Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Miracle In The Azores

মাঝ-আকাশে শেষ হয় জ্বালানি, নষ্ট দুই ইঞ্জিনই! হাওয়ায় বিমান ভাসিয়ে ৩০৮ জনের প্রাণ বাঁচান চালক

বিমানের নাম ট্রানস্যাট ফ্লাইট ২৩৬। ২৯৩ জন যাত্রী, দু’জন বিমানচালক এবং ১৩ জন বিমানকর্মী নিয়ে আকাশে পাড়ি দিয়েছিল বিমানটি। গন্তব্য কানাডার টরন্টো থেকে পর্তুগালের লিসবন। আটলান্তিক মহাসাগরের উপরে মাঝ-আকাশেই ফুরিয়ে যেতে থাকে জ্বালানি। বিমানের দু’টি ইঞ্জিনই নষ্ট হয়ে যায়। শেষমেশ তড়িঘড়ি অবতরণ করতে হয়। ইঞ্জিন ছাড়া শুধুমাত্র গ্লাইড করে প্রায় ১২০ কিলোমিটার উড়েছিল অ্যাজ়োরেস গ্লাইডার বিমান।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০২
Share: Save:
০১ ২০
Flight 236

অহমদাবাদে সদ্য ঘটে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। গত ১২ জুনের ওই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল দু’শোরও বেশি মানুষের। বেঁচে গিয়েছিলেন মাত্র এক জন। তেমনই আরও একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছিলেন তিনশোর বেশি মানুষ।

০২ ২০
Flight 236

প্রায় আড়াই দশক আগের কথা। ২০০১ সালের ২৪ অগস্ট। কানাডার টরন্টো থেকে পর্তুগালের লিসবনের দিকে যাচ্ছিল এয়ার ট্রানস্যাট ফ্লাইট ২৩৬। টরন্টোর মাটি ছেড়ে ওড়ার সময় বিমানচালক ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁদের সঙ্গে কী হতে চলেছে!

০৩ ২০
Flight 236

টরন্টোর স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫২ মিনিটে বিমানটি পাড়ি দেয় লিসবনের উদ্দেশে। টানা সাত ঘণ্টার ফ্লাইট ছিল। বিমানে ২৯৩ জন যাত্রী, দু’জন বিমানচালক এবং ১৩ জন বিমানকর্মী ছিলেন।

০৪ ২০
Flight 236

দূরত্ব ছিল প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। ওড়ার আগে নিয়ম মেনে বিমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়। প্রায় ৪৬.৯ মেট্রিক টন জ্বালানি ভর্তি করা হয়েছিল বিমানে, যা প্রয়োজনের চেয়ে সাড়ে ৪ টন বেশি ছিল। তাই ওই দূরত্বে পাড়ি দেওয়ার জন্য এতটা জ্বালানি যথেষ্ট বলেই মনে করেছিলেন পরীক্ষকেরা। কিন্তু সেখানেই যে মূল গাফিলতি ছিল তা আর কেউ সে সময় ধরতে পারেননি।

০৫ ২০
Flight 236

৪৮ বছর বয়সের রবার্ট পিচে ছিলেন বিমানের প্রধান চালক। তাঁকে সাহায্য করছিলেন ২৮ বছর বয়সের ফার্স্ট অফিসার ডার্ক ডেজাগার। পিচের বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল প্রায় ১৬,৮০০ ঘণ্টার। এর মধ্যে ৭৯৬ ঘণ্টা ফ্লাইট ২৩৬-এই কেটেছিল। ডেজাগারের অভিজ্ঞতাও ছিল যথেষ্ট। তবুও দু’জনের কেউই প্রথমে দুর্ঘটনার বিষয়ে আঁচ করতে পারেননি।

০৬ ২০
Flight 236

ওড়ার পর প্রথম চার ঘণ্টা সব কিছু একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। বিমানে থাকা যাত্রীর কেউ ছিলেন ঘুমে আচ্ছন্ন, কেউ বা সিনেমা দেখছিলেন। বিমানকর্মীরাও কাজ শেষ করে নিজেদের আসনে বসেছিলেন।

০৭ ২০
Flight 236

বিমান তখন প্রায় ৩৫,০০০ ফুট উঁচুতে। আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে উড়ছিল। রাত তখন প্রায় ১টা। হঠাৎই চালক সামনের যন্ত্রপাতিতে কিছু সতর্কতামূলক সঙ্কেত দেখতে পান।

০৮ ২০
Flight 236

‘হাই অয়েল প্রেশার’, ‘লো অয়েল কোয়ান্টিটি’ এবং ‘লো অয়েল টেম্পারেচার’— এই তিনটি সঙ্কেত দেখাতে শুরু করে বিমান। দীর্ঘ বিমান সফরে এমন সঙ্কেত প্রায়শই দেখায়। তবে, এটি যে কোনও বড় দুর্ঘটনার সঙ্কেত হতে পারে তা চালকের ধারণার বাইরে ছিল।

০৯ ২০
Flight 236

ফ্লাইট-২৩৬ বহু বার উড়িয়েছেন পিচ। কিন্তু আগে কখনওই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি তাঁকে। তাই এই তিনটি সঙ্কেত দেখামাত্রই কারণ খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন পিচ এবং ডেজাগার।

১০ ২০
Flight 236

কোনও ভাবেই বুঝে উঠতে না পেরে সাহায্য চান বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রের কাছে। তখনও কিন্তু যাত্রীরা ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পাননি। তবে রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রও চালককে কোনও সাহায্য করতে পারেনি। তাদেরও ধারণার বাইরে ছিল কী হয়েছে।

১১ ২০
Flight 236

কেটে যায় আরও খানিকটা সময়। ঘড়ির কাঁটা তখন দেড়টা ছুঁইছুঁই। চালকেরা ফের একটি সঙ্কেত দেখতে পান। সেখানে দেখায় বিমানে জ্বালানি শেষের দিকে। বিমানের দুই পাখায় সমান জ্বালানি নেই।

১২ ২০
Flight 236

এটি দেখামাত্র চালকেরা দু’দিকের পাখাতেই সমান জ্বালানি পাঠিয়ে দেন। এই সময়ই দেখা যায় আসল সমস্যা। চালকেরা লক্ষ করেন বিমানের দ্বিতীয় ইঞ্জিনের জ্বালানির তাপমাত্রা (অয়েল টেম্পারেচার) বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং জ্বালানির চাপ (অয়েল প্রেশার) কমতে থাকে, যা দেখে তাঁরা হতভম্ব হয়ে যান।

১৩ ২০
Flight 236

চালকদের কাছে যে পরিমাণ জ্বালানি অবশিষ্ট ছিল, তা দিয়ে কোনও ভাবেই লিসবন পর্যন্ত পৌঁছোনো সম্ভব ছিল না। বিমান তখন সম্পূর্ণ ভাবে টালমাটাল অবস্থায়। যাত্রীরাও বুঝে গিয়েছিলেন বড় কোনও সমস্যায় পড়েছে তাঁদের বিমান।

১৪ ২০
Flight 236

অন্য দিকে চালক খুঁজছিলেন সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর, যেখানে আপৎকালীন অবতরণ করতে পারেন। বিমানের দূরত্ব থেকে সবচেয়ে কাছে ছিল পর্তুগালের আজোরেস দ্বীপের লাজেস বিমানঘাঁটি।

১৫ ২০
Flight 236

তড়িঘড়ি লাজেস বিমানঘাঁটিমুখী হয় বিমানটি। কিন্তু পিচের কাছে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট ছিল, বিমানে মাত্র ৩০ মিনিট ওড়ার মতো জ্বালানি রয়েছে। আর লাজেস যাওয়ার জন্য এখনও ২৮০ কিলোমিটার উড়তে হবে।

১৬ ২০
Flight 236

চালকেরা বুঝতে পারেন, যে কোনও সময় বিমানটিতে বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। আর প্রাণ চলে যেতে পারে সকলেরই। বিমানটি কোনও রকমে নিজের গতি বাড়িয়ে লাজেসের দিকে এগোতেই আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে।

১৭ ২০
Flight 236

দ্বিতীয় ইঞ্জিনেও আগুন ধরে যায়। একটি ইঞ্জিনের সাহায্যেই বিমানটি উড়তে থাকে। নিমেষেই বিমানটিকে ৩৯ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায় নামিয়ে আনেন চালকেরা।

১৮ ২০
Flight 236

কিছু দূর যেতেই বিমানের প্রথম ইঞ্জিনেও আগুন ধরে যায়। মুহূর্তেই বিমানের সমস্ত আলো নিবে যায়। র‌্যাম এয়ার টারবাইন ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তখন। বিমান যত বিমানঘাঁটির দিকে এগোতে থাকে ততই সমস্যা বাড়তে থাকে। অবতরণের সময়ও একাধিক বিপদের আশঙ্কা ছিল।

১৯ ২০
Flight 236

অবশেষে চালকদের দক্ষতার জেরে বিমানটি অবতরণ করে। সে সময় যাত্রীরা বিমানের মধ্যেই দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দিয়েছিলেন। এর ফলে ১৪ জন যাত্রী আহত হয়েছিলেন। যদিও চালকের দক্ষতার জেরে বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছিল।

২০ ২০
Flight 236

এটি পৃথিবীতে প্রথম এমন বিমান যেটি দু’টি ইঞ্জিন ছাড়া সবচেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। পরে তদন্ত করে জানা যায়, বিমান ওড়ার আগে বিমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ই মূল সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পরীক্ষকেরা বিমানের ‘হাইড্রোলিক সিস্টেম’-এ একটি ভুল যন্ত্র লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এর জেরেই এমন বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল ফ্লাইট ২৩৬।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy