The United States has asked Lebanon to return an unexploded GBU-39B precision-guided bomb dgtl
Unexploded bomb from Beirut
প্রযুক্তি চুরি করতে সিঁদ কাটবে চিন-রাশিয়া! শত্রুর দেশে ফেলা ইজ়রায়েলের অকেজো বোমা রক্তচাপ বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটনের
লেবাননের রাজধানী বেরুটে হিজ়বুল্লার ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। সেই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা জিবিইউ-৩৯বি মডেলের একটি স্মার্ট গ্লাইড বোমা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
প্রযুক্তি ফাঁসের ভয়ে কাঁটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। লেবাননে ফেলা একটি অবিস্ফোরিত মার্কিন বোমা তড়িঘড়ি ফেরত পাঠাতে বলল ওয়াশিংটন। আনুষ্ঠানিক ভাবে লেবাননের সরকারকে সেই বোমাটি ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে আমেরিকা। নিক্ষেপ করা বোমাটি বিস্ফোরিত না হওয়ার ফলে অক্ষত অবস্থায় সেটি উদ্ধার করেছে সে দেশের সেনা।
০২১৮
তাতেই অস্বস্তিতে পড়েছে মার্কিন সরকার। অব্যবহৃত বোমাটি আপাতত লেবানন সরকারের হেফাজতে। এর ফলে ঘুম উড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের। অক্ষত বোমাটি চিন, রাশিয়ার হাতে পড়লে প্রযুক্তি ‘চুরি’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পেন্টাগন। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইরান সমর্থিত। তাই সেই বোমা ইরানের কাছে হস্তান্তরিত হোক তা কোনও মতেই কাম্য নয় আমেরিকার।
০৩১৮
ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিস্ফোরিত বোমাটি ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে লেবানন সরকারে সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমেরিকার দাবি, প্রতিপক্ষেরা যদি এই যুদ্ধাস্ত্রের নকশা পড়ে ফেলতে বা বিপরীত-প্রকৌশল (রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং) আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় তবে তা নিরাপত্তা ঝুঁকিকে মারাত্মক করে তুলতে পারে।
০৪১৮
লেবাননের রাজধানী বেরুটে হিজ়বুল্লার ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। সেই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল জিবিইউ-৩৯বি মডেলের একটি স্মার্ট গ্লাইড বোমা। সেই বোমাটিকে নিয়েই বেধেছে গোল। অজ্ঞাত কারণে বোমাটি বিস্ফোরিত না হয়ে অক্ষত অবস্থায় লেবাননের হাতে চলে যাওয়ায় রক্তচাপ বেড়েছে ওয়াশিংটনের।
০৫১৮
যদিও লেবানন আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করেনি যে বোমাটি তাদের হেফাজতেই রয়েছে। এমনকি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুরোধ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। লেবাননের সরকারি কর্তারা এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন আপাতত। প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি বেরুট।
০৬১৮
সূত্রের খবর, গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ বেরুটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেল আভিভ। দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লার শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হারাত হরেইকে হামলা চালায় ইজ়রায়েলি বিমানবাহিনী। হিজবুল্লার সামরিক কমান্ডার আলি তাবাতাবাইকে হত্যার জন্য অভিযান চালাতে গিয়ে মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি জিবিইউ-৩৯বি বোমাটি ব্যবহার করে ইজ়রায়েল।
০৭১৮
এই ছোট ব্যাসের বোমাটির নির্মাতা হল মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা বোয়িং। গ্লাইড বোমাটি এক বার উৎক্ষেপণের পর ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভেসে গিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। নিজস্ব ইঞ্জিন না থাকার কারণে অস্ত্রটি তুলনামূলক ভাবে সস্তা। খরচ পড়ে ৫০ হাজার ডলার।
০৮১৮
প্রায় ১১০ কেজি ওজনের বোমাটি এক টনের একটি মার্ক ৮৪ বোমার পরিবর্তে চারটি বিস্ফোরক অস্ত্র নিয়ে ‘উড়তে’ সক্ষম। প্রতিটি স্মার্ট-ক্যারেজ র্যাক ২৫০ পাউন্ড ওজনের চারটি অস্ত্র ধারণ করতে পারে। ফলে বোমাটি একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এতে থাকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক সিস্টেম থাকে, যাতে অ্যাক্সিলোমিটার এবং জ়াইরোস্কোপের মতো সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির সাহায্যে কোনও যান বা বস্তুর গতি, অবস্থান এবং দিক পরিবর্তন ক্রমাগত নিরীক্ষণ করতে পারে অস্ত্রটি।
০৯১৮
জিপিএস-নির্ভর এই বোমাটিকে দিন বা রাতে ব্যবহার করা সম্ভব। সমস্ত ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৭৪ কিলোমিটার) দূর থেকেও লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত ভাবে আঘাত হানতে পারে এটি। ইজ়রায়েল ২০১০ সাল থেকে গাজ়া এবং হিজবুল্লার বিরুদ্ধে অভিযানে এই ধরনের বোমা ব্যবহার করে আসছে।
১০১৮
একই ধরনের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ভারতও। সিঁদুর অপারেশন চলাকালীন ৭ মে মধ্যরাতে দেশের বিমানবাহিনীকে প্রতিহত করতে চিনের তৈরি বিশেষ একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসলামাবাদ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বেজিঙের ওই অস্ত্রের বেশির ভাগই কোনও রকম বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়। চিনা ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম পিএল-১৫।
১১১৮
বিস্ফোরণ না-হওয়ায় এ দেশের সীমান্তবর্তী গ্রামে এসে পড়ে একটি পিএল-১৫। পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর থেকে সেটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। অক্ষত অবস্থায় এলাকাবাসীরাই সেটিকে উদ্ধার করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। চিনা ক্ষেপণাস্ত্রটি ২০ থেকে ২৫ কেজি উচ্চ বিস্ফোরক নিয়ে উড়তে সক্ষম। জেএফ-১৭ ব্লক থ্রি, জে-১০সি এবং জে-২০র মতো অত্যাধুনিক লড়াকু জেটে ব্যবহার করার জন্য পিএল-১৫ তৈরি করেছে বেজিং।
১২১৮
চিনের অকেজো সেই ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ে পরবর্তী কালে প্রতিরক্ষা দফতর ফরেন্সিক তদন্ত চালায়। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চিনা অস্ত্রটির প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখিয়েছিল বেশ কয়েকটি দেশ। ফ্রান্স ও রাশিয়ার মতো দেশগুলি নয়াদিল্লির কাছে ফরেন্সিক তদন্ত রিপোর্টটি প্রকাশ করার জন্য দরবার শুরু করে। যদিও ‘বন্ধু’ দেশগুলির এই ধরনের বেয়াড়া অনুরোধে কর্ণপাত করেনি নয়াদিল্লি।
১৩১৮
দক্ষিণ লেবাননে হিজ়বুল্লা-ইজ়রায়েল সংঘাত নতুন মাত্রা পাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলার দায় চেপেছে ইজ়রায়েলের কাঁধে। গাজ়ার মতোই লেবাননেও সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ধারাবাহিক হামলার অভিযোগ উঠেছে তেল আভিভের বিরুদ্ধে। এমনকি পশ্চিম এশিয়ার এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হয় রাষ্ট্রপুঞ্জকে।
১৪১৮
সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ইজরায়েল। লেবাননে হামলাকারী ইজ়রায়েলি ড্রোনের উপর গুলিবর্ষণ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ পরিচালিত আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী। সাম্প্রতিক সময়ে যা নজিরবিহীন ঘটনা।
১৫১৮
অনেকেই মনে করছেন, কূটনৈতিক ভাবে সমঝোতা না হলে, লেবাননে যে রকম হামলা জারি রেখেছে ইজ়রায়েল, সে রকমই হামলা চালিয়ে যাবে তারা। হিজ়বুল্লাকে আর কোনও ভাবেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে না ইজ়রায়েল। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও লেবাননে বার বার হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েল।
১৬১৮
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজ়ায় ইজ়ারায়েলি হামলা শুরুর পরেই দক্ষিণ লেবাননে সক্রিয় শিয়া সশস্ত্র সংগঠন হিজ়বুল্লা তেল আভিভের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিল। তার পরে এক বছর ধরে দু’তরফের সংঘর্ষ চলে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আমেরিকা এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
১৭১৮
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে অভিযোগ করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সংঘর্ষবিরতি চুক্তির পরেও ইজ়রায়েলি হামলায় লেবাননে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লেবানন সরকারের অভিযোগ, দক্ষিণাঞ্চলে তাদের ভূখণ্ডের পাঁচটি সামরিক কৌশলগত অবস্থান এখনও দখলে রেখেছে ইজ়রায়েলি সেনা।
১৮১৮
সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মার্কিন বোমা নিয়ে টানাপড়েন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পালে হাওয়া দিতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ইজ়রায়েল এবং লেবাননের মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ককে আমেরিকা আরও জটিল করে তুলতে পারে, এমনটাই মত তাঁদের।