তালিবানের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকির সঙ্গে মিস্রীর বৈঠকের পর বিবৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লি। সেখানে বলা হয়েছে, এটা শুধুমাত্র একটি সৌজন্যমূলক বৈঠক ছিল না। আফগানিস্তানের মাটি থেকে ভারতের ‘নিরাপত্তা বিঘ্নিত’ হওয়ার কতটা আশঙ্কা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত-বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি যাতে সেখানে মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেই বিষয়ে তালিবানের আশ্বাস মিলেছে।
অন্য দিকে এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে কাবুলের বিদেশ মন্ত্রকও। তালিবানের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আজকের দিনের আফগানিস্তান কারওর জন্যই হুমকি নয়।’’ সূত্রের খবর, ইরানের চাবাহার বন্দর দিয়ে কাবুলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালানোর ব্যাপারেও দুবাইয়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এতে আফগানিস্তানের কাছে ইসলামাবাদের গুরুত্ব অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হিন্দুকুশ পর্বতের কোলের দেশ আফগানিস্তান সম্পূর্ণ ভাবে জমি দিয়ে ঘেরা। এর উত্তরের অংশটি মধ্য এশিয়া নামে পরিচিত। এই অবস্থান কাবুলের আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের প্রধান প্রতিবদ্ধকতা। শুধু তা-ই নয়, দেশটির দক্ষিণ পূর্ব অংশে পাকিস্তান থাকায় আফগানদের সঙ্গে কোনও দিনই সে ভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি ভারত। মিস্রী-মুত্তাকি বৈঠকের পর সেই জট কিছুটা কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইরানের দক্ষিণে চাবাহার বন্দরটি তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। বর্তমানে মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে পণ্য পরিবহণ করতে এর ব্যাপক ব্যবহার করছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার সঙ্গে ৭,২০০ মিটার লম্বা আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোরের সঙ্গেও এই বন্দরটি সংযুক্ত রয়েছে। তালিবান এই সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারলে আফগানিস্তানের আর্থিক অবস্থার যে অনেকটাই উন্নতি হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের উপর রয়েছে আমেরিকার একাধিক নিষেধাজ্ঞা। তবে চাবাহারের ক্ষেত্রে ভারতকে পুরো মাত্রায় ছাড় দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন। চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি কুর্সিতে বসার আগে তালিবানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর ব্যবহার নিয়ে নয়াদিল্লির আলোচনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
তালিবান শাসনে ‘কাবুলিওয়ালার দেশে’ মানবিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করেনি নয়াদিল্লি। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে কাবুল। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আমু দরিয়ার তীরে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম, ৩০০ টন ওষুধ, ভূমিকম্পে ২৭ টন ত্রাণ, ৪০ হাজার লিটার কীটনাশক, ১০ কোটি পোলিও ডোজ, ১৫ লক্ষ কোভিড ভ্যাকসিন এবং ৫০০ ইউনিট শীতবস্ত্র পাঠিয়েছে ভারত। এ ছাড়া ড্রাগের নেশা ছা়ড়ানোর ওষুধ এবং স্টেশনারি সামগ্রীও ‘কাবুলিওয়ালার দেশে’ পাঠিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।
তালিবান সরকার মহিলা ক্রিকেটের ঘোর বিরোধী। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া-সহ বেশ কয়েকটি দেশ এ ব্যাপারে আফগান সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে। শুধু তা-ই নয়, আফগানিস্তানের পুরুষ দলের সঙ্গেও ম্যাচ খেলতে অস্বীকার করেছে তারা। ফলে ক্রিকেট বিশ্বে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়েছে ‘কাবুলিওয়ালার দেশ’। এই অবস্থায় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে নয়াদিল্লি।
গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) নভেম্বরে তালিবানের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক। এর কিছু দিনের মধ্যে পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার মুখে পড়ে প্রাণ হারান বেশ কয়েক জন পাক সেনা। গোটা ঘটনার নেপথ্যে নয়াদিল্লির হাত রয়েছে বলে সুর চড়ায় ইসলামাবাদ।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই পরিস্থিতিতে তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হলে আখেরে লাভ হবে ভারতের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগানদের ব্যবহার করার সুযোগ পাবে নয়াদিল্লি। আর দেশের পশ্চিম প্রান্তে সীমান্ত সংঘাতে ব্যস্ত থাকলে কাশ্মীর বা পঞ্জাবে উল্লেখযোগ্য হারে কমবে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের আনাগোনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy