Special Foods You Can Eat on Earth Just Like Astronauts Kalpana Chawla and Sunita Williams dgtl
Space food
কল্পনা কিংবা সুনীতার খাবার পাতে রাখতে পারেন আপনিও, কী এমন বিশেষ খাবার খান নভোচারীরা?
পৃথিবীর মাটি ছেড়ে কম মাধ্যাকর্ষণ বলে দীর্ঘ কাল থাকার কারণে হাড় এবং পেশির ক্ষয় হতে থাকে নভশ্চরদের। বার্ধক্য বা দীর্ঘকালীন অসুস্থতাতেও ঠিক একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মহাকাশ এবং পৃথিবী উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এমন কিছু সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবারের বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে আলোকপাত করেছে ‘নেচার’ পত্রিকা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ১২:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
মহাকাশচারীরা যখন দীর্ঘ কাল কোনও অভিযানে থাকেন তখন উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার অবশ্যই প্রয়োজন, না হলে পেশি এবং হাড়ের ক্ষয় ঘটতে থাকবে। পৃথিবী থেকে মহাকাশে নিয়মিত খাবার পাঠানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আবার দীর্ঘ কাল খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখাও কঠিন। তাই এমন খাবার পাঠানো প্রয়োজন যা সহজে নষ্ট হবে না।
০২২৪
বিশ্বব্যাপী বহু মহাকাশ সংস্থা চাঁদের মাটিতে ভিত্তি স্থাপনের পরিকল্পনা করে চলেছে। তারা যে সব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল চাঁদের মাটিতে কঠিন পরিস্থিতিতেও কী ভাবে হালকা, সুস্বাদু এবং তাজা খাবারের মাধ্যমে নভোচারীদের শরীরে পুষ্টির জোগান দেওয়া যায়। কারণ চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম, বায়ু নেই।
০৩২৪
তবে কেবল কল্পনা চাওলা, সুনীতা উইলিয়ামসের মতো নভোচারীরাই নন, উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার পাতে রাখা প্রয়োজন পৃথিবীবাসীরও। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে তেমনটাই জানিয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকা। ‘নেচার’ পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে যে এই বিষয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ কথা বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য।
০৪২৪
পৃথিবীর মাটি ছেড়ে কম মাধ্যাকর্ষণ বলে দীর্ঘ কাল থাকার কারণে হাড় এবং পেশির ক্ষয় হতে থাকে নভশ্চরদের। বার্ধক্য বা দীর্ঘকালীন অসুস্থতাতেও ঠিক একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া যে সব মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্বারা বিপর্যস্ত, তাঁরাও অপুষ্টির হাত থেকে নিস্তার পান না। মহাকাশ এবং পৃথিবী উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এমন চারটি বিষয়ের দিকে নির্দেশ করেছে ‘নেচার’ পত্রিকা। সেগুলি হল— খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতি, খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টি বজায় রাখা, প্রোটিনের বিকল্প উৎস সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং খাদ্য উৎপাদনের পদ্ধতি।
০৫২৪
জল, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সাপ্লাই প্রায়শই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মহাকাশে ঘরের তাপমাত্রাতেই খাবার যাতে দীর্ঘ কাল টাটকা থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলি এমন ভাবেই প্যাকেটজাত করা উচিত যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং দূষিত না হয়। সে সব খাবার যেন সকলের পক্ষে হজম করা সহজ হয় সে দিকেও নজর রাখতে হবে। খাবারগুলি প্যাকেটজাত করার সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে, যাতে খাবার থেকে কোনও রকম অসুস্থতা না ঘটে।
০৬২৪
বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বস্ত থাকে জাপান। সেখানে প্রায়ই ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে থাকে। এই কারণে গত দশক থেকে এই দেশটি আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য খাদ্য সংরক্ষণের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ করছে।
০৭২৪
জাপানে শুকনো ভাত, শুকনো নুডল্স, মিসোর (আচার বা চাটনি জাতীয় একটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবার। এটি সয়াবিন, কোজ়ি নামের এক ধরনের ছত্রাক এবং নুনের একটি মিশ্রণ। খাবারটি অত্যন্ত পুষ্টিকর, প্রোটিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ) মতো মজানো খাবার, মিষ্টি এবং জেলি ড্রিঙ্কস, ক্যানবন্দি মাছ এবং মাংস, জীবাণুমুক্ত প্লাস্টিকের পাউচ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ব্যবহার করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। মহাকাশচারীদের জন্যও পাঠানো যায় এই খাবারগুলি।
০৮২৪
২০১১ সালে ঘটা তাইহোকু ভূমিকম্পের পরে জাপানিরা এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে। খাবারের বৈচিত্র, খাবার সরবরাহে সমস্যা এবং পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে নানা সুবিধা-অসুবিধাগুলি লক্ষ করে ত্রাণশিবিরগুলি। নভশ্চরেরা যা খান, তা-ই খেতে পারেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত মানুষও, ২০১৫ সালে এ বিষয়ে আলোকপাত করে জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা)।
০৯২৪
২০২২ সালে জাক্সা-অনুমোদিত একটি খাদ্যতালিকা প্রকাশ করে জাপান। সেগুলি যেমন মহাকাশচারীদের খাওয়ার উপযুক্ত, একই ভাবে পৃথিবীর মাটিতে যে সব মানুষ নানা দুর্যোগের শিকার, তাঁরাও সে সব খাদ্য থেকে পুষ্ট হবেন। জাপান প্রায় ৫৩টি এমন খাদ্য তাদের তালিকায় রেখেছে যেগুলি ভূমিকম্পের মতো বড় মাত্রার বিপর্যয়ের জন্য স্থানীয় সরকার দ্বারা সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে।
১০২৪
‘নেচার’ পত্রিকার কয়েক জন বিশেষজ্ঞ একটি আন্তর্জাতিক মানের খাদ্যতালিকা প্রস্তুতের চেষ্টায় রত। তালিকাটি খাদ্য সংরক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা এবং ফুড লেবেলিং বিষয়ে সরকারি এবং অসরকারি সংস্থাগুলিকে সহায়তা করবে। এর দ্বারা মহাকাশে পাঠানোর জন্য এবং বিপর্যয়ের জন্য কী ধরনের খাবার সংরক্ষণ করে রাখা উচিত, সে বিষয়েও একটা ধারণা করতে পারবে বিভিন্ন দেশ।
১১২৪
পরবর্তী পদক্ষেপ হল খাদ্য সেফ্টি অথরিটি, মানবিক সংস্থা এবং মহাকাশ সংস্থাগুলির মধ্যে ঐকমত্য গঠন করা। এশিয়ার বিপর্যয়প্রবণ এলাকাগুলিতে এই সব পরীক্ষামূলক প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টা চলছে।
১২২৪
জাপানি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, ত্রাণশিবিরে যে সব খাবারের বন্দোবস্ত থাকবে, সেগুলি যেন অবশ্যই প্রোটিন, ভিটামিন বি১, বি২ এবং সি সমৃদ্ধ হয়। এ ছাড়া এই সব খাবার থেকে যেন শক্তিও পাওয়া যায়। এর ফলে বেরিবেরি, অ্যারিবোফ্ল্যাভিনোসিস, স্কার্ভি প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে এবং স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি নির্বিঘ্নে চলতে থাকবে।
১৩২৪
চাল, আলু, মিষ্টি আলু, সয়াবিন, টম্যাটো, শসা, লেটুস এবং স্ট্রবেরি— এই আটটি প্রধান শস্যের কথা উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এগুলির মধ্যে উপরিউক্ত উপাদানগুলি তো আছেই, এ ছাড়া এগুলিতে কার্বোহাইড্রেট, ডায়েটরি ফাইবার এবং ভিটামিনের উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়।
১৪২৪
গবেষণারত দলটি পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকা, মানুষের খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষাবাদের মাধ্যমে মূল্যায়ন করেছে যে শুধুমাত্র এই আটটি ফসল ব্যবহার করে নভোচরদের দৈনিক পুষ্টির কতটা পূরণ করা সম্ভব এবং কোনও পুষ্টির ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে অন্য কোনও বিকল্পের প্রয়োজন হবে কি না।
১৫২৪
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলি প্রদাহ রোধ করতে সাহায্য করে এবং এর থেকে অন্যান্য সুফলও পাওয়া যায়। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে কম মাধ্যাকর্ষণ বলেও পেশিক্ষয় ঘটে না। এ ছাড়া বয়স এবং অসুস্থতাজনিত কারণে যাঁরা শয্যাশায়ী, তাঁরাও এর দ্বারা উপকৃত হন।
১৬২৪
পলিফেনল, ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলির মিশ্রণ কোনও ভাবে পেশিক্ষয় ব্যাহত করতে পারে কি না, সে বিষয়ে গবেষণা করে চলেছে ফরাসি, জার্মানি এবং কানাডার মহাকাশ সংস্থাগুলি। যদিও এই গবেষণায় এখনও পর্যন্ত কোনও রকম নিশ্চিত ফল পাওয়া যায়নি।
১৭২৪
সয়া থেকে যে সমস্ত বিকল্প খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলি পেশি এবং হাড়ের ক্ষয় রোধে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইঁদুর এবং গবেষণাগারে উৎপন্ন কোষ নিয়ে কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কম মাধ্যাকর্ষণ বলে পেশিতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়ে পেশিক্ষয় ঘটে। উৎসেচক সক্রিয় হয় এবং কোষগুলি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। প্রোটিন সংশ্লেষও ব্যাহত হয়। শয্যাশায়ী প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়। একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সয়া প্রোটিন, সিব্লিনের মতো পেপটাইড প্রোটিন সংশ্লেষের প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হওয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। একই রকম সিব্লিনের মতো পেপটাইড নভোচারীদের সাহায্য করতে পারবে কি না সে বিষয়েও নানা পরীক্ষা চলছে।
১৮২৪
মহাকাশ ভ্রমণ এবং দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য প্রাণিজ প্রোটিনের বিকল্প প্রোটিন উৎসগুলি নিয়েও গবেষণা চলছে। এর প্রধান কারণ মহাকাশে সব সময় খাবার হিসাবে প্রাণিজ প্রোটিন পাঠানো সম্ভব হয় না। জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পৃথিবীবাসীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।
১৯২৪
প্রাণিজ প্রোটিনের বিকল্প হিসাবে সয়া জাতীয় খাবারের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছে জাক্সা। কারণ এর ফলন প্রচুর, এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড উপস্থিত এবং এটি সহজে নষ্ট হয় না।
২০২৪
সয়াজাতীয় প্রোটিনে পুষ্টির যেটুকু ঘাটতি হয়, তা পূরণ করতে গবেষণাগারে উৎপন্ন কোষ থেকে তৈরি মাংস এবং পোকামাকড়ের উপর নির্ভর করা যেতে পারে। জীবাণুমুক্ত অবস্থায় গবেষণাগারে মাংস তৈরি করা যেতে পারে, যার দ্বারা খাবার থেকে কোনও অসুখ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পাবে। তবে এই গবেষণা এখনও শৈশব অবস্থায় রয়েছে।
২১২৪
তবে, চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন রকমের খোলাওয়ালা মাছ, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়ার উপরে জোর দিয়েছে জাক্সার গবেষকদল। এমনকি ঝিঁঝিপোকাকেও খাবার হিসাবে গ্রহণ করা যায় কি না সে বিষয়েও গবেষণা চলছে। তবে, পোকামাকড় থেকে অনেকের অ্যালার্জিও হয়, সে দিকে নজর রাখা জরুরি।
২২২৪
মহাকাশে খাদ্য সরবরাহ করা যে হেতু কষ্টসাধ্য, তাই পুষ্টি উৎপাদনে অন্য কোনও সহায়তার উপর নির্ভর করে না এমন ব্যবস্থা মহাকাশে গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর মাটিতে প্রত্যন্ত, দুর্যোগপীড়িত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য।
২৩২৪
সয়া, মাছ এবং ঝিনুক চাষের জন্য ক্লোজ়ড-লুপ সিস্টেম তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে। খাওয়ার অযোগ্য সয়ার উপাদানগুলি মাছ এবং পোকামাকড়ের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং মাছের হাড় ও ঝিনুকের বহিঃকঙ্কাল উদ্ভিদের জন্য জৈব সার হিসেবে কাজ করবে।
২৪২৪
‘স্পেস ফুডস্ফিয়ার’ নামে একটি সংস্থা একটি উন্নত সম্পদ-পুনর্ব্যবহারযোগ্য খাদ্য-উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করছে যা জৈব বর্জ্য, জল এবং বায়ুর পুনর্ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ফসলের বৃদ্ধিও ঘটাবে। তবে, এই সব ক্ষেত্রে জৈব বর্জ্য দ্রুত জমা হয়। তাই জীবাণু দূষণ রোধের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গবেষণার এই চারটি স্তর মহাকাশচারীদের তো উপকৃত করবে, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পৃথিবীবাসীও এর দ্বারা লাভবান হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।