Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Mecca Grand Mosque Attack

২০০ জঙ্গির কব্জায় চলে যায় পবিত্র কাবা মসজিদ! দখলমুক্ত করতে দু’সপ্তাহ ধরে মক্কায় চলে গুলির লড়াই, তার পর...

গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকের একেবারে শেষে সৌদি আরবের মক্কার পবিত্র কাবা মসজিদের দখল নেয় দু’শোর বেশি জঙ্গি। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নিরাপত্তারক্ষী এবং তীর্থযাত্রীদের খুন করে তারা। কী ভাবে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পেল পশ্চিম এশিয়ার ওই উপসাগরীয় আরব মুলুক?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫২
Share: Save:
০১ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

মুসলিমদের পবিত্র স্থান মক্কা-মদিনাতেও পড়েছিল সন্ত্রাসের কালো ছায়া! জঙ্গিদের কব্জায় চলে গিয়েছিল সৌদি আরবের ‘আল-হারাম’ বা গ্র্যান্ড মসজিদ, যা দখলমুক্ত করতে রক্তে ভিজেছিল উপসাগরীয় দেশটির মাটি। এই ঘটনায় একরকম গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে রিয়াধ। শুধু তা-ই নয়, দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় মুসলিম বিশ্বের শক্তির ভরকেন্দ্র। এখনও এর এক দিকে রয়েছে শিয়াপন্থী ইরান এবং অপর দিকে সুন্নি মতাদর্শের সৌদি আরব। ৪৬ বছর পেরিয়েও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে একচুলও সরে আসেনি এই দুই রাষ্ট্র। ফলে ফের এক বার খবরের শিরোনামে এসেছে ওই ঘটনা।

০২ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর। সে দিন হাজার হাজার মুসলিম তীর্থযাত্রীকে হতবাক করে মক্কার পবিত্র কাবা মসজিদের দখল নেয় দু’শোর বেশি জঙ্গি। এদের নেতৃত্বে ছিলেন সৌদি রাজতন্ত্রের কট্টর বিরোধী হিসাবে পরিচিত জ়ুহায়মান ইবন মহম্মদ ইবনে সেফ আল-ওতাইবি। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ কাবার গ্র্যান্ড মসজিদের ভিতরে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তাণ্ডব চালায় তাঁর যোদ্ধারা। শুধু তা-ই নয়, সরকারি সেনাবাহিনীকে একরকম চ্যালেঞ্জ করে বসে ওই সন্ত্রাসীরা। ফলে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে লাগাতার চলে গুলির লড়াই।

০৩ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

কাবার ‘আল-হারাম’ বা গ্র্যান্ড মসজিদ জঙ্গিদের দখলে যাওয়া নিয়ে ‘দ্য সিজ় অফ মক্কা’ শিরোনামে একটি বই লেখেন ইউক্রেন-বংশোদ্ভূত ইটালীয় সাংবাদিক ইয়ারোস্লাভ ট্রোফিমভ। সেখানে এই সন্ত্রাসী হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে। ইয়ারোস্লাভ জানিয়েছেন, লাল রঙের চেকার্ড টুপি পড়ে তীর্থযাত্রীদের সঙ্গেই মসজিদে ঢোকে জঙ্গিবাহিনী। তাদের কয়েক জন অবশ্য আগে থেকেই সেখানে লুকিয়ে ছিল। ‘আল-হারাম’-এর ভিতরের প্রতিটা গলি বা বারান্দা ছিল তাদের নখদর্পণে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই গ্র্যান্ড মসজিদ দখলের পরিকল্পনা করে তারা।

০৪ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

সৌদি সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলে দলে সন্ত্রাসীকে ‘আল-হারামে’ ঢোকাতে একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন ওতাইবি। স্ত্রী-সন্তানেরা সঙ্গে থাকায় গ্র্যান্ড মসজিদের নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের সে ভাবে সন্দেহ করেননি। পবিত্র ধর্মস্থানটিতে আগে থেকে হাতিয়ার এবং গোলা-বারুদ মজুত রেখেছিল তারা। ফজরের নমাজ শেষ হতেই স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রকেট লঞ্চার এবং গ্রেনেড হাতে উঠে আসে তাদের। এর পর গ্র্যান্ড মসজিদ কব্জা করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। শুধু তা-ই নয়, গোটা অপারেশন শেষে সেখান থেকে ইসলামীয় ধর্মগুরুদের কায়দায় একাধিক ঘোষণা করে ওতাইবির ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা।

০৫ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

লেবাননের সাংবাদিক কিম ঘাটাস তাঁর বই ‘ব্ল্যাক ওয়েভ’-এ লিখেছেন, গ্র্যান্ড মসজিদ দখলের সময়ে জঙ্গিরা কোনও রকম দয়া দেখায়নি। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের খতম করে তারা। ফলে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন দৌড়ে ‘আল-হারাম’-এর বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় শিকল দিয়ে দরজা বন্ধ করে সেখানে পাহারা বসায় ওতাইবি সমর্থকেরা। এ ছাড়া কাবার পবিত্র মসজিদের সাতটি মিনারেই মোতায়েন হয় স্নাইপার রাইফেলধারী।

০৬ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

সাংবাদিক কিম ঘাটাসের বর্ণনা অনুযায়ী, কাবার পবিত্র মসজিদ দখল অপারেশনের ‘মূল চক্রী’ ছিলেন ওতাইবির শ্যালক মহম্মদ আবদুল্লাহ আল-কাহতানি। ধর্মস্থানটি কব্জায় চলে আসার পর নিজেকে ‘ইসলামের মুক্তিদাতা’ হিসাবে ঘোষণা করেন তিনি। পরে সেখানে হাজির হন ওতাইবি। এর পর মসজিদের লাউডস্পিকার ব্যবহার করে বিদ্রোহের কথা সদর্পে ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি, সৌদি রাজপরিবার এবং সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় একাধিক দাবি-দাওয়া, যেগুলি রিয়াধের পক্ষে মেনে নেওয়া ছিল অসম্ভব।

০৭ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

ওতাইবি চেয়েছিলেন, অবিলম্বে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করুক সৌদি সরকার। পাশাপাশি, ইউরোপ এবং ওয়াশিংটনকে খনিজ তেল বিক্রি বন্ধ রাখুক রিয়াধ। এ ছাড়া বিদেশি নাগরিকদের আরবভূমি থেকে বহিষ্কার ও ইসলামের বিশুদ্ধতা রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় সৌদি রাজপরিবার এবং ধর্মীয় নেতাদের অপসারণও দাবি করে বসেন তিনি। ঘটনার সময় উপসাগরীয় দেশটির যুবরাজ ফাহাদ এবং আধাসেনা ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর প্রধান যুবরাজ আবদুল্লা আফ্রিকার তিউনিশিয়া এবং মরক্কো সফরে গিয়েছিলেন।

০৮ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

‘গোদের উপর বিষফোড়ার’ মতো, ওই সময়ে সৌদির রাজা খালেদ অসুস্থ থাকায় পশ্চিম এশিয়ার উপসাগরীয় দেশটি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। শেষে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দ্রুত ন্যাশনাল গার্ড এবং সেনাবাহিনীকে ‘আল-হারাম’ দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন তিনি। এতে ফল হয় হিতে বিপরীত। তাড়াহুড়ো করে পবিত্র ধর্মস্থানটিতে ঢুকতে গেলে সেখান থেকে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। ফলে প্রাথমিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। উল্টে একাধিক সৈনিক এবং অফিসারকে হারিয়ে আরও বেকায়দায় পড়ে রিয়াধ।

০৯ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

এর পর গ্র্যান্ড মসজিদ দখলমুক্ত করতে পরিকল্পনায় বদল আনে সৌদি ফৌজ। পবিত্র ধর্মস্থানটির উপর দিয়ে সামরিক কপ্টার ওড়ায় তারা। মিনার লক্ষ্য করে দাগা হয় কামান। লক্ষ্য ছিল সেখানে মোতায়েন থাকা স্নাইপার বাহিনী। যদিও তাতে তেমন লাভ হয়নি। তবে লাগাতার গুলির লড়াই চালিয়ে গিয়ে জঙ্গিদের ব্যস্ত রাখতে সক্ষম হয় রিয়াধের বাহিনী। এর ফাঁকে ধীরে ধীরে মক্কা শহর ফাঁকা করে ফেলা হয়। চাপ বাড়াতে মসজিদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে বাহিনী। ফলে এক সপ্তাহ শেষে কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছোয় ফৌজ ও ন্যাশনাল গার্ড।

১০ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

এই লড়াইয়ে আরও একটি সুবিধা পেয়েছিল সৌদি ফৌজ। সেটা হল এনকাউন্টারে কাহতানির মৃত্যু। এই ঘটনা সন্ত্রাসীদের মন ভেঙে দিয়েছিল। যদিও সেই সময় কেউ আত্মসমর্পণ করেনি। শ্যালক প্রাণ হারালে জঙ্গিদের নেতৃত্ব দিতে থাকেন ওতাইবি। অন্য দিকে কাহতানির বুলেটবিদ্ধ দেহ নিয়ে সন্ত্রাসীদের ব্যস্ততার সুযোগে কাবার মসজিদ থেকে চম্পট দেন পণবন্দি তীর্থযাত্রীদের বেশ কয়েক জন। বাইরে বেরিয়ে রিয়াধের বাহিনীকে ভিতরের হালহকিকত জানিয়ে দেন তাঁরা। এতে অভিযান চালাতে বেশ সুবিধা হয়েছিল।

১১ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

সৌদির রাজকীয় ফৌজ অচিরেই বুঝতে পারে, মসজিদ দখলে থাকলেও খাবার এবং গোলা-বারুদ ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে ওতাইবি বাহিনীর। মুক্তি পাওয়া তীর্থযাত্রীদের একজন সংবাদসংস্থা বিবিসিকে বলেন, ‘‘মাত্র দু’সপ্তাহে ভিতরের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে গিয়েছিল। নিহতদের দেহ থেকে দুর্গন্ধ বার হতে শুরু করে। এতে পণবন্দিদের মধ্যে অসুস্থতা বাড়ছিল।’’ অন্য দিকে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই চালানোর মধ্যেই কমান্ডো অপারেশনের জন্য ফ্রান্সের সাহায্য চায় রিয়াধ। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরি গিসকার্ড ডি’এস্টাইং অবশ্য তাদের হতাশ করেননি।

১২ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

সংবাদসংস্থা বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর পর পবিত্র কাবা মসজিদ দখলমুক্ত করতে প্যারিস থেকে মক্কায় আসে ‘গ্রুপে ডি’ইন্টারভেনশন ডি লা জেন্ডারমেরি ন্যাশনালে’ বা জিআইজিএন নামের ফরাসি পুলিশের একটি এলিট কমান্ডো বাহিনী। সৌদি ফৌজকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদে ঢোকে তারা। ওতাইবির ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাসের আল-হোজ়েইমি বিবিসিকে বলেন, ‘‘আমরা একটা ছোটো ঘরে জড়ো হয়েছিলাম। যৌথ বাহিনী ছাদ ফুটো করে ভিতরে ধোঁয়ার বোমা (পড়ুন স্মোক বম্ব) ফেলে দেয়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক জন আত্মসমর্পণ করে। ওতাইবি অবশ্য মসজিদের অন্য দিকে চলে যেতে সক্ষম হন।’’

১৩ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স রাইট ‘দ্য লুমিং টাওয়ার: আল-কায়দা অ্যান্ড দ্য রোড টু ৯/১১’ বইয়ে লিখেছেন, যৌথ বাহিনী জঙ্গিদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল। সেটা ভাঙতে পর পর গ্রেনেড ছুড়তে থাকে তারা। এতে কোণঠাসা হয়ে প়ড়ে ওতাইবির বাহিনী। জঙ্গিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হলে পণবন্দিদের উপর শুরু হয় গুলিবর্ষণ। ওই সময়ে নিখুঁত নিশানায় সন্ত্রাসীদের এক এক করে নিকেশ করে যৌথ বাহিনীর শার্পশুটারেরা। ৪ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন ওতাইবি-সহ তাঁর বেশ কয়েক জন সহযোগী। তত দিনে সরকারি ভাবে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫৩-তে, আহত ৫৬০।

১৪ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

মক্কার পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদ দখলমুক্ত হওয়ার পর জন্ম হয় নতুন বিতর্কের। কমান্ডো অপারেশনের সময় সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় স্থানটিতে অমুসলিমদের পা পড়েছিল কি না, তা নিয়ে দানা বাঁধে সন্দেহ। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খোলেন জিআইজিএনের কমান্ডিং অফিসার ক্রিশ্চিয়ান প্রুটো। তিনি বলেন, ‘‘ফরাসি বাহিনী সরাসরি মসজিদ চত্বরে ঢোকেনি। সৌদি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল মাত্র। এ ছাড়া আমাদের স্নাইপারেরা মসজিদের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন ছিল।’’

১৫ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

গ্রেফতারির পর ওতাইবির শিরোচ্ছেদ করে সৌদি সরকার। রিয়াধ, মক্কা, জেড্ডা-সহ আরব দেশটির একাধিক শহরে তাঁর সহযোগী ৬৩ জন জঙ্গির প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ওই বছরই ‘ইসলামীয় বিপ্লব’-এর মাধ্যমে ইরানে পতন ঘটে রাজতন্ত্রের। ফলে সাবেক পারস্য দেশের ক্ষমতা দখল করেন শিয়া ধর্মগুরু রুহুল্লাহ খামেনেই। কাবা মসজিদ দখলমুক্ত হওয়ার পর রেডিয়োয় একটি বিশেষ বার্তা দেন তিনি। বলেন, ‘‘ওতাইবির মাধ্যমে পর্দার আড়ালে থেকে এই ঘটনার যাবতীয় চিত্রনাট্য লিখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজ়রায়েল।’’

১৬ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

খামেনেইয়ের ওই রেডিয়োবার্তার পর সৌদি-সহ একাধিক মুসলিম দেশে আমেরিকাবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। এতে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সিরিয়া। ১৯৮০ সাল থেকে টানা আট বছর ইরানের সঙ্গে প্রতিবেশী ইরাকের চলে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। এককথায় কাবার ঘটনা ইসলামীয় দুনিয়ায় স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করে দিয়েছিল।

১৭ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

পশ্চিমি ইতিহাসবিদদের কেউই কাবার ঘটনার সঙ্গে আমেরিকা বা ইজ়রায়েলের যোগসূত্র মানতে চাননি। তাঁদের যুক্তি, ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই খবর রটিয়েছিলেন খামেনেই। কারণ, উৎখাত হওয়া তেহরানের রাজাকে আশ্রয় দিয়েছিল ওয়াশিংটন। ফলে তাঁর মনে মার্কিন আগ্রাসনের আতঙ্ক চেপে বসে। আর তাই ধর্মীয় তাস খেলে সমগ্র ইসলামীয় দুনিয়াকে নিজের দিকে টানতে চেয়েছিলেন সাবেক পারস্য দেশের ওই শিয়া ধর্মগুরু।

১৮ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

খনিজ তেলভিত্তিক অর্থনীতির কারণে গত শতাব্দীর ৬০-এর দশক থেকেই বিপুল পরিমাণে রোজগার হতে থাকে সৌদি সরকারের। ফলে ধর্মীয় এবং আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই উদারনীতি নিয়েছিল সেখানকার সরকার। সেটা কট্টরপন্থীরা একেবারেই মেনে নিতে পারেনি। ফলে মদিনায় রক্ষণশীলদের প্রভাব বাড়তে থাকে। আরব মুলুকটিতে মৌলবাদী চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তাঁরা, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১৯ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

তবে ওতাইবি কোনও ধর্মীয় নেতা ছিলেন না। একটি যোদ্ধা উপজাতি থেকে উঠে আসেন তিনি। সৌদি রাজপরিবারের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশও ছিল তাঁর। কাবা মসজিদ দখলমুক্ত হওয়ার পর সুন্নি ইসলামের ব্যাপক প্রচার শুরু করে রিয়াধ। অচিরেই আরব দেশটির সংবাদপত্রে মহিলাদের ছবি নিষিদ্ধ হয়। টিভির পর্দা থেকেও উধাও হয়ে যান তাঁরা। সিনেমা এবং গান-বাজনা একরকম বন্ধ করে দেয় রিয়াধ। লিঙ্গবৈষম্যের পাশাপাশি ইসলামীয় শিক্ষার জন্য পরবর্তী বছরগুলিতে বিপুল বরাদ্দ করে সেখানকার সরকার।

২০ ২০
Mecca Grand Mosque bloody siege split Muslim world, what happened 46 years ago in Saudi Arabia

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, সৌদির এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ জঙ্গি হামলার বীজ বুনে দিয়েছিল। এ ছাড়া কাবা ওতাইবি বাহিনীর দখলে থাকাকালীন সৌদি ফৌজকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় পাকিস্তান। ফলে ইসলামাবাদের সঙ্গে অটুট ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে রিয়াধের। ৪৬ বছর পর দু’তরফে সামরিক সমঝোতাকে তারই ফলশ্রুতি বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy