Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Current Account Deficit

টাকার দামের মহাপতনে মাথায় হাত! বেড়ে চলা বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে এ বার টান পড়বে মোদী সরকারের ভাঁড়ারে?

ডলারের নিরিখে টাকার দাম ৯০ ছাড়িয়ে যেতেই প্রমাদ গুনছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, এর জেরে বাণিজ্যিক ঘাটতি মেটাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হবে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। ‘গোদের উপর বিষফোড়া’র মতো এ দেশের বাজারের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন বিদেশি লগ্নিকারীরাও।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:০৩
Share: Save:
০১ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

ডলারের নিরিখে হু-হু করে পড়ছে টাকার দাম। স্বাধীনতার পর প্রথম বার এক ডলারের দর ৯০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘গোদের উপর বিষফোড়া’র মতো নয়াদিল্লির চিন্তা বাড়াচ্ছে কাঠামোগত কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি বা সিএডি (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট)। এতে দেশের বহিরাগত অর্থপ্রদানের ভারসাম্য (ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস বা বিওপি) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৫ বছরের মধ্যে মাত্র চারটি অর্থবর্ষে উদ্বৃত্ত ছিল সিএডি। তার মধ্যে ২০০১-’০৩ আর্থিক বছরে উদ্বৃত্তের অঙ্ক ৩৪০ কোটি ডলার, ২০০২-’০৩ অর্থবর্ষে ৬৩০ কোটি ডলার, ২০০৩-’০৪ অর্থবর্ষে ১,৪১০ কোটি ডলার এবং ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে তা ২,৩৯০ কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছোয়। শেষেরটির সময়ে কোভিত অতিমারি থাকায় আমদানি কম করেছিল ভারত।

০৩ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

এখন প্রশ্ন হল, কী এই কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি? যদি কোনও দেশের পণ্য, পরিষেবা এবং প্রবাসী আয়ের থেকে উপার্জিত অর্থের চেয়ে আমদানি বাবদ খরচের পরিমাণ বেশি হয়, তখন সেটাকে বলে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি। ভারতের ক্ষেত্রে রফতানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্যিক ঘাটতি, বিদেশি বিনিয়োগ থেকে আয় এবং স্থানান্তর পেমেন্টসের নিট যোগফল ঋণাত্মকে দাঁড়িয়ে আছে।

০৪ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮,৮২০ কোটি ডলার, যা ছিল সর্বোচ্চ। ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে এই অঙ্ক প্রথম বার ছ’হাজার কোটি ছাপিয়ে যায়। ওই আর্থিক বছরে সিএডির পরিমাণ ছিল ৭,৮২০ কোটি ডলার। এ ছাড়া ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে এটা ৫,৭৩০ কোটি ডলার এবং ২০২২-’২৩ আর্থিক বছরে ৬,৭১০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছিল।

০৫ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের নিরিখে কারেন্ট অ্যাকাউন্টের দু’টি উপাদান রয়েছে। সেগুলি হল, পণ্যের রফতানি এবং ভৌত পণ্যের আমদানি। সমস্যার জায়গাটা হল, স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের পণ্য বাণিজ্যের ভারসাম্য সর্বদা নেতিবাচক থেকেছে। ২০০৭-’০৮ আর্থিক বছরে এর পরিমাণ ছিল ৯,১৫০ কোটি ডলার। ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে সেটাই দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার।

০৬ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

এ দেশের পণ্য বাণিজ্যের ভারসাম্য ২০১৬-’১৭ এবং ২০২০-’২১ আর্থিক বছরে বেশ কিছুটা সঙ্কুচিত হয়েছিল। ফলে সেটা ১১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার এবং ১০ হাজার ২২০ কোটি ডলারে নেমে আসে। কিন্তু গত আর্থিক বছরে (পড়ুন ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে) সেটা ফের বেড়ে ২৮ হাজার ৬৯০ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছে।

০৭ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

বিশেষজ্ঞদের দাবি, চলতি আর্থিক বছরের (২০২৫-’২৬) এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের প্রবণতা অনুযায়ী, মার্চ আসতে আসতে পণ্যসামগ্রীর বাণিজ্যিক ঘাটতি ৩০ হাজার কোটি ছাপিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে এই ফাঁক পূরণ করতে চাইছে ভারত। উদাহরণ হিসাবে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কথা বলা যেতে পারে। সারা বিশ্বে এর সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় পেশাদারদের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

০৮ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

বাণিজ্যিক ঘাটতি পূরণে ভারতের হাতে থাকা পরিষেবা-তাসটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে একটি অদৃশ্য লেনদেন, যেখানে ধারাবাহিক ভাবে উদ্বৃত্ত অবস্থান ধরে রেখেছে নয়াদিল্লি। এর জন্য সর্বাধিক কৃতিত্ব দিতে হবে সফট্‌অয়্যার পেশাদারদের। এ ছাড়াও রয়েছে ব্যবসা ও অন্যান্য আর্থিক ও বিবিধ পরিষেবার স্থানান্তর ও রফতানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ। বর্তমানে এটা বিদেশি ঋণদাতা বা বিনিয়োগকারীদের সুদ, লভ্যাংশ এবং রয়্যালটি প্রদানের বহির্গমনকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

০৯ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে ভারতের অদৃশ্য বাণিজ্য থেকে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৭,৫৭০ কোটি ডলার। ২০২১-’২২ সালে সেটা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৭০ কোটিতে। ২০২৪-’২৫ আর্থিক বছরে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ আরও বেড়ে ২৬ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার ছাপিয়ে যায়। তবে চলতি বছরে (২০২৫-’২৬) রেকর্ড তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা ২৮ হাজার কোটিতে পৌঁছোবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১০ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী পরিষেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত অর্থে এত দিন ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ভারত। ২০১১-’১২ এবং ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরকে বাদ দিলে এটা কখনওই নিয়ন্ত্রণহীন জায়গায় চলে যায়নি। সেই কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের পরিচয় ‘বিশ্বের অফিস’ বা অফিস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। এতে তথ্য-প্রযুক্তি পেশাদারের পাশাপাশি রয়েছেন হিসাবরক্ষক, চিকিৎসক, নার্স এবং ব্যাঙ্ক কর্মীরাও।

১১ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস বা বিওপির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি খুব কম সমস্যা তৈরি করেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটা ছিল ২,৫৩০ কোটি ডলার। চলতি বছরের একই সময় সীমার মধ্যে সেটা ১,৫১০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। কিন্তু ডলারের নিরিখে রুপির দামের পতনের জেরে এই হিসাব পাল্টাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

১২ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

লারের পাশাপাশি ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন এবং চিনা ইউয়ানের নিরিখেও অবমূল্যায়নের মুখে পড়েছে ভারতীয় রুপি। ইউরোর ক্ষেত্রে ৮৯.২০ থেকে দাম ১০৪.৮২ টাকা, ব্রিটিশ পাউন্ডের ক্ষেত্রে ১০৭.৭৬ টাকা থেকে ১২০ টাকা এবং চিনা ইউয়ানের ক্ষেত্রে ১১.৬৬ টাকা থেকে দাম পড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৭২ টাকায়।

১৩ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

২০০৭-’০৮ আর্থিক বছরে ভারতের নিট বিদেশি লগ্নির পরিমাণ সর্বকালীন সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছোয়। টাকার অঙ্কে সেটা ১০ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। এর থেকে সরকারি রাজকোষে যে পরিমাণ অর্থ ঢুকেছে তাতে বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আর্থিক বছরে (২০২৪-’২৫) নিট বিদেশি মূলধনের প্রবাহ ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। ওই খাত থেকে ১,৮০০ কোটি ডলারের বেশি পায়নি সরকার।

১৪ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

২০২৪-’২৫ আর্থিক বছরের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২,৩১০ কোটি ডলার। বিগত বছরগুলির মতো প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির থেকে সেই টাকা উঠে না আসায় সমস্যার মুখে পড়ে অর্থ মন্ত্রক। চলতি অর্থবর্ষের (২০২৫-’২৬) প্রথম ছ’মাসে একই ধরনের সমস্যা লক্ষ করা গিয়েছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাত্র ৮৬০ কোটি ডলার নিট মূলধন প্রবাহ রেকর্ড করেছে কেন্দ্র, যেটা সিএডি ১,৫১০ কোটি ডলারের তুলনায় বেশ কম।

১৫ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

এ দেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার জন্য টাকার অবমূল্যায়নকেই দায়ী করছেন আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এর জেরে দু’টি সমস্যা হয়েছে। আগে এখানকার বাজারের মুনাফা ডলারে বদলে নিলে লাভের মাত্রা থাকছিল অনেক বেশি। সেটা লগ্নিকারীদের আকর্ষণ করছিল। অন্য দিকে কম খরচে বেশি আমদানি করতে পারছিল কেন্দ্র। টাকার অবমূল্যায়নের জন্য দু’টোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

১৬ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

গত আর্থিক বছরে (২০২৪-’২৫) এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৫০ কোটি ডলার। এ বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটা ৩৬০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। অথচ ২০২৩-’২৪ এবং ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে বিদেশি লগ্নির অঙ্ক ছিল ৫,৪২০ কোটি এবং ২,২৮০ কোটি ডলার। এ যাবৎকালে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে। সে বার লগ্নির অঙ্ক ছিল ৮,০১০ কোটি ডলার।

১৭ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার বিওপির তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে নতুন কারখানা, পরিকাঠামো বা কর্মসংস্থান তৈরির মতো বিদেশি বিনিয়োগ ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে এসেছিল ৪৩০০ কোটি ডলার। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে সেটা বেড়ে ৪,৪০০ কোটি, ২০২১-’২২ সালে ৩,৮৬০ কোটি এবং ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে ২,৮০০ কোটি ডলারে সেটা নেমে আসে।

১৮ ১৮
Indian rupee price fall creates current account deficit, a big concern for economy

এ ছাড়া শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নিতেও পতন লক্ষ করা গিয়েছে। ২০২১-’২২ আর্থিক বছর থেকে শুরু করে পাঁচটি অর্থবর্ষে এ দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২,৫৩০ কোটি ডলার। ভূ-রাজনৈতিক নানা কারণে গত কয়েক বছরে তাঁদের মধ্যে এ দেশের বাজার ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ১,৮৫০ কোটি, ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে ৫১০ কোটি, ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে ১,৪৬০ কোটি এবং ২০২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৩০ কোটি ডলারের বহির্গমন ঘটেছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy