Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৫
Tamil Nadu Language War

ভাষাযুদ্ধে কেন্দ্র বনাম তামিলনাড়ু, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার ফন্দি? না কি নেপথ্যে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’?

জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে তিন ভাষা সূত্র চালু করতে চাইছে কেন্দ্র। একে ‘হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার ফন্দি’ বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তামিলনাড়ুর স্ট্যালিন সরকার।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫ ১২:২৯
Share: Save:
০১ ২০
Tamil Nadu Language War

ভাষাযুদ্ধে মুখোমুখি কেন্দ্র ও তামিলনাড়ু সরকার। এই ইস্যুতে জোর করে হিন্দি চাপানোর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন দক্ষিণী রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। অন্য দিকে ‘অবাধ্য’ তামিলভূমিকে সাজা দিতে শিক্ষাবিস্তারে আর্থিক অনুদান বন্ধ করছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী প্রশাসন। ঘটনার জেরে দক্ষিণী রাজ্যটিতে নতুন করে হাওয়া পাচ্ছে হিন্দি-বিরোধিতা, যা মনে করিয়েছে ৬০-র দশকের গণ আন্দোলনকে।

০২ ২০
Tamil Nadu Language War

সমস্যার সূত্রপাত ২০২০ সালে। ওই বছর নতুন শিক্ষানীতি (নিউ এডুকেশন পলিসি) চালু করে কেন্দ্র। সেখানে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তিনটি করে ভাষা বাধ্যতামূলক ভাবে ছাত্রছাত্রীদের শেখানোর কথা বলা হয়েছে। নতুন শিক্ষানীতির এই বিষয়টিতেই প্রবল আপত্তি রয়েছে তামিলনাড়ুর।

০৩ ২০
Tamil Nadu Language War

স্ট্যালিন সরকারের দাবি, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে উত্তর ভারতের হিন্দি সংস্কৃতিকে জোর করে তামিলভূমি এবং সেখানকার বাসিন্দাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক। কেন্দ্রের দাবি, নতুন শিক্ষানীতিতে তিনটি ভাষা শেখানোর কথা বলা হয়েছে। সেই তালিকায় হিন্দি বাধ্যতামূলক ভাষা নয়।

০৪ ২০
Tamil Nadu Language War

নতুন শিক্ষানীতির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাজ্যে রাজ্যে প্রথম ভাষা হিসাবে স্কুলপড়ুয়াদের বাধ্যতামূলক ভাবে শিখতে হবে মাতৃভাষা। দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে তাদের হিন্দি বা ইংরেজিকে বেছে নিতে হবে। এ ছাড়া তৃতীয় একটি ভাষাকে বাছতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে। সেটি হবে কোনও প্রাচীন ভারতীয় ভাষা।

০৫ ২০
Tamil Nadu Language War

উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের এই তিন ভাষার নীতিতে কোনও সমস্যা নেই। উদাহরণ হিসাবে পঞ্জাবের কথা বলা যেতে পারে। সেখানকার স্কুলপড়ুয়ারা প্রথম ভাষা হিসাবে স্থানীয় ভাষা শিখবে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাষা হিন্দি ও ইংরেজি নিতে পারবে তারা।

০৬ ২০
Tamil Nadu Language War

কিন্তু তামিলনাড়ুর বিষয়টি আলাদা। দক্ষিণী এই রাজ্যটিতে বর্তমানে স্কুল স্তরে দু’টি ভাষা চালু রয়েছে। সেগুলি হল, স্থানীয় তামিল এবং ইংরেজি। স্ট্যালিন সরকারের অভিযোগ, এই অবস্থায় তৃতীয় ভাষা হিসাবে হিন্দিকে বেছে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই। ফলে জাতীয় শিক্ষানীতির প্রবল বিরোধিতা করছে তারা।

০৭ ২০
Tamil Nadu Language War

তামিলনাড়ুর এই হিন্দি ভাষা-বিরোধী অবস্থান নতুন নয়। ব্রিটিশ আমলে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধীনে ছিল এই রাজ্য। ১৯৩৭ সালে সেখানে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসাবে চালু করার চেষ্টা করেন ইংরেজ অফিসারেরা। কিন্তু, একে কেন্দ্র করে স্থানীয়েরা বিক্ষোভ শুরু করলে সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তাঁরা।

০৮ ২০
Tamil Nadu Language War

স্বাধীনতার পর ৬০-এর দশকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার চেষ্টা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। দেশ জুড়ে হিন্দিকে কেন্দ্রের সরকারি কাজের ভাষা হিসেবে চালু করার প্রস্তাব দেন তিনি। এতে তামিলভূমিতে শুরু হয় গণআন্দোলন। এর জেরে বেশ কিছু দিন উত্তপ্ত ছিল এই দক্ষিণী রাজ্য।

০৯ ২০
Tamil Nadu Language War

তামিলভূমির পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত বদল করেন নেহরু। রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের যোগাযোগকারী কাজের ভাষা হিসাবে ইংরেজিকে চালু রাখতে বাধ্য হন তিনি। সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় আসে দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজ়াগম বা ডিএমকে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন এই দলটিরই নেতা।

১০ ২০
Tamil Nadu Language War

এ বারও জাতীয় শিক্ষানীতিতে কেন্দ্র তিনটি ভাষা শেখানোর কথা বলায় দক্ষিণী রাজ্যটির বাসিন্দাদের একই রকমের প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে। এত দিন তামিল ও ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিতেও সেখানকার রেলস্টেশনগুলির নাম লেখা ছিল। দুই সরকারের মধ্যে এই নিয়ে আকচা-আকচি শুরু হওয়ায় স্থানীয়দের একাংশকে কালো রং করে বোর্ডের হিন্দি লেখা ঢেকে দিতে দেখা গিয়েছে।

১১ ২০
Tamil Nadu Language War

৭০-এর দশকে ডিএমকে ভেঙে তৈরি হয় অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজ়াগম বা এআইএডিএমকে। তামিলনাড়ুতে লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থেকেছে এই রাজনৈতিক দল। ডিএমকের সঙ্গে নানা ইস্যুতে প্রবল বিরোধিতা থাকলেও ভাষার ব্যাপারে দুই পার্টির মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।

১২ ২০
Tamil Nadu Language War

২০২০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়ার সময়ে তামিলভূমিতে ক্ষমতায় ছিল এআইএডিএমকে। ওই সময়ে পড়ুয়াদের তিন ভাষা শেখানোর সূত্রকে ‘দেশ জুড়ে হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার ফন্দি’ বলে বর্ণনা করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সাধারণ সম্পাদক এডাপ্পাডি কে পলানিস্বামী।

১৩ ২০
Tamil Nadu Language War

অন্য দিকে, প্রথম দিন থেকেই তিন ভাষার সূত্রকে ‘মলম মাখানো মনুসংহিতা’ বলে বর্ণনা করে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন। এ ব্যাপারে স্থানীয় দলগুলির সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর।

১৪ ২০
Tamil Nadu Language War

তামিল সরকার তিন ভাষার সূত্র মেনে না নেওয়ায় সম্প্রতি শিক্ষা অনুদান বন্ধ করার কথা বলেছে কেন্দ্র। এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। সেখানে ২১৫২ কোটি টাকা রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

১৫ ২০
Tamil Nadu Language War

সংবিধান অনুযায়ী, শিক্ষা রয়েছে যুগ্ন তালিকায়। আর তাই প্রতিটি রাজ্যকেই শিক্ষা বিস্তারে বিপুল টাকা দিয়ে থাকে কেন্দ্র। শিক্ষা অধিকার আইন অনুযায়ী সর্বশিক্ষা মিশনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তামিল সরকারের কেন্দ্রের থেকে ওই টাকা পাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১৬ ২০
Tamil Nadu Language War

এই ভাষাযুদ্ধের বিষয়টিতে ইতিমধ্যেই লেগেছে রাজনীতির রং। বিজেপির অভিযোগ, নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ককে সুরক্ষিত করতে তিন ভাষার সূত্র মানতে নারাজ তামিল সরকার। অন্য দিকে এই ইস্যুতে নিশ্চুপ রয়েছে দেশের অন্যতম বিরোধী দল কংগ্রেস।

১৭ ২০
Tamil Nadu Language War

জাতীয় শিক্ষানীতিতে দু’য়ের বদলে তিন ভাষা সূত্র চালু করার নেপথ্যে কেন্দ্রের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শহরে নানা ভাষাভাষীর বাসিন্দাদের ভিড় বাড়ছে। এতে পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হচ্ছে।

১৮ ২০
Tamil Nadu Language War

উদাহরণ হিসাবে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি রাজধানী হিসাবে খ্যাত বেঙ্গালুরুর কথা বলা যেতে পারে। সেখানকার মাত্র ৪৫ শতাংশ বাসিন্দাই স্থানীয় কন্নড় ভাষায় কথা বলে থাকেন। বাকি ৫৫ শতাংশ মানুষের ভাষা হয় ইংরেজি নয়তো হিন্দি। ফলে অফিস-আদালত থেকে বাজার বা হাসপাতাল— সর্বত্রই ভাষাগত সমস্যায় পড়ছে বেঙ্গালুরুর আমজনতা।

১৯ ২০
Tamil Nadu Language War

আবার তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের ২২ শতাংশ বাসিন্দার মাতৃভাষা তামিল নয়। কোয়ম্বত্তূরের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান ৩১ শতাংশ। ফলে তামিলভূমিতেই স্থানীয় ভাষা না জানার জন্য সমস্যা হচ্ছে বহু মানুষের। এ দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা বলে মনে করেন। আর ৪৩ শতাংশ ভারতবাসী হিন্দিতে কথা বলতে পারেন।

২০ ২০
Tamil Nadu Language War

স্বাধীনতার পর হিন্দিকে রাষ্ট্র ভাষা করা হবে কি না, তা নিয়ে বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল। সরকারি কাজকর্মের ক্ষেত্রে হিন্দি এবং ইংরেজি দু’টি ভাষাতেই কাজ করার প্রশাসনিক অনুমতি রয়েছে। ২০২৬ সালে তামিলভূমিতে রয়েছে বিধানসভা ভোট। নির্বাচনে ভাষাযুদ্ধ যে বড় ভূমিকা নেবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy