Russia is seeking Indian professionals to fill gaps amid industrial workforce shortages dgtl
Russia hiring Indians
দেওয়া হবে মোটা বেতন! পাঁচ বছরে ৩০ লক্ষ ভারতীয় কর্মী চাইছে রাশিয়া, নেপথ্যে পুতিনের ‘অন্য ছক’?
রাশিয়া বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন সংস্থাগুলির কর্মীঘাটতি মেটাতে ভারতীয় কর্মীদের নিয়োগের দিকে ঝুঁকছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। মস্কো-নয়াদিল্লির একটি চুক্তিতে চলতি বছরেই প্রায় ১০ লক্ষ ভারতীয়কে পূর্ব ইউরোপের দেশে কাজে লাগানো হতে পারে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
আগামী পাঁচ বছরে রাশিয়ায় দেখা দেবে বিপুল কর্মীসঙ্কট। পূর্বাভাস দিয়েছে রাশিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে কমছে দক্ষ কর্মী। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩১ লক্ষ দক্ষ-অদক্ষ কর্মীর প্রয়োজন পড়তে চলেছে ভারতের ‘বন্ধু’ দেশের। ভবিষ্যতের কর্মীসঙ্কটের মোকাবিলায় মস্কোর ভরসাস্থল হয়ে উঠতে চলেছে নয়াদিল্লি।
০২২০
রাশিয়া বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন সংস্থাগুলির কর্মীঘাটতি মেটাতে ভারতীয় কর্মীদের নিয়োগের দিকে ঝুঁকছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার সংবাদসংস্থা টাস-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “বৃহত্তর স্তরে রাশিয়ায় কর্মীর চাহিদা রয়েছে। উল্টো দিকে ভারতে দক্ষ কর্মীর অভাব নেই। নিয়মকানুন, আইন এবং সংরক্ষিত কাঠামোকে মেনে রাশিয়া ভারতীয়দের নিয়োগ করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।’’
০৩২০
ইতিমধ্যেই মস্কো-নয়াদিল্লির একটি চুক্তিতে চলতি বছরেই প্রায় ১০ লক্ষ ভারতীয়কে পূর্ব ইউরোপের দেশে কাজে লাগানো হবে বলে জানা গিয়েছে। রুশ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলত নির্মাণ ও বস্ত্রশিল্পের শ্রমিক হিসাবে তাঁদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে পুতিন প্রশাসনের। অদক্ষ কর্মী নিয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন উচ্চপদে নিয়োগের জন্য ভারতীয়দের পছন্দ করছে রুশ সংস্থাগুলি।
০৪২০
এ প্রসঙ্গে উরাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রধান আন্দ্রে বেসেদিন সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষাশেষি ভারত থেকে ১০ লক্ষ কর্মী রাশিয়ায় আনা হবে। তাঁদের মধ্যে থাকবে কয়েকটি বিশেষজ্ঞ দলও। এর মধ্যে সভেরদলোভস্কে অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত। ইয়েকাটেরিনবার্গের রাজধানী সভেরদলোভস্ক অঞ্চলটি উরাল পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। বিভিন্ন ভারী শিল্প এবং সামরিক শিল্পের মেরুদণ্ড হিসাবে বিবেচিত হয় এই অঞ্চলটি।
০৫২০
রাশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য ভারতীয়দের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে দূতাবাসের পরিষেবার চাপ ক্রমবর্ধমান। সেই কাজের চাপের দিকে ইঙ্গিত করে কুমার জানান, ভারত থেকে আগত কর্মপ্রার্থীদের সুবিধার জন্য নতুন দূতাবাস খোলা হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য, জন্ম নিবন্ধনের বা নথি হারানোর জন্য দূতাবাসের প্রয়োজন হয়। রাশিয়ায় কাজ করতে আসা কর্মীদের চাপ বাড়লে তার প্রতিফলন ঘটবে দূতাবাসের উপরেও। তাই নতুন দূতাবাসের প্রয়োজন পড়বে।
০৬২০
সেই কর্মীদের ভিসা সংক্রান্ত চাপ সামলাতে সভেরদলোভস্কের রাজধানী ইয়েকাটেরিনবার্গে একটি নতুন দূতাবাস খোলার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের। ভারতীয় শ্রমিকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এ ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির আলাপ-আলোচনা বেশ কিছু দূর এগিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
০৭২০
অবজ়ারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন কর্তৃক একটি সমীক্ষার তথ্য বলছে, রাশিয়ায় ভারতীয় কর্মীর সংখ্যা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ২০২১ সালে ৫ হাজার ৪৮০ জন ভারতীয় ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছিলেন, সেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৩৬ হাজার ২০৮ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৫ গুণ। এই তথ্য রাশিয়ার অর্থনীতিতে ভারতীয় জনশক্তির ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। বিশেষ করে এমন একটি পরিস্থিতিতে, যখন পুতিনের দেশ কর্মীঘাটতির সঙ্গে লড়াই করছে।
০৮২০
গত সাড়ে তিন বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ লড়ার ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। সে দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমছে। ২০২৫ সালের জুনের শুরুতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যখন পুরোদমে যুদ্ধে ব্যস্ত তখন বিপক্ষের আক্রমণে প্রায় ১০ লক্ষ রুশ সৈন্য ইতিমধ্যেই নিহত বা আহত হয়েছেন। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ়ও পূর্বাভাস দিয়েছিল প্রায় ১০ লক্ষ রুশ এই যুদ্ধের বলি হবেন।
০৯২০
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, নয়াদিল্লির কাছে যে সুযোগ এসেছে তা কাজে লাগানো উচিত। কারণ শুল্কযুদ্ধের আবহে আমেরিকার ক্রমাগত ‘ভারত-বিরোধী’ অবস্থানের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে চি়ড় ধরার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। সেই আঁচ গিয়ে পড়বে আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের উপর। সিলিকন ভ্যালিতে প্রবেশের জন্য বেগ পেতে হতে পারে ভারতীয়দের। এমন আশঙ্কা চারিয়েছে প্রবাসী ভারতীয়দের মনেও।
১০২০
প্রতিভাবান ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের চড়া মূল্য দিয়ে আর ‘পুষতে’ রাজি না-ও হতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। আমেরিকার হুমকি অগাহ্য করে রাশিয়ার হাত ধরার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে নয়াদিল্লিকে ‘ভাতে মারা’র জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ট্রাম্প সরকার।
১১২০
প্রবাসী ভারতীয় কর্মীদের থেকে ভারত প্রচুর পরিমাণে ডলার রোজগার করে। অনাবাসী ভারতীয়দের স্বদেশে পাঠানো অর্থের উপরে (রেমিট্যান্স) এক শতাংশ কর আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভবিষ্যতে সেই করের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রবাসী ভারতীয়দের। তার সঙ্গে জারি হতে পারে ভিসার কড়াকড়িও। ফলে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকায় চাকরি করে ডলার রোজগার করার ক্ষেত্রে চাপ আসতে চলেছে ভারতীয়দের।
১২২০
আমেরিকার এইচ ওয়ান বি ভিসার দীর্ঘসূত্রিতা, গ্রিন কার্ডের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষার মতো সমস্যা ভারতীয়দের জন্য আমেরিকায় চাকরির বাজারে টিকে থাকা দুষ্কর করে তুলছে। বাকি বিকল্প দেশগুলির মধ্যে ইংল্যান্ড ও কানাডায় চাকরি করতে যাওয়া নিয়েও নানা বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ভারতের নাগরিকদের।
১৩২০
খলিস্তানি বিতর্কের পর কানাডা সরকার গত ৩১ জানুয়ারি অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আনে। ভিসার শর্তাবলি আরও কঠোর করা হয়েছে। ফলে ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে কাজ করতে যাওয়া ভারতীয় কর্মী এবং সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। ২০২৪ সালের তথ্য বলছে এ ছাড়াও কানাডায় বেকারত্বের হার প্রায় ৬.৪ শতাংশ। তাই সে দেশের সরকার বিদেশ থেকে আগত কর্মীদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শুরু করেছে।
১৪২০
পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে মূলত রিয়্যাল এস্টেট, বস্ত্র, হোটেল এবং অন্যান্য শিল্পে দক্ষ ভারতীয় কর্মীরা কাজ করতে যেতেন। সেই সমস্ত দেশেও চাহিদায় ভাটা পড়ছে। তাই মস্কোর সাধা লক্ষ্মীকে পায়ে ঠেলার পথ আপাতত নেই ভারতের, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
১৫২০
এর আগে ২০২৪ সালে আর এক ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ইজ়রায়েলের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১০ হাজার কর্মী পাঠিয়েছিল ভারত। পরিকাঠামো এবং স্বাস্থ্যখাতে তাঁদের অদক্ষ কর্মীর সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। কারণ সেই একই। যুদ্ধ। পরিকাঠামো এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নতির জন্য নির্মাণকর্মী এবং স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে কাজ করবেন, এমন মোট ১৫ হাজার জনকে চেয়ে পাঠিয়েছিল বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার।
১৬২০
বিদেশি কর্মীদের জন্য রাশিয়া সহজ ভিসার বন্দোবস্ত করবে বলে জানিয়েছে। ভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ভিসা। স্বল্পমেয়াদি কাজের জন্য একক-প্রবেশ ভিসা, দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য বহুমুখী প্রবেশ ভিসা এবং উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাদার ও বিশেষজ্ঞদের জন্য পৃথক বিশেষ একটি ভিসা দেবে পুতিনের সরকার। কোনও ভারতীয় যদি রাশিয়ার মাটিতে নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করাতে চান তার জন্য মস্কোয় ‘ওয়ার্ক পেটেন্ট’-এর বন্দোবস্ত রয়েছে।
১৭২০
আবেদনের ৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া সম্ভব। আবেদনকারীদের একটি ফর্ম, বৈধ পাসপোর্ট, পাসপোর্ট আকারের ছবি, সংস্থার অফার লেটার, একটি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, যোগ্যতার প্রমাণ এবং প্রয়োজনে একটি চুক্তি জমা দিতে হবে। কেউ চাইলে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে দ্রুত পরিষেবা নিতে পারেন।
১৮২০
বর্তমানে রাশিয়ায় প্রায় ১৪ হাজার ভারতীয়ের বাস। প্রায় ৪,৫০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত কোর্সে পড়াশোনা করছেন। এর ৯০ শতাংশ ভারতীয়ই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। বিদেশি কর্মীদের জন্য ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯০০টি আসন সংরক্ষণ করে রেখেছে রুশ প্রশাসন। এর মধ্যে ৭১ হাজার ৮১৭ জন ভারতীয় কর্মী নিয়োগ করতে পারবে সেখানকার বিভিন্ন সংস্থা।
১৯২০
রুশ সংস্থায় চাকরি বা কাজ পেলে এ দেশের শ্রমিকদের রুবলে মিলবে বেতন। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে রুপি (ভারতীয় টাকা) ও রুবলে চলছে বাণিজ্য। চলতি বছরে ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের। সেখানে লেনদেন সংক্রান্ত নতুন ব্যবস্থা তৈরি করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর কথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
২০২০
আমেরিকার চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করেই রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য দৌত্যের ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে ভারত। গত সাড়ে তিন বছর ধরে নয়াদিল্লি-মস্কো বাণিজ্যিক লেনদেন চলেছে সমানতালে। গত অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সার্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে পৌঁছেছে ৬৮০০ কোটি ডলার। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভারত সফরে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। তবে সফরের দিনক্ষণ এখনও জানা যায়নি।