলাকাবাসীরাই সেটিকে উদ্ধার করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেন।
১৪১৯
পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘাত তীব্র হতেই সীমান্তে ভারতীয় সেনার গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করেছিল চিনা ‘গুপ্তচর’ উপগ্রহ। বিষয়টি প্রথম বার নজরে আসে ওপেন-সোর্স ইনটেলিজেন্স বা ওএসআইএনটির গোয়েন্দাদের। তাঁদের দাবি, গত কয়েক দিনে বহু বার রাজস্থানের আন্তর্জাতিক সীমান্তের উপর বেজিঙের ‘গুপ্তচর’ উপগ্রহকে পাক খেতে দেখা গিয়েছে। এই ঘটনাকে কাকতালীয় বলতে নারাজ তাঁরা।
১৫১৯
ওএসআইএনটির গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মরু রাজ্যে পাক ফৌজ ‘সোয়ার্ম’ ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর সময়েই ওই এলাকার উপর নজরদারি চালায় ড্রাগনের ‘গুপ্তচর’ উপগ্রহ। সেই কারণেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বিশ্বের তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বেজিঙের সাহায্য নিয়ে ওই হামলা পরিচালনা করছিলেন রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা। তবে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) দুর্দান্ত কাজ করায় সেগুলিকে শূন্যেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয় ভারতীয় সেনা।
১৬১৯
বেজিঙের এ ভাবে সরাসরি পাকিস্তানকে সাহায্য করার নেপথ্যে অন্যতম বড় কারণ হল বিনিয়োগ। ‘চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক বারান্দা’ বা সিপিইসি (চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর) প্রকল্পে বিপুল লগ্নি রয়েছে ড্রাগন সরকারের। এর মাধ্যমে শিনজিয়ান প্রদেশ থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) হয়ে পাকিস্তানের বালোচিস্তান পর্যন্ত একটি দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করছে বেজিং। এই রাস্তা শেষ হবে গ্বদর বন্দরে।
১৭১৯
পাকিস্তানের থেকে ভারত পিওকে ছিনিয়ে নিলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি যে মাঠে মারা যাবে, তা ভালই জানে চিন। সেই কারণে, হাতিয়ার দিয়ে বারবার ইসলামাবাদকে সাহায্য করে চলেছে বেজিং। সম্প্রতি সিপিইসির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করতে ২,৫০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে শি প্রশাসন। অন্য দিকে চিনের গ্বদর বন্দরে মসৃণ ভাবে প্রবেশের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি অফিসারেরা।
১৮১৯
জে-৩৫এ লড়াকু জেট দ্রুত হাতে পেতে বেজিং সফরে গিয়েছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। সেখানে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। চিনা সরকারের পদক্ষেপকে ‘পুরস্কার’ হিসাবে উল্লেখ করেছে ইসলামাবাদ। কারণ, ভারতের হাতে বর্তমানে কোনও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নেই।
১৯১৯
দীর্ঘ দিন ধরেই লড়াকু জেটের স্বল্পতায় ভুগছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই অবস্থায় দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান নির্মাণের উপর জোর দিয়েছে নয়াদিল্লি। যদিও জেট ইঞ্জিন তৈরিতে সে ভাবে সাফল্য পাননি এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। ফলে দ্রুত আমেরিকা বা রাশিয়া থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে চুক্তি করতে পারে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই দৌড়ে মস্কোর এসইউ-৫৭ এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।