CIA once dropped modified poppy seeds to pull down heroin trade of Afghanistan dgtl
CIA Poppy Mission
হেরোইনের নেশা ছাড়াতে অন্য নেশার বীজ ছড়ায় সিআইএ, ১০ বছর ধরে আফগানিস্তানে ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলে’ আমেরিকা
আফগানিস্তানের আফিমচাষের উপাখ্যান মোটামুটি সকলেরই জানা। এর মধ্যেই সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে, কী ভাবে এক দশকব্যাপী অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের কোটি কোটি ডলারের মাদকশিল্পকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
একসময় অন্যতম রোজগারের মাধ্যম ছিল আফিমচাষ। বিশ্ববাজারে সেই নেশার খোরাক বেচে লক্ষ লক্ষ ডলার কামিয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান। কোটি কোটি টাকার মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল হিন্দুকুশের পাদদেশের এই রাষ্ট্রে। তবে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে পুরোপুরি ভোল পাল্টে ফেলেছেন তালিবানের মাথারা।
০২২০
২০২১ সালের অগস্টে দ্বিতীয় বার গৃহযুদ্ধে জিতে কাবুলে ক্ষমতা দখলের পরেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তালিবান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ। জানিয়েছিলেন, প্রথম তালিবান জমানার উল্টো পথে হেঁটে আফগানিস্তানে আফিমের চাষ এবং মাদকের কারবার বন্ধ করতে সক্রিয় হবে সংগঠনটি।
০৩২০
কয়েক বছর আগেও তালিবান সংগঠনের আর্থিক ভিত্তির অন্যতম ‘স্তম্ভ’ ছিল আফিমচাষ এবং মাদক উৎপাদন। বেশ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্ট জানিয়েছিল, ড্রাগের ব্যবসা এবং চোরাচালান থেকে তালিবানের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
০৪২০
তালিবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ড্রাগ তৈরির কারখানা ছিল বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চক্রের। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তালিবান কমান্ডারদের বন্দুকের নলের সামনে আফিমচাষ করতে বাধ্য হতেন আফগান কৃষকেরা। বিশ্বের ৮০ শতাংশ আফিম উৎপাদিত হত আফগানিস্তান থেকেই। তবে বর্তমানে তালিব শাসকদের কড়াকড়ির ফলে আফিমচাষে মন্দা দেখা দিয়েছে।
০৫২০
আনুষ্ঠানিক ভাবে নিষিদ্ধ করার পর থেকে আফিম বা পোস্ত গাছের চাষ প্রায় ৯৫ শতাংশ কমেছে সে দেশে। ২০২৩ সালে একঝটকায় ৬ হাজার ২০০ টন থেকে মাত্র ৩৩৩ টনে নেমে আসে আফিমচাষের পরিমাণ।
০৬২০
আফগানিস্তানের আফিমচাষের উপাখ্যান মোটামুটি সকলেরই জানা। তবে এর মধ্যেই সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-র একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কী ভাবে এক দশকব্যাপী গোপন অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের কোটি কোটি ডলারের মাদকশিল্পকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা।
০৭২০
আফিম বা পোস্ত গাছ থেকে উৎপন্ন হয় ভয়ঙ্কর নেশার দ্রব্য হেরোইন। পোস্তের আঠা হেরোইনের অন্যতম কাঁচামাল। আর আফগানদের সেই হেরোইন ব্যবসার রমরমাকে নির্মূল করতে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ (সিআইএ) ১০ বছর ধরে ওই অভিযান চালিয়েছিল বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
০৮২০
তবে আফগানিস্তানে হেরোইন ব্যবসার ভিত দুর্বল করতে ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা নয়, বরং পোস্ত বীজই ব্যবহার করেছিলেন মার্কিন গুপ্তচর বাহিনী! বিষয়টি ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’র মতো শোনালেও ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, ২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের কৃষিজমি জুড়ে কোটি কোটি পরিবর্তিত পোস্ত বীজ ছড়িয়েছিল সিআইএ। লক্ষ্য ছিল, দেশটির আফিমচাষের বাড়বাড়ন্ত নীরবে কমিয়ে দেওয়া।
০৯২০
ওই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ১৪ জন প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, আফিম গাছের রাসায়নিক ফলন কমিয়ে হেরোইন উৎপাদনকে অলাভজনক করে তোলার জন্য ওই বীজগুলি তৈরি করা হয়েছিল।
১০২০
এক প্রাক্তন মার্কিন কর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘এটি ছিল একটু অন্য ধরনের চিন্তাভাবনা। একটি গভীর সমস্যার একটি অসামরিক সমাধান।’’
১১২০
২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে তালিবান উৎখাত করতে নেমেছিল নেটোবাহিনী। এই নেটোর সদস্য আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ প্রায় ৩০টি দেশের সেনা। ২০২১ সালে আমেরিকার সেনা আফগানিস্তান ছাড়ে। এর পর আবার ক্ষমতায় ফেরে তালিবেরা।
১২২০
আর ২০ বছরের দীর্ঘস্থায়ী সেই যুদ্ধ চলাকালীনই আফগানিস্তানে হেরোইন উৎপাদনের রমরমা শেষ করতে ওই গোপন কর্মসূচি চালিয়েছিল আমেরিকা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছিল তাদের বিরুদ্ধে লড়তে তালিবদের খরচ আসছে মাদক বিক্রির টাকা থেকে। এমনকি, মাদক নাকি সে দেশের সরকারি দুর্নীতির কাঠামোতেও প্রবেশ করেছিল।
১৩২০
২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সারা বিশ্বে প্রায় ৯০ শতাংশ হেরোইন সরবরাহ করত আফগানিস্তান। আর সেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে তালিবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে ওয়াশিংটন।
১৪২০
পরিবর্তিত পোস্ত বীজ ছড়িয়ে আফগানিস্তানের মাদক ব্যবসাকে দুর্বল করার সেই অভিযান সিআইএ শুরু করেছিল ২০০৪ সালের শেষের দিকে। অভিযানটি তদারকির দায়িত্বে ছিল সিআইএ-র ‘ক্রাইম অ্যান্ড নারকোটিক্স সেন্টার’।
১৫২০
ব্রিটিশ সি-১৩০ বিমান ব্যবহার করে রাতের বেলায় আফগানিস্তানের দুটি প্রধান আফিমচাষের গড়— হেলমান্দ এবং নাঙ্গারহার প্রদেশে বীজগুলি ছড়ানো হয়েছিল।
১৬২০
তবে পরিবর্তিত পোস্ত বীজগুলিতে জিনগত পরিবর্তন করানো হয়নি। ফসলের ক্ষারীয় মাত্রা এবং যে পোস্তের যে রাসায়নিক থেকে হেরোইন তৈরি হয়, তার প্রভাব কমাতে বেছে বেছে প্রজনন করা হয়েছিল।
১৭২০
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ বীজ থেকে জন্মানো পোস্ত গাছ় ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের আফিমজাত মাদকের পরিমাণ কমিয়ে দেবে। সেটাই নাকি ছিল পরিকল্পনা। বিষয়টি যতটা সুপরিকল্পিত ছিল, ততটাই সাহসী ছিল।
১৮২০
তবে সিআইএ-র ওই অভিযান ছিল প্রচণ্ড গোপন। এতটাই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল যে, পেন্টাগন এবং বিদেশ মন্ত্রকের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্তাও এই কর্মসূচির অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। প্রাক্তন আফগান রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই সরকারকেও পুরো সময় অন্ধকারে রাখা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
১৯২০
কিন্তু সিআইএ-র ওই অভিযান কতটা সফল ছিল? সিআইএ-র প্রাক্তন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনা বেশ কয়েক বছর ধরে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তবে প্রাক্তন কর্মকর্তাদের অন্য একাংশের মতে, হেরোইন-বিরোধী ওই অভিযান দীর্ঘমেয়াদি কোনও প্রভাব ফেলেনি।
২০২০
একজন প্রাক্তন কর্তা এ-ও স্বীকার করেছেন, আফগানিস্তানে আমেরিকার মাদকবিরোধী উদ্যোগ আফিমচাষে স্থায়ী কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। এমনকি, আফগানিস্তানের আফিম নির্ভরতাও উপড়ে ফেলতে পারেনি আমেরিকার গোপন অভিযান।